ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মতিঝিল থিয়েটারের ‘নিঃসঙ্গ নিরাময়’ নাটকের কারিগরি মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ জুন ২০১৬

মতিঝিল থিয়েটারের ‘নিঃসঙ্গ নিরাময়’ নাটকের কারিগরি মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আধুনিকতা বদলে দিয়েছে জীবনের অনেক কিছু। সহজেই মিলে যাচ্ছে কাক্সিক্ষত বস্তুটি। একই ভাবে আধুনিকতা আবার গ্রাস করেছে সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যরে সমাজ জীবনকে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনগুলো যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে। আত্মকেন্দ্রিকতার কাছে হারিয়ে যাচ্ছে সামষ্টিকতা। তৈরি হচ্ছে স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর দূরত্ব, ছেলের কাছ থেকে সরে যাচ্ছে বাবা কিংবা মায়ের সঙ্গে মেয়ের পারস্পরিক ভাব বিনিময় ঘটছে না। পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থেকেও একে অন্যের পরিচয়টি পর্যন্ত জানার প্রয়োজন অনুভব করছে না। আত্মকেন্দ্রিক এ আচারের ফলে মানুষ যেন ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে। আর সামাজিক বন্ধনের এ দূরত্ব নিয়ে মঞ্চে নতুন নাটক নিয়ে এসেছে মতিঝিল থিয়েটার (মতিঝিল)। নিঃসঙ্গ নিরাময় শীর্ষক প্রযোজনাটি রচনা করেছেন রবিউল আলম। নির্দেশনা দিয়েছেন নাজমুল হাসান শুভ। রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকটির কারিগরি মঞ্চায়ন হয়। নাটকটি প্রসঙ্গে নির্দেশক নাজমুল হাসান শুভ জনকণ্ঠকে বলেন, আধুনিক সমাজ মানুষকে দিয়েছে অনেক রকম সুযোগ-সুবিধা। উল্টোপিঠে আবার মানুষের মাঝে সৃষ্টি করেছে নিঃসঙ্গতা। পরিবারের পারস্পরিক সম্পর্কগুলো ক্রমশই নড়বড়ে হচ্ছে। ধাবমান আধুনিকতার পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ হয়ে পড়ছে আত্মকেন্দ্রিক। সেই সূত্রে আধুনিক সমাজের নতুন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে নিঃসঙ্গতা। মানুষের একা হয়ে পড়ার এ প্রবণতাকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে নিঃসঙ্গ নিরাময়। রাইসা খানম নামের এক মহিলাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে নাটকের কাহিনী। আধুনিক ও স্মার্ট এ নারী দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। সেখানে তার স্বামী মারা গেলে ফিরে আসেন দেশে। ভেবেছিলেন পরিবার-পরিজনকে নিয়ে আনন্দে কাটিয়ে দেবেন জীবনের বাকিটা সময়। তবে সে আশা পরিণত হয় নিরাশায়। এ পর্যায়ে তিনি অনুভব করেন যে, সবাই আসলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। অতি আপনজনেরও খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন না কাছের মানুষটি। ফলে এক সময় নিঃসঙ্গ বোধ করেন রাইসা। একই ভাবে আশপাশের অনেককে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারেন, তারাও তারই মতো নিঃসঙ্গ। এ দলে আছে বৃদ্ধ থেকে তরুণ কিংবা তরুণী। তাই নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি পেতে রাইসা প্রতিষ্ঠা করলেন নিঃসঙ্গ নিরাময় কেন্দ্র। মানুষকে সঙ্গী ও সঙ্গ দেয়ার প্রতিষ্ঠানটিতে এলেন মাহবুব হাসান নামে এক পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি। স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটেছে। একটি ছেলে আছে তবে বাবার সঙ্গে তার সম্পর্কটা একেবারেই আলগা। প্রথমে মাহবুব হাসান এ কেন্দ্রটিকে পতিতা কেন্দ্র ভেবে ভুল করেন। তবে শরীরী সম্পর্ক ছাড়াও মানসিক সম্পর্ক মানুষকে কতটা প্রশান্তি দিতে পারেÑ আপন সাহচর্যের মাধ্যমে মাহবুবকে সে বিষয়টি বুঝিয়ে দেন রাইসা। ভুল ভাঙ্গে মাহবুবের। একপর্যায়ে সে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রাইসার ওপর। এদিকে, মাহবুবের ছেলে রাহবারও ঘটনাক্রমে এসে হাজির হয় নিঃসঙ্গ নিরাময় কেন্দ্রে। প্রেমিকা ছেড়ে চলে যাওয়া রাহবারও নিঃসঙ্গতা থেকে বাঁচতে আশ্রয় নেয় নিরাময় কেন্দ্রে। এখানে বাবা মাহবুবকে দেখে ধাক্কা খায় রাহবার। একই সঙ্গে মাহবুবের সঙ্গে রাইসার সহজ সম্পর্কটিও তাকে ভাবিয়ে তোলে। এক সময় বাবার মতো ছেলেরও ভুল ভাঙ্গে। বুঝতে পারে শারীরিক সম্পর্কের চেয়ে কতটা বেশি শক্তিশালী মানসিক সম্পর্ক বা সঙ্গ। আবার রাহবার যখন নিঃসঙ্গ নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছে তখন পুনরায় যোগাযোগ করে তার প্রেমিকা। সেও এসে হাজির হয় এখানে। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী। স্থাপত্যবিষয়ক প্রদর্শনী, সেমিনার ও পুরস্কার ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে রবিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় স্থাপত্যবিষয়ক সেমিনার ও প্রদর্শনী। একই আয়োজনে ছিল নির্বাচিত স্থাপত্যের স্থপতিদের পুরস্কার প্রদান। আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (একেডিএন) এ প্রদর্শনী, পুরস্কার প্রদান ও সেমিনারের আয়োজন করে। প্রতি তিন বছর পরপর আগা খান এ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার প্রদান করে একেডিএন। ২০১৬ সালে এ পুরস্কারের জন্য সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৮৪টি প্রকল্প জমা পড়ে। আন্তর্জাতিক জুরিরা সেখান থেকে ১৯টি স্থাপত্যের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে সেগুলোর স্থপতিদের পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করেছেন। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের দুটি প্রজেক্ট এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। ঢাকার বায়তুর রউফ মসজিদের স্থাপত্যের জন্য মেরিনা তাবাসসুম ও গাইবান্ধায় ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার স্থাপত্যের জন্য কাশেফ মাহবুব চৌধুরী এ পুরষ্কার পেয়েছেন। মিলনায়তনের বাইরে সেরা ১৯টি স্থাপত্যকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ডিসকভারি চ্যানেলে প্রচারিত ‘রিভিলড হুমায়ুন টম্ব’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। মুঘল সম্রাট হুমায়ুন ও তার সময়কালের বিভিন্ন স্থাপত্যকর্মের নানা বিষয় নিয়ে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্রটি।
×