ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নেতৃত্ব হারাবে ইইউ ॥ বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলা

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১৩ জুন ২০১৬

নেতৃত্ব হারাবে ইইউ ॥ বৈশ্বিক সঙ্কট  মোকাবেলা

ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে গেলে জোটটি বৈশ্বিক পরমাণু ইস্যুতে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা হারাবে এবং সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’ হয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ব্রেক্সিট বা ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের ঘটনা ঘটলে সরকারী পেনশন খাতে বরাদ্দ কমে যেতে পারে বলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সতর্ক করে দিয়েছেন। খবর এএফপি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। গত বছর ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পরমাণু সমঝোতায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে ইইউ। এছাড়া ইসরাইল ও ফিলিস্তিনীদের মধ্যে থেমে থাকা শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করার বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ২৮ জাতি জোটটি। আগামী ২৩ জুন ব্রিটেনের ইইউ থাকা না থাকা প্রশ্নে গণভোট হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ জনমত জরিপে ইইউ থাকতে আগ্রহীরা ইইউ ছেড়ে যেতে আগ্রহীদের তুলনায় ৪৪-৪২ শতাংশে এগিয়ে আছে বলে জানা গেছে। ১৩ শতাংশ ভোটার এখনও এ বিষয়ে নিজেদের মনস্থির করতে পারেনি। এ গণভোট এমন এক সময় হতে চলেছে যখন ইউরোপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে কঠিন অভিবাসী সমস্যা মোকাবেলা করছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত ইউরোপে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের ইইউ ছেড়ে যাওয়াটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক হতে পারে বলে অনেক পর্যবেক্ষক শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ব্রাসেলসভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের (আইএফআরআই) বিশ্লেষক ভিভিয়ান পারতুসোত বলেছেন, ‘ব্রিটেন ইইউ ছেড়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের মতো বৃহৎ শক্তিগুলোর কাছে ইইউ গুরুত্ব হারাবে। বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলায় ইইউর বর্তমান সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’ বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জ আসতে পারে রাশিয়ার কাছ থেকে। ইউক্রেন সঙ্কটে রুশ হস্তক্ষেপের জের ধরে মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ। জোটের মধ্যে যে কোন ধরনের দ্বিধাবিভক্তি ঘটলে রাশিয়া তার সুযোগ নেবে বলে অনেকে বিশ্লেষকই ধারণা করেন। তারা বলছেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ও উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা ন্যাটোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হারালে ইইউ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা অনেকটাই হারাবে। জোটটি তখন বেশিমাত্রায় অন্তর্মুখী হয়ে পড়বে। ‘এটি হবে এক দুঃসংবাদ, কারণ ইইউর দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে পড়বে সংকীর্ণ। ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ইমেজ সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে ইইউ’ বলেছেন ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের পরিচালক জেনিস ইমানুইলিদিস। তিনি বলেছেন, ‘ইইউ তখন ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে উঠবে। এ সুযোগ নিয়ে চীন ও রাশিয়া তখন জোটের মধ্যে আরও ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টা করবে। লাতিন আমেরিকা বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যেমন নিজেদের আঞ্চলিক জোট মেরকসুর ও আসিয়ানের জন্য ইইউকে মডেল বিবেচনা করে এসেছে সেটি ভবিষ্যতে আর সেভাবে দেখা হবে না। তবে সব বিশ্লেষকই যে বিষয়টি নিয়ে সেভাবে উদ্বিগ্ন, তা নয়। কেউ কেউ মনে করেন ব্রিটেনের ইইউ ছেড়ে যাওয়াটা খুব ক্ষতিকর কিছু হবে না। ভবিষ্যতে যে কোন সঙ্কট মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে ন্যাটো। ইইউর ২৮ সদস্য দেশের মধ্যে ২২টি দেশই ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য। এদিকে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করলে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) ও অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। গণভোটের ১২ দিন আগে ইন্ডেপেন্ডেন্ট পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাতকারে ক্যামেরন বলেন, ‘সাধারণ নির্বাচনের চেয়েও বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম রয়ে যাবে।
×