ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদায় নিচ্ছে মধুমাস

ফলে ফলে ভরপুর বাজার, অলিগলি ফুটপাথ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৩ জুন ২০১৬

ফলে ফলে ভরপুর বাজার, অলিগলি ফুটপাথ

মোরসালিন মিজান ॥ মধুমাস জ্যৈষ্ঠ শেষ হতে চলেছে। একদিকে শেষ হচ্ছে। অন্যদিকে বাড়ছে ফলের আমদানি। ঠিক এই মুহূর্তে মৌসুমী ফলে বাজার পরিপূর্ণ। আম, জাম, জামরুল, লিচু, লটকন, কাঁঠাল- কী নেই? সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকার বাতাসেও ম ম ঘ্রাণ। এখন বাজারে অলি গলি ফুটপাথে ফল আর ফল। কাঁচা বা অপরিপক্ব নয়। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও দারুণ সুস্বাদু! এসব কারণে শেষ সময়ে এসে জমে উঠেছে ফল খাওয়ার উৎসব। এবারও জ্যৈষ্ঠ শুরুর আগেই মধুমাসের কিছু কিছু ফল বাজারে দেখা গেছে। মাসের প্রথমভাগেই পাওয়া গেছে লিচু। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনারগাঁ ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের লিচু দিয়ে মধুমাস উদ্যাপন শুরু হয়েছিল। পরে আসে ঈশ্বরদী থেকে। তবে রাজশাহী ও দিনাজপুরের লিচু না খেলেই নয়। বিখ্যাত এই লিচু বাজারে এখনও আছে। লালমনির হাট ও রংপুর অঞ্চলের লিচু চলবে কিছুদিন। চায়না লিচুও আছে বাজারে। ‘চায়না টু’ নামে পরিচিত একটি জাত। ‘চায়না থ্রি’ নামে আছে আরেকটি। লিচুগুলো আকারে বড়। দামও একটু বেশি। সবচেয়ে বড় লিচুটি ‘বোম্বাই’ নামে পরিচিত। অন্য লিচুর তুলনায় চাহিদাও বেশি। তবে আর কয়েকদিন পরই লিচু পাওয়া যাবে না। সঙ্গত কারণেই লিচুর দাম আর কমেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একেক জায়গায় একেক ধরনের দামে বিক্রি হচ্ছে লিচু। রবিবার খুচরা বাজারে একশ লিচু বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। মধুমাসের প্রধান রসালো ফল অবশ্য আম। অনেকদিন ধরেই বাজারে আছে। এখন বলা যায় শ্রেষ্ঠ সময়। দেশের প্রায় প্রতি প্রান্ত থেকে গাছপাকা আম খাচা ভর্তি হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করছে। ওয়াইজ ঘাটের নাইস ফ্রুট স্টোরে বসে কথা হয় আল আমিনের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে এই আড়তদার জানান, এখন তাদের কাছে আছে হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগের মতো সুস্বাধু জাত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। একই জেলার লক্ষণভোগ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। যশোরের আম্রপালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে এসে দামের কোন হিসাব মেলানো যায় না। কেনা দাম থেকে যে যতটা পারেন বাড়িয়ে নেন। রবিবার খুচরা বাজারে হিমসাগর ও ল্যাংড়া বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। জাতীয় ফল কাঁঠাল একটু দেড়ি করে বাজারে আসে। মধুমাসের শেষভাবে এসে দেখা যাচ্ছে প্রচুর কাঁঠাল। মৌসুমের শুরুতে বাজারে ছিল চট্টগ্রামের কাঁঠাল। এখন অধিকাংশই টাঙ্গাইলের। ছোট বড় মাঝারি যেটার যে আকার, সে অনুযায়ী দাম। কাওরান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী তারা মিয়া জানান, ছোট কাঁঠালের দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু। বড় কাঁঠালের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। আগামী দুই মাস কাঁঠাল পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। রসালো ফল হিসেবে আনারসেরও এখন দারুণ কদর। পার্বত্য এলাকায় আনারসের প্রচুর আবাদ হয়। বিশেষ করে রাঙ্গামাটি থেকে আগেভাগেই ঢাকার বাজারে ঢুকে গিয়েছিল জলডুবি নামের আনারসটি। আকার একটু ছোট কিংবা মাঝারি হলেও, খেতে সুস্বাদু। আর মধুপুরের আনারসের স্বাদের কথা তো আলাদা করে বলার প্রয়োজন হয় না। ওয়াইজঘাটের আড়ত সোহাগ ট্রেডার্সের প্রোপাইটর জাফর আলী জনকণ্ঠকে জানান, ক্যালেন্ডার নামের সুমিষ্ট আনারসটি সবে আসতে শুরু করেছে। প্রতিটি আনারস পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা করে। মধুমাস শেষ হতে চললেও এই আনারস আরও প্রায় দুই মাস পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি। বাজারে আছে জামও। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানী ঢাকায় আসছে ভিন্ন স্বাদের জাম। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। জামরুলও দেখা যাচ্ছে এখানে ওখানে। সাদা এবং লাল রঙের ফলটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। অনেকেই মজা করে খান। খুচরা বাজারে প্রতি কেজির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে লটকন। তালের শাঁশও অনেকে খুব মজা করে খান। চাহিদাটা চোখে পড়ার মতো। একটি ফলে তিনটি বিচি। দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা। এসবের বাইরে বাঙ্গী করমচা ফুটিসহ আরও অনেক ফল এখন হাতের কাছে। বড় বাজার ছাড়াও ঢাকার অলি গলিতে বিক্রি হচ্ছে মধু মাসের ফল। ফুটপাথে অস্থায়ী দোকান দিয়েছে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। গত ক’দিন শহর ঘুরে দেখা যায়, ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে। কলাবাগানের এক ফুটপাথ থেকে ফুল কিনে বাসায় ফিরছিলেন আমিনুল ইসলাম। গাজীপুরের একটি কলেজে পড়ান। বললেন, বাসায় ফেরার সময় কিছু না কিছু হাতে করে নিয়ে যাওয়া অভ্যাস। এখন যেহেতু ফলের সময় অন্য কিছুর দিকে আর তাকাই না। মৌসুমী ফলের অনেক গুণ জানিয়ে তিনি বলেন, যে ক’দিন পাওয়া যাবে, ফল খাব। দাম নিয়ে কিছুটা অসন্তোষের কথা জানালেন গৃহিণী শারমীন আরা। বললেন, প্রথম প্রথম বিক্রেতারা বলত নতুন ফল। অল্প অল্প আসছে। তাই দাম বেশি। এখন বলছে, শেষ সময়। ফল তো আর পাওয়া যাবে না। দাম তাই বেড়ে যাচ্ছে। দিলু রোডের মুখে একটি খুচরা ফল বাজার। বেশ জমজমাট। এখান থেকে ফল কিনছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আসিফুর। তারও একমত- দাম বেশি। তবে দাম নিয়ে নয়, তার চিন্তা ফরমালিন নিয়ে। বিক্রেতারা ফরমালিন নেই বললেও, এ পর্যন্ত অনেক ফলেই ফরমালিন আছে বলে মনে হয়েছে তার। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়ার দাবি জানান তিনি।
×