ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এখন বাজেটে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ মাত্র দেড় শতাংশ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৩ জুন ২০১৬

এখন বাজেটে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ মাত্র দেড় শতাংশ॥ অর্থমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক সহায়তানির্ভর দেশ নয়। জন্মলগ্নে বৈদেশিক সহায়তা ছাড়া আমাদের বাজেট বানানো যেত না। এখন বৈদেশিক সহায়তার হিসাব অতি নগণ্য, যা জিডিপির প্রায় ১৬ শতাংশের বাজেটে বৈদেশিক সহায়তা হলো মাত্র দেড় শতাংশ। তবে বৈদেশিক সহায়তা কমানোর কোন উদ্যোগ আমাদের নেই, বরং আমরা চাই যে, বড় হারে বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে আমাদের কাঠামোতে বিবর্তনের লক্ষ্যে বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করব। রবিবার ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য আবদুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ বৈদেশিক ঋণ সহায়তা গ্রহণ করে আসছে। এই বৈদেশিক সহায়তা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় অবকাঠামো ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচীতে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ব্যয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা দেশসমূহের কাছ থেকে মূল অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট এ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ) গ্রহণ করে থাকে। যার প্রায় পুরোটাই নমনীয় ঋণ বা অনুদান। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশ এ ধরনের বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার অধিকারী। কারণ উন্নত দেশসমূহ তাদের জাতীয় রাজস্ব আয়ের শতকরা শূন্য ৭ ভাগ উন্নয়নশীল দেশসমূহকে সাহায্য হিসাবে প্রদানের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। অর্থমন্ত্রী আরও জানান, স্বাধীনতার পর হতে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস হতে যেসব বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে, তার গড় সুদের হার প্রায় এক শতাংশ। এসব ঋণের গড় গ্রেস পিরিয়ড ৮ বছর এবং গড়ে ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য। তিনি বলেন, নমনীয় বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের মাত্রা কমালে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। উল্লেখ্য, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের হার বৈদেশিক ঋণের সুদের হারের তুলনায় অনেক বেশি। আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, বাংলাদেশ ঋণ পরিস্থিতির পরিমাপক সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশকে কোন অবস্থায়ই বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীল দেশ হিসেবে গণ্য করা যায় না। বাংলাদেশ সকল সময়েই কঠিন শর্তের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণকে নিরুসাহিত করেছে এবং অধিক হারে বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রথাগত নমনীয় ঋণ গ্রহণেকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তিনি জানান, ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়াকরণের সময়ে ঋণের শর্ত সহজ করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়। তাছাড়া কেবল বিদ্যুত ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য যেসব প্রকল্প অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে এবং যেসব প্রকল্প হতে ক্যাশ রিটার্ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা বেশি সেসব নীতির প্রকল্পে সীমিত আকারে নমনীয় ঋণও সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে এসব অনমনীয় ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে অনমনীয় ঋণ সহায়ক বিষয়ক ঋণ স্থায়ী কমিটি এর অনুমোদন গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বৈদেশিক ঋণ যাতে আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি না করে তা নিশ্চিতকরণের জন্য কঠিন শর্তের (অনমনীয় ও বাণিজ্যিক) ঋণ গ্রহণ পরিহার করে নমনীয় ঋণ গ্রহণকে প্রাধান্য দিয়ে বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বৈদেশিক সহায়তা সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা ॥ সরকারী দলের সংসদ সদস্য ম ম আমজাদ হোসেন মিলনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা সমপরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৫৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে প্রকল্প সাহায্য বাবদ ৪০ হাজার কোটি সমপরিমাণ প্রায় ৫ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার, খাদ্য সহায়তা বাবদ ৩১৬ কোটি টাকা সমপরিমাণ প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীবহির্ভূত প্রকল্প বাবদ ৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা সমপরিমাণ প্রায় ৫১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি জানান, ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা সময়ে গড়ে বার্ষিক ৭ দশমিক ৪ ভাগ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন হবে জিডিপির ৩২ শতাংশ। এ পরিমাণ বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়/ঋণ দিয়ে মেটানো সম্ভব নিয়ে। তাছাড়া এখনও অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের হার বৈদেশিক ঋণের সুদের হারের তুলনায় অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে বৈদেশিক সাহায্য এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম।
×