ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতি ও বিনিয়োগ ক্ষেত্র সম্প্রসারণ

প্রকাশিত: ০৭:২০, ১২ জুন ২০১৬

অর্থনীতি ও বিনিয়োগ ক্ষেত্র সম্প্রসারণ

কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল-সাবাহ তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তার এ সফরে দু’দেশের সম্পর্ক জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৫টি দেশ সফরের অংশ হিসেবে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল-জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল-সাবাহ বাংলাদেশ সফর করেন। কুয়েতের সরকারপ্রধানের এ সফরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে চারটি পৃথক চুক্তি এবং একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের খবর পাওয়া গেছে। বাণিজ্য, সামরিক, ঋণ সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি চারটি উভয়ে দেশের পারস্পরিক সমর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা কুয়েতের বাজারে আরও বেশি পরিমাণে পণ্য রফতানির উদ্যোগ নিতে পারেন। তার এ বক্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কুয়েতের আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। আশা করি, আমাদের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।কুয়েত মধ্যপ্রাচ্যের একটি ছোট রাষ্ট্র হলেও জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ ধনী দেশ। দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হলে সেখানে আমাদের জনশক্তি রফতানির বাজার সম্প্রসারিত হতে পারে। দেশটি বাংলাদেশে বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে, বিশেষত অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখলে আমরা নানা দিক থেকে উপকৃত হব। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ তৎপরতা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও কুয়েত একযোগে কাজ করতে পারে। আমরা আশা করছি, স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক জোরদার হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের সঙ্গে কুয়েতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। আমরা মনে করি, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-কুয়েত সম্পর্ক একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হবে। কুয়েত বাংলাদেশের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। পরীক্ষিত এই বন্ধুত্বের নিদর্শনে নব্বইয়ের দশকে কুয়েতের সার্বভৌমত্ব যখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছিল, কুয়েতের স্বাধীনতা যখন অস্তমিত, তখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থানও ছিল জোরালো। কুয়েতের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্গঠনের প্রয়োজনে জাতিসংঘ শান্তি মিশনের আওতায় বাংলদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কুয়েতে কর্মরত প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশী উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। বন্ধুত্বের এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করতেই কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর।দীর্ঘদিন ধরে কুয়েতের শ্রমবাজার বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য বন্ধ রয়েছে। এই শ্রমবাজার উন্মোচনের জন্য সরকারের তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে কুয়েতি প্রধানমন্ত্রীর সফর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দুই দেশের সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।বন্ধুপ্রতিম দেশ কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হলো। সফরকালে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের ব্যাপারেও কথা হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিচারে বাংলাদেশ কুয়েতের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও আমাদের অগ্রগতিও কম নয়। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা গেলে দুই দেশই উপকৃত হবে। কারণ আমাদের ওষুধ, সিরামিক সামগ্রী, হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়ার তৈরি পণ্যের মান উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ খাতও এখন অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নতির রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। আমরা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। তাদের আয়ের অর্থ দেশে পাঠানোর ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তাই কুয়েতসহ সম্ভাবনাময় অন্যান্য দেশে জনশক্তি রফতানি আরও বৃদ্ধির ব্যাপারে আমাদের আন্তরিক চেষ্টা থাকতে হবে। কারণ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসার শ্লথগতি দৃশ্যমান।২০০৬ সালে কুয়েতের তৎকালীন আমিরের ঢাকা সফরে ১০০ কোটি ডলার খরচে বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বিষয়টি একপর্যায়ে থেমে যায় এবং এবারও তাতে অগ্রগতি আসেনি। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যেহেতু এখন আরও ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে, আলোচনা চালিয়ে গেলে নিশ্চয়ই একদিন সাফল্য আসবে।চুক্তির সুফল লাভ যাতে দ্রুত হয় সে ব্যাপারে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। কুয়েত শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণতর হলে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবশ্যই তা বড় অবদান রাখবে। সেই লক্ষ্যে পেশাদারি ও দেশপ্রেমবোধ নিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে।
×