ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় ও চতুর্থ সাক্ষীর জবানবন্দী

আমাদের গ্রামের হিন্দুদের মুসলমান বানায় দুই রাজাকার ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ জুন ২০১৬

আমাদের গ্রামের হিন্দুদের মুসলমান বানায় দুই রাজাকার ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের তৃতীয় সাক্ষী কমলা রানী বর্মণ ও চতুর্থ সাক্ষী সমলা বর্মণ জবানবন্দী দিয়েছে। তৃতীয় সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামিরা আমাদের গ্রামের হিন্দুদের মুসলমান বানায়। তারপর হিন্দুদের সাদা টুপি পরায়। আমাদের হিন্দু মহিলাদের শাখা সিঁদুর পরতে নিষেধ করে। রাজাকাররা আমার ওপর নির্য়াতনও চালায়। আমার বাবা অভিচন্দ্র বর্মণ, স্বামী যতিন্দ্র চন্দ্র বর্মণ ও শ্বশুর যগিন্দ্র চন্দ্র বর্মণকে রাজাকার গুলি করে হত্যা করে। অন্যদিকে চতুর্থ সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার বাবা রশিক চন্দ্র বর্মণ ও স্বামী অভয় চন্দ্র বর্মণসহ বেশ কয়েক জনকে শ্মশানঘাটে নিয়ে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে। রাজাকাররা আমার ইজ্জত নষ্ট করেছে। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৭ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে নেত্রকোণার পুর্বধলার ৬ রাজাকারের অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তী আদেশের জন্য ২৮ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষীর জবানবন্দীতে সহাযতা করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। আসামি পক্ষে ছিলেন সাত্তার পালোয়ান। প্রসিকিউশনের তৃতীয় সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম কমলা রানী বর্মণ। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৬ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- দামপাড়া, থানা- নিকলী, জেলা- কিশোরগঞ্জ। আমি লেখাপড়া করি নাই। আমি বর্তমানে মানুষের বাড়িতে কাজ করি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ২১ বছর। ১৯৭১ সালের ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে টেকু চেয়ারম্যানের নির্দেশে আসামি রাজাকার কমান্ডার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও আরও কয়েকজন রাজাকার করিম মৌলভীকে আমাদের গ্রামে নিয়ে এসে আমাদের হিন্দু যারা ছিল তাদের মুসলামান বানায়। তারপর রাজাকাররা হিন্দু পুরুষদের সাদা টুপি পরতে দেয়। মহিলাদের শাখা ও সিঁদুর পরতে নিষেধ করে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, ১৯৭১ সালের আশ্বিন মাসের ৬ তারিখে সানাই রাজাকার আমাদের বাড়িতে এসে বলে যে, আসামি রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন আমাদের মধ্যে যে হিন্দু পুরুষদের মুসলমান বানানো হয়েছিল তাদের কার্ড বানিয়ে দেয়ার জন্য বনবাসী সুত্রধরের বাড়ির সামনে যেতে বলে। তখন সানাই রাজাকার ও তার সঙ্গীয় রাজাকাররা আমাদের বাড়ি থেকে আমার স্বামী যতিন্দ্র চন্দ্র বর্মণ, আমার বাবা অভি চন্দ্র বর্মণ ও শ্বশুর যোগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণকে বনবাসী সুত্রধরের বাড়ির সামনে নিয়ে যায়। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পড়ে আমার বাবা আমার বিবাহযোগ্য ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপত্তার কথা ভেবে আমার শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ইতোমধ্যে আমার ছোটবোনের বিবাহ হওয়ায় সে তার শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়। আমাদের বাড়ির পুরুষদের কে বনবাসী সুত্রধরের বাড়ির সামনে নিয়ে যাওয়ায় পর আমি ও আমার মা আমাদের বাড়িতে অবস্থান করতে থাকি। তিনি আরও বলেন, এ পর্যায়ে ওইদিন দুপুরের পর সানাই রাজাকারসহ আরও কয়েকজন রাজাকার আমাদের বাড়িতে আসে। তারা আমার ওপর পৈচাশিক নির্যাতন চালায়। ওই সময় রাজাকাররা আমাকে ছাড়াও আমাদের গ্রামের সমলা বর্মণ, শোভা রানী সুত্রধরসহ আরও অনেক নারীকে নির্যাতন করেছে। ওই নির্যাতনের ফলে আমরা নির্যাতিতরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
×