ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ শাহজাহান

প্রস্তাবিত বাজেট এবং আমাদের প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৭:২১, ১২ জুন ২০১৬

প্রস্তাবিত বাজেট এবং আমাদের প্রতিক্রিয়া

২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট আলোচনায় মাননীয় অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয় বিশদ তুলে ধরেন। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি খুব নিম্নমানের এবং তা দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তারপরও তিনি আগামী অর্থবছরের জন্য উচ্চাভিলাষী রাজস্ব সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছেন। অর্থমন্ত্রী নিজেও বলেছেন যে, প্রস্তাবিত বাজেটের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী। হ্যাঁ, আমি নিজেই তা বলেছি। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমি আত্মবিশ্বাসী।’ অন্যদিকে আগামীবারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তিনি এনবিআরের প্রতি আস্থা রেখেছেন শতভাগ। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের ওপর দায়িত্ব ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা সংগ্রহের। সংশোধিত বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে করা হয় ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এনবিআরের আদায় লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে এনবিআরকে আগামী অর্থবছরে বাড়তি আদায় করতে হবে ৫৩ হাজার কোটি টাকা। তবে এনবিআরের এবারের রাজস্ব আদায় নিম্নমানের হলেও আগের বছর ভাল ছিল বলেও ধারণা অর্থমন্ত্রীর। বাজেট বক্তব্যে আগামী অর্থবছরে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, মাথাপিছু আয়ও বাড়াতে হবে। আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন সম্ভব হবে যদি বিনিয়োগ বাড়ানো যায়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জটা সামনে। প্রবৃদ্ধির ৭ শতাংশের ধারা বজায় রাখতে হবে। অপ্রদর্শিত আয় : আগামী বাজেটে শুধু নির্দিষ্ট একটি খাতে অপ্রদর্শিত আয় সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তবে এবারের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী অপ্রদর্শিত আয় সাদা করার সুযোগ নিয়ে কিছু বলেননি। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ বিবিবিবিবি নামে একটি নতুন ধারা সংযোজন করে ফ্ল্যাট কিনে অপ্রদর্শিত আয় সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। এ সুযোগটির কোন মেয়াদ বলা নেই। তাই যত দিন এ ধারাটি বাতিল করা না হবে, তত দিন এ সুযোগটি অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়েও অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করা যায়। ফোনে কথা বলার খরচ বাড়বে : আগামী বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ বাড়বে। তাই এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে মোবাইল ফোনের সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। মোবাইল ফোন অপারেটররা ওই দিন রাত থেকেই টাকা কাটা শুরু করেছে। সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কম রাজস্ব আদায় করে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। বেসরকারী পেনশন : বেসরকারী খাতে পেনশন পদ্ধতি চালু নিয়ে বাজেটে একটি ধারণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সংগঠিত শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছেন, এমন বেসরকারী খাতের জন্য একটি ‘কন্ট্রিবিউটিং পেনশন স্কিম’ চালু করার কথা বলেন। তবে একটু সময় লাগবে। তবে সরকারের এই মেয়াদের মধ্যেই কাজটি করে যাবেন বলে তিনি প্রতিশ্রুতিও দেন। অর্থনীতি দিন দিন চাঙ্গা হচ্ছে : কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর মতে ‘ভূমি কমছে, মানুষ বাড়ছে। শাকসবজি, ফলমূল রফতানি হচ্ছে দেশের বাইরে। অর্থনীতি দিন দিন চাঙা হচ্ছে। দেশে কোন খাদ্যঘাটতি নেই। বরং প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন পেট ঠা-া তো জগৎ ঠা-া। সেই ব্যবস্থা আমরা তৈরি করেছি। এ বাজেট একটি প্রগতিশীল বাজেট।’ তবে নতুন অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট আগের বাজেটগুলোর তুলনায় বেশ জটিল মন্তব্য করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এই সংগঠনের মতে, এ বারের বাজেট বিশাল। এ বিশাল বাজেটে করের আওতা না বাড়িয়েই আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে বাজেটের জন্য ৭টি পয়েন্ট দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার কোন প্রতিফল দেখতে পারিনি। অনেক অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবির প্রতিফল বাজেটে ঘটেনি। বাজেটের আকার অনেক বড় হয়েছে। বাজেটের আকার বড় হওয়া মানেই রাজস্বের আকার বড় হবে। এ বিশাল বাজেটকে পর্যালোচনার জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন আছে। কারণ জুয়েলারি সমিতি, হাইব্রিড গাড়ির আমদানিকারক, লোহা, ই-কমার্স, বেকারি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প যাদের আছে তাদের অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে একমত হলেও আয় ও ব্যয়ের কাঠামো এবং ঘাটতি অর্থায়নের পরিকল্পনায় ‘দুর্বলতা’ দেখতে পাচ্ছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ। প্রতি বছর বাজেটে ‘বাড়তি’ প্রাক্কলন এবং অর্থবছর শেষে তা অর্জন করতে না পারার মধ্য দিয়ে ‘আস্থার সঙ্কট’ তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করেন দেবপ্রিয়। অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেটকে কেউ কেউ ‘বড় বাজেট বা ঐতিহাসিক বাজেট’ বললেও তার সঙ্গে ‘একমত নন’ জানিয়ে তিনি বলেছেন, প্রতি বছর বাজেট টাকার অঙ্কে বাড়লেও মোট অর্থনীতির শতকরা হারের হিসাবে সেই ১৪ শতাংশেরই আটকে আছে, আর বাড়ছে না। এ বাজেটের ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে অর্থায়নের বিষয়টিকে এ বাজেটের ‘অন্যতম দুর্বলতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন দেবপ্রিয়। তবে বাজেট নিয়ে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন, আগামীর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়তে আমাদের একযোগে কাজ করে যেতে হবে। তবেই সম্ভাবনাময় বাজেটের সঠিক প্রতিফলন ঘটবে। সাফল্য ধরতে তখন আর খুব বেশি বেগ পেতে হবে না এ তো নিশ্চিত করে বলা যায়।
×