ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ১৩ জুন ২০১৬

অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই

অভিজ্ঞতা মানুষের সৃজনীশক্তি, চিন্তাশক্তি এবং কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে তুলতে ক্ষেত্রবিশেষে সহায়ক হয়ে ওঠে। অজ্ঞতা যেমন কোন গুণ নয়, তেমনি তা অন্ধত্বের পথে টেনে নেয়। অভিজ্ঞতাহীনতা মানুষকে দক্ষতার পথে নিয়ে যেতে পারঙ্গম হয়ে ওঠে না। আবার শুধু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলেই হয় না। সেই অভিজ্ঞতা ঝালিয়ে নিতে হয় কর্মপরিসরে। অভিজ্ঞতাই মানুষকে দক্ষ করে তোলে। আর সেই দক্ষতাই তাকে যোগ্য ও সমৃদ্ধ করে তোলে সম্পন্ন মানবে উন্নীত হতে। অভিজ্ঞতার সঙ্গে যোগ্যতা। দক্ষতার সম্পর্ক সুনিবিড়। শ্রম ও কর্মকুশলতার বিস্তার দ্রুত ঘটতে পারে অভিজ্ঞতাকে যথাযথভাবে সমর্থিত করা গেলে। অদক্ষ মানুষও অভিজ্ঞতায় জারিত হয়ে অনেক ক্ষেত্রেই যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন। তবে এ জন্য প্রণোদনারও প্রয়োজন রয়েছে। সব মানুষের মধ্যেই কর্মস্পৃহা থাকে। তাকে জাগিয়ে তোলাটাই মুখ্য। সেই স্পৃহা বিস্তৃত হয়ে উঠতে পারে কাজের ক্ষেত্রে অর্জিত অভিজ্ঞতার মানদ-ে। মানুষ অভিজ্ঞ হয়ে জন্মগ্রহণ করে তাতো নয়। অভিজ্ঞ হতে হয়, হয়ে উঠতে হয় বৈকি। তা হওয়ার জন্য প্রয়োজন নিরলস কাজ করে যাওয়া নিমগ্নতায় আবিষ্ট হয়ে। অভিজ্ঞতার ইতিবাচক দিকগুলো সামনে এগিয়ে দিতে সহায়ক অবশ্য। জীবনের সব ক্ষেত্রেই মানুষকে তার এগিয়ে যাওয়ার পথে অর্জন করতে হয় বিচিত্র অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা থেকে প্রয়োজনীয় ও বাস্তব অংশটুকু বের করে আনা গেলে তা হতে পারে সমৃদ্ধতর। প্রতিযোগিতাপূর্ণ কাজে অভিজ্ঞতাকে সক্রিয় করা গেলে বিজয়ের দ্বারপ্রান্ত অনায়াসে খুলে যেতে পারে। জনগণের আশা-আফসোস পূরণের দায়ভার যাদের, প্রশাসনকে গতিশীল করার দায়িত্ব যাদের, তারা যদি হয় অনভিজ্ঞ, তবে যোগ্যতা ও দক্ষতার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যেমন, তেমনি যথাযথ কর্মসাধনও সহজতর নয়। রাষ্ট্র এবং প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। অনভিজ্ঞ হলে সব কিছু গুবলেট হতে বাধ্য। অভিজ্ঞ হতে না পারা জনকে পদোন্নতি বা পদায়ন করা হলে নতুন দায়িত্ব সুচারুরূপে পালনে ঘাটতি থাকতে বাধ্য; যা কারও কাম্য হতে পারে না। বহু বিলম্বে হলেও প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসেছে ‘অভিজ্ঞতা’কে ধারণ করার প্রক্রিয়া চালুর পদক্ষেপে, যা সাধুবাদ পাবার যোগ্য। বলা হচ্ছে, মাঠ প্রশাসনে কমপক্ষে পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে প্রশাসন ক্যাডারের কোন কর্মকর্তাকেই মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হবে না। বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত বটে। কিন্তু এতকাল এই বিধানকে উপেক্ষা করে খেয়াল-খুশির শামিয়ানা টানিয়ে তাতে অনভিজ্ঞদের জড়ো করে দায়-দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে যে গাফিলতি ও অরাজকতার সম্মিলন ঘটানো হয়েছে, তাতে আপদ-বিপদ-মুসিবতের ফোয়ারা বা নহরই বয়ে গেছে। অযোগ্য, অদক্ষ, অথর্ব, অনভিজ্ঞদের হাতে পড়ে প্রশাসনিক কত কাজকর্ম যে ল-ভ- হয়েছে তা ভুক্তযোগী যেমন জানে, তেমনি প্রশাসনও বোঝে। কিন্তু না বোঝার ভান করে থাকায় ক্ষতি যা হওয়ার তা-ই হয়েছে, হচ্ছে। গতিহীন প্রশাসন সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির রথকে টেনে নিতে যথাযথ সক্ষম হচ্ছে তা বলা যাবে না। বর্তমানে জারি করা পদায়ন নীতিমালায় যা আছে তা যদি বাস্তবে পরিণত না হয়, তবে সবই হা-হতোস্মি! প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, অভিজ্ঞতা অর্জন এবং কাজে গতিশীলতা আনার জন্য প্রণীত নীতিমালা বাস্তবসম্মত হলেও কতটা কার্যকর হবে সে প্রশ্ন থেকে যায়। তবুও আশা করা ভ্রম হবে না যে, অভিজ্ঞ কর্মকর্তায় সমৃদ্ধ হবে দেশের প্রশাসন, যারা হবেন গণমুখী এবং জনবান্ধব। আমলাতন্ত্রের বাতিলযোগ্য দূষিত বিষয় থেকে বেরিয়ে এসে একটি সুপ্রিয় শুদ্ধাচারপূর্ণ প্রশাসন বিস্তার লাভ করবে এ প্রত্যাশা সব সময়েরই।
×