ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্রই রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে জটিলতা নিরসন হতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৩ জুন ২০১৬

শীঘ্রই রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে জটিলতা নিরসন হতে যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে জটিলতা নিরসন হতে চলেছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির ভারি যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। রবিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর অব্যাহতি দিতে না চাইলে বিদ্যুত কেন্দ্রটির চুক্তি স্বাক্ষরে অসম্মতি জানায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন দ্রুত সমস্যার সমাধান হলে বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ চুক্তি হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ছাড়াও বিদ্যুত ও অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রবিবার বিকেলে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বিদ্যুত বিভাগের একটি সূত্র কর অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে বৈঠকে সম্মতির কথা জানিয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেখা যাক’। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, আইপিপি ভিত্তিতে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করলে ১৫ বছরের কর অবকাশ দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ভারি যন্ত্রাংশ আমদানিসহ সকল প্রকার কর অব্যাহতি পেয়ে থাকে উদ্যোক্তারা। রামপালের ভারি যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর অব্যাহতি দিতে না চাইলে গোল বাধে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য ঠিকাদার কোম্পানি চূড়ান্ত হওয়ার পরও চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, কর অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে বৈঠকে সম্মতি জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে রামপাল নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান হবে। এখন কেন্দ্রটির চুক্তি দ্রুত করা সম্ভব হবে। বিদ্যুত বিভাগ জানায়, বিদ্যুত কেন্দ্রটির যন্ত্রাংশ আমদানিতে কর অব্যাহতি চেয়ে বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম এনবিআরকে একটি চিঠি দেয়। এই চিঠির উত্তরে এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (কর অব্যাহতি) কামাল হোসেন গত ২৬ এপ্রিল বিদ্যুত সচিবকে জানান কর অব্যাহতি দেয়া সম্ভব নয়। বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য আমদানি করা যন্ত্রাংশের উৎসে কর এবং এবিআর সার্ভিস চার্জ থেকে অব্যাহতি চেয়েছিল বিদ্যুত বিভাগ। বিষয়টি সুরাহার জন্য বিদ্যুত বিভাগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হলে তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার নির্দেশ দেন। এর আগেও গত মাসে একবার বৈঠকটি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়। গত ৩০ জানুয়ারি বিদ্যুত কেন্দ্রটির চুক্তি করার জন্য ভারতের হেবি ইলেক্ট্রিক কোম্পানি ভেলকে চিঠি দেয় ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি। এই চিঠি পাওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে চুক্তি করার কথা থাকলেও কর অব্যাহতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় চুক্তিটি ঝুলে যায়। এর মধ্যে গত মার্চে বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের কাছে বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাণ জামানতের অর্থ জমা দেয় ভেল। বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে মোট অর্থের তিন শতাংশ জামানত হিসেবে জমা দেয়া হয়েছে। সম্ভাব্যতা জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ২০১ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করতে না পারলে অথবা চুক্তি অনুযায়ী কোন কাজ না করলে এই জামানত থেকেই অর্থ কেটে নেয়া হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি নির্মাণ করছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির সমান অংশীদারিত্ব থাকবে বাংলাদেশ এবং ভারতের। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ৩০ ভাগ নিজস্ব অর্থের বাইরে ৭০ ভাগ ঋণ নেয়া হবে। ভারতের এক্সিম ব্যাংক কেন্দ্রটি নির্মাণে ঋণ সহায়তা দেবে। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াদুবেন্দ্রা মাথুর গত মার্চে বাংলাদেশে আসেন। ওই সময়ে বিদ্যুত কেন্দ্রটির অর্থায়ন নিশ্চয়তা দেন তিনি। বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের পর উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে।
×