ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী দমনে দৃঢ়তা

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১৩ জুন ২০১৬

জঙ্গী দমনে দৃঢ়তা

বিগত কিছুদিনের মধ্যে কয়েকটি টার্গেট কিলিং সংঘটিত হওয়ার পর সরকার কঠোর অবস্থানে গেছে। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। আগাম ঘোষণা দিয়েই এটি শুরু হয়েছে। দেশব্যাপী জঙ্গী তৎপরতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই সাঁড়াশি অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবারও টার্গেট কিলিং হয়েছে। অভিযানের সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই গুপ্তহত্যা বন্ধ হয়ে যাবে এমনটা দেশবাসী আশা করেন না। তবে বড় ধরনের ধরপাকড় শুরুর পরও একই কায়দায় নিরীহ মানুষ হত্যার ভেতর দিয়ে দুর্বৃত্ত তথা জঙ্গীদের পরিকল্পনা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। নিরীহ মানুষ হত্যার ভেতর দিয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরি ও বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টের অপপ্রয়াস চালানোর ব্যাপারে জঙ্গীরা মরিয়া। কিন্তু সরকারও বসে নেই। সরকারের কাছে নিশ্চিত তথ্য আছে। সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেও সরকার বদ্ধপরিকর। সাঁড়াশি অভিযানের শুরুতেই অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা চলছে যে, সরকার বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর জন্য অভিযানকে ব্যবহার করবে। অন্যদিকে এমন অপপ্রচারও চলছে যে, অভিযানে হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলেও এর ভেতর একটিও জঙ্গী নেই। সব জামায়াত-বিএনপির লোক। এর জবাব মিলেছে অভিযানের প্রথম দিনের সফলতা সম্পর্কে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রদেয় বক্তব্যে। শনিবার দুপুরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স জানায় যে, সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ৩৭ জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযানে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ২৭ জন, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের (জেএমজেবি) ৭ জন এবং অন্য আরও ৩ জঙ্গীসহ মোট ৩৭ জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছে থেকে একটি বন্দুক, ৫০০ গ্রাম গান পাউডারসহ ১৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। সাঁড়াশি অভিযান সফল হোক, টার্গেট কিলিং বন্ধ হোকÑ এটাই দেশবাসীর চাওয়া। তবে দেশের মানুষেরও এ বিষয়ে করণীয় রয়েছে। অভিযান পরিচালনাকালে সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে তথ্য প্রদান ছাড়াও কার্যকরভাবে সহযোগিতা করা প্রত্যাশিত। সেইসঙ্গে আরও একটি বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনায় নিতে হবে। সেটি হলো পুলিশ ছাড়াও চলমান সাঁড়াশি অভিযানে অংশ নিচ্ছে র‌্যাব, আনসার, বিজিবি সদস্য। এই সম্মিলিত বাহিনীর ভেতর যেন কোন ধরনের সমন্বয়ের অভাব না ঘটে। অত্যন্ত সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে এই অভিযান পরিচালিত হোকÑ সেটাই কাম্য। প্রাথমিকভাবে সাতদিনের জন্য এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জঙ্গীদের আইনের আওতায় আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই গোয়েন্দা সূত্রে তা জেনে প্রয়োজনীয় প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এটা অস্বীকার করলে ভুল হবে যে, সাম্প্রতিক টার্গেট কিলিংয়ের ফলে দেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের ভেতর অংশত ভীতি বিরাজ করছে। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মনোবল দৃঢ় করার কাজটিও তাই রাষ্ট্রিক ও সামাজিকভাবে করা চাই। গত ১৮ মাসে সারাদেশে ৪৬টি জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় যেমন লেখক-বুদ্ধিজীবীরা আক্রান্ত হয়েছেন, তেমনি হামলার শিকার হয়েছেন খ্রীস্টান, হিন্দু, শিয়া, আহমদিয়াসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাও। হামলার শিকার হয়েছেন লালনভক্ত, পীরভক্ত, সাংস্কৃতিককর্মী, এমনকি বিদেশীরাও। পুলিশের উর্ধতন ব্যক্তিরা মিডিয়ায় যা-ই বলুন না কেন, সাধারণ মানুষ জঙ্গী দমনে পুলিশের সাফল্য এখনও খুব একটা দেখতে পাচ্ছে না। প্রকৃত হামলাকারীরা খুব কমই ধরা পড়ছে। দেশবাসী তাই পুলিশের কাছে জঙ্গী দমনে দৃঢ়তা আশা করছে।
×