ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জুলাই থেকে কার্যকর ॥ করদাতার সংখ্যা বাড়াতেই এ ধারা যুক্ত

ই-টিআইএন ছাড়া কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন তুলতে পারবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৩ জুন ২০১৬

ই-টিআইএন ছাড়া কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন তুলতে পারবেন না

মশিউর রহমান খান ॥ আগামী জুলাই থেকে ইলেক্ট্রনিক কর শনাক্তকারী নম্বর (ই-টিআইএন) ছাড়া দেশের সরকারী-বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারবে না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। বেতন-ভাতা বাবদ কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যয় প্রদর্শন প্রবণতা বন্ধ করতে ও কর প্রদানকারীর সংখ্যা বাড়াতেই এ ধারা যুক্ত করা হয়েছে বলে এনবিআর সূত্র নিশ্চিত করেছে। ২০১৬ সালের অর্থ বিলে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৯৮ সালের ধারা ৩০ সংশোধন করে এ বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মাধ্যমে হিসাবের অর্থবছর শেষে এনবিআরকে আর্থিক বিবরণীর সঙ্গে উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ছাড়া প্রশাসন কিংবা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর এ নম্বর জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এ টিআইএন ছাড়া কোন কোম্পানির বেতন পরিশোধিত হলে তা ব্যয় হিসেবে গ্রহণ করবে না এনবিআর। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন আয়করসীমা মুক্ত হলে সেক্ষেত্রে কোন ই-টিআইএন করতে হবে না। এছাড়া একই অধ্যাদেশ সংশোধনের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের অন্যান্য ভাতায় করমুক্তির সীমাও বাড়ানো হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে এ আইন কার্যকর করবে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পূর্বের নিয়মানুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয়ের হিসাবের ক্ষেত্রে শুধু কর্মীর সংখ্যা ও বেতন স্কেল দাখিল করলেও হতো। তবে এখন থেকে কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে আর এ সুযোগ থাকছে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় দেখালে কোম্পানিকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ১২ ডিজিটের কর শনাক্তকারী নম্বর জমা দিতে হবে। নিয়মানুযায়ী সরকারী-বেসরকারী যে কোন প্রতিষ্ঠানকে বছর শেষে তাদের হিসাব বিবরণী এনবিআরের কাছে জমা দিতে হয়। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ধারা ৩০ সংশোধনপূর্বক নতুন একটি ধারা যুক্ত করে এ বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে, যা জাতীয় সংসদে অর্থবিল পাসের পর চূড়ান্ত রূপ নেবে। আগামী ১ জুলাই থেকে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে এ আইনে বেতন পরিশোধ করতে হবে। অধ্যাদেশে যুক্ত নতুন (এ) ধারায় বলা হয়েছে, যে কোন প্রতিষ্ঠানকে বেতন বাবদ যে কোন টাকা পরিশোধে ই-টিআইএন দিতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠান তার বার্ষিক হিসাব বিবরণীতে ই-টিআইএন ছাড়া বেতন পরিশোধ করলে তা অনুমোদন হবে না। তবে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বার্ষিক মূল বেতন দুই লাখ ৫০ হাজারের কম হলে তাদের ক্ষেত্রে কর পরিশোধ করতে হবে না। এছাড়া তাদের অন্যান্য ভাতা বাবদ বার্ষিক করমুক্ত আয় চার লাখ ৭৫ টাকার কম হলে কর দিতে হবে না, যা আগে ছিল চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। সূত্র জানায়, দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন হিসেবে দেখানো ব্যয়ের ক্ষেত্রে ফাঁকি দিয়ে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠান বেতন-ভাতার খরচ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি দেখিয়ে কর ফাঁকি দিয়ে থাকে। ফলে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনতেই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে চাকরিজীবীদের করের বোঝা বাড়বে না। যারা করযোগ্য, শুধু তাদের কাছ থেকেই কর আদায় করা হবে। কোন ব্যক্তি ই-টিআইএন নিবন্ধন করলে তা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। এনবিআর চাইলেই যে কোন ই-টিআইএনের তথ্য পরীক্ষা করতে পারবে। এ পদ্ধতি চালু করা হলে কোন প্রতিষ্ঠান চাইলেই ভুয়া টিআইএন প্রদর্শন করে ব্যয় দেখাতে পারবে না। ফলে কর ফাঁকির সুযোগ কমে যাবে। এছাড়া আগামী অর্থবছরে ব্যক্তিগত করদাতার সংখ্যা বর্তমান ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখে উন্নীত করার যে লক্ষ্য, তা বাস্তবায়নের জন্য এ পদ্ধতিটি অধিক কার্যকর হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের করযোগ্য মানুষের তুলনায় করদাতার সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় সব চাকরিজীবীর ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো এনবিআরকে বেতন বাবদ ব্যয় দেখানোর সময় ই-টিআইএন নম্বর প্রদর্শন করতে হলে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে স্বচ্ছতা আসবে। কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের মতে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হলে তা প্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তি চাপ বাড়াবে।
×