ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৩ জুন ২০১৬

গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন ॥ নাসিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চলমান গুপ্তহত্যাকারী ও তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গুপ্তহত্যায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কাপুরুষদের হুমকিতে আমরা ভয় পাই না। যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত তারা রেহাই পাবে না। খুনী চক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হবই। ১৪ দলের নেতারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে। রবিবার বিকেলে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আগামী ১৯ জুন গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী এক ঘণ্টার কর্মসূচী সফল করতে এ যৌথসভার আয়োজন করা হয়। বৈঠকে আগামী ১৪ জুন ঝিনাইদহ এবং ১৭ জুন পাবনায় ১৪ দলের শান্তি সমাবেশ করার কর্মসূচী গৃহীত হয়। যৌথসভায় জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হুমকি প্রদানের ঘটনায় ১৪ দলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব হুমকি দিয়ে কোন লাভ হবে না। সাহস থাকলে প্রকাশ্য গণতান্ত্রিকভাবে ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে মোকাবেলার জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা। গুপ্তহত্যা বন্ধে সহযোগিতা করার আগ্রহ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, তাঁদের যদি এ ব্যাপারে সত্যিকারে আন্তরিকতা থাকে তাহলে সর্বাগ্রে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গ ত্যাগ এবং গুপ্তহত্যাকারীদের উস্কে দেয়ার নীতি পরিহার করতে হবে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার চক্রান্ত এখনও বন্ধ হয়নি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের দেশবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যখন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, তখন থেকেই উনি দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত। বর্তমানে বিএনপি মুসলিম জাহানের শত্রু মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করছে। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমি বিশ্বাস করি এ সব হুমকিতে হাসানুল হক ইনু শুধু নয়, আমরা কেউ ভয় পাইনি। ভয় পাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। যারা কাফনের কাপড় পাঠায় তারা কাপুরুষ। তাদের হুমকিতে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের প্রতি ১৪ দলের সমর্থনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে আপনারা (জনগণ) অতীতের মতো ঐক্যবদ্ধ হোন। আমরা আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এ সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ় আন্দোলন গড়ে তুলে তাদের পরাজিত করব। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ব্যর্থ করার জন্য দেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল। আজকেও দেশ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের প্রলম্বিত বিচার হচ্ছে, অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রে উন্নতি করছি, তখনই একটি মহল বাংলাদেশকে টার্গেট করে গুপ্তহত্যা করছে। দেশ যেন শান্তিতে না চলতে পারে সেজন্য সুপরিকল্পিতভাবে সেই মুখচেনা মহল দেশে সহিংসতা চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের কোন চক্রান্ত সফল হবে না। তিনি বলেন, যে সৌদি আরব নিয়ে অনেক কথা হয়, সেই সৌদি আরব শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাথে সংহতি প্রকাশ করে দেশে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার দৃঢ় পদক্ষেপকে সমর্থন করছে। বৈঠকে অন্যান্য বক্তা বলেন, যারা গুপ্তহত্যার মাধ্যমে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, গুপ্তহত্যা বন্ধে শুধু মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করলে হবে না। ভবিষ্যতে যাতে গুপ্তহত্যার নামে সংখ্যালঘুরা আর নির্যাতিত না হয় সেজন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশে চলমান গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে আগামী ১৯ জুন দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী সফল করতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এ যৌথসভায় বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, ডা. দীপু মনি এমপি, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, জাতীয় পার্টির (জেপি) এজাজ আহমেদ মুক্ত, জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির নূরুর রহমান সেলিম, জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
×