ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আলীকে নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের স্মৃতিচারণ

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১২ জুন ২০১৬

আলীকে নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের স্মৃতিচারণ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সাধারণ মানুষের স্মৃতিপটে থাকবেন গভীরভাবেই কিংবদন্তী বক্সার মোহাম্মদ আলী। বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ আলীকে স্মরণ করে ‘মানুষ’ হিসেবে আলীর জীবনাচরণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন। বক্সিং রিংয়ের গ-িতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি আলী। গত ৩ জুন শ্বাসকষ্টে ভুগে ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণের পর বিশ্বের সকল ক্রীড়াজগতই শোকস্তব্ধ হয়েছে। আর সে জন্যই আলীর শেষকৃত্যের দিনে ক্রিকেট মক্কা খ্যাত লর্ডসে ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার মধ্যে চলমান তৃতীয় টেস্টে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হলো তাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার স্যার গারফিল্ড সোবার্সের সঙ্গে আলীর অতীত সাক্ষাতের দিকগুলো বিভিন্নভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে মাঠে। আর সোবার্স তার স্মরণে বিশেষ এক ঘণ্টাও বাজিয়েছেন। বিভিন্ন রাষ্ট্র, সমাজ আর প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে একেবারে গণমানুষের কাছে নিদারুণ শ্রদ্ধার ব্যক্তিত্ব ছিলেন মোহাম্মদ আলী। এ কারণেই সর্বস্তরের মানুষের ঢল ছিল কেন্টাকি রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর লুইসভিলে। এই শহরেই জন্ম এবং বক্সার হিসেবে নিজেকে আবির্ভূত করেছিলেন আলী। বক্সিং কিংবদন্তি আলীকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন তাকে অভিহিত করেছেন ‘গণমানুষের মানবিক অধিকার সংরক্ষণের সার্বজনীন যোদ্ধা’ হিসেবে। শুক্রবার আলীর শেষকৃত্যানুষ্ঠানটি ছিল দারুণ মর্মন্তুদ। তার বাড়ি থেকে কেভ হিল কবরস্থানে নেয়ার রাস্তার প্রতিটি ইঞ্চিতে ছিল মানুষের মিছিল। লুইসভিল এ্যারেনায় আগতদের উদ্দেশ করে কথা বলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন, কৌতুক অভিনেতা বিলি ক্রিস্টাল, আলীর স্ত্রী লোনি এবং পরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরা। ক্লিনটন বলেন, ‘আমাদের সবার জীবনই একেকটা যেন আলীর গল্প। আমাদের সবার জন্য তিনি ছিলেন অনেক বড় একটা উপহার এবং অবশ্যই সবচেয়ে বেশি মর্যাদা পাওয়া উচিত তার। তিনি ছিলেন গণমানুষের মানবিক অধিকার সংরক্ষণের সার্বজনীন এক যোদ্ধা। অথচ তিনি আমাদের অনেক আনন্দ দিয়েছিলেন। বিশ্বস্ত একজন সত্যবাদী মানুষ হিসেবে সবসময়ই আলীর কথা আমি চিন্তা করব।’ কমেডিয়ান ক্রিস্টাল আলীর এই শেষ বিদায়ের দিনেও এসেছিলেন কিছু আনন্দ রসাত্মক কথা নিয়ে। তার চোখেমুখেও ফুটে ছিল কৌতুক। তিনি উপস্থিত হওয়া মানুষকে হাসানোরও প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ক্রিস্টাল আলীকে প্রকৃতি মাতার বিস্ময়কর বিজলি-বজ্র হিসেবে অভিহিত করে বলেন কিংবদন্তি এ বক্সার ছিলেন সৌন্দর্য আর শক্তির চমৎকার এক সমন্বয়।’ শোকসন্তপ্ত আলীর গুণগ্রাহীরা ওই সময় তার নামে বিলাপ শুরু করে দেন এ সময় মঞ্চে উঠে আলীর স্ত্রী লোনি বলেন, ‘মোহাম্মদ আলী যদি নিয়ম না মানতেন, তাহলে সেগুলো নতুন করে লিখতেন। তার ধর্ম, নাম, বিশ্বাস সবই ছিল নিজস্ব কায়দার। সেজন্য যে কোন মূল্য দিতে প্রস্তুত ছিলেন তিনি।’ আলীর শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ধর্মীয় গুরু ও সাংবাদিকও। ক্রীড়া সাংবাদিক ব্রায়ান্ট গামবেল বলেন, ‘তিনি সব বয়সের মানুষের জন্যই উদাহরণ। তার মাহাত্ম্য বছরের পর বছর স্মরণীয় থাকবে। তিনি রিংয়ের ভেতরে সর্বকালের সেরা এবং নির্মম লড়াইয়েই শুধু অংশ নেননি, রিংয়ের বাইরেও ছিলেন সমালোচক এবং দুষ্টজনদের সামনাসামনি অকপট বিরুদ্ধাচরণকারী।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেলের পক্ষে বিবৃতি পাঠ করেন প্রেসিডেন্টের সিনিয়র পরামর্শক ভ্যালেরি জ্যারেট। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মোহাম্মদ আলীই হচ্ছেন আমেরিকা। মোহাম্মদ আলী সবসময়ই আমেরিকাই থাকবেন!’ সেন্ট স্টিফেন্স ব্যাপটিস্ট চার্চের প্রধান ধর্মযাজক কেভিন কসবি বলেন, ‘তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের অকৃত্রিম ভালবাসা দেয়ার সাহস দেখিয়েছেন, যে সময় কালোরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বললেও সমস্যায় পড়তেন।’ দীর্ঘদিনের বন্ধু জন রামসে বলেন, ‘আমরা যখন কোনকিছুই বুঝে উঠতে পারতাম না সেটার বিষয়ে আলীর ছিল কেতাদুরস্ত, আকর্ষণীয় ও ঐশ্বরিক মহিমাবিশিষ্ট মনোভাব।’ এভাবেই সবাই আলীকে স্মরণ করেছেন। তবে ১৯৬৬ সালে যখন কিংবদন্তি ক্রিকেট অলরাউন্ডার স্যার সোবার্সের সঙ্গে লর্ডসে দেখা হয়েছিল সেই স্মৃতিচারণ করে লুইসভিলে উপস্থিত থাকতে পারেননি সোবার্স। কিন্তু লর্ডসে ঠিকই ছিলেন। শুক্রবার ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের মধ্যাহ্ন বিরতি শেষে খেলা শুরুর ৫ মিনিট আগে বিশেষ একটি ঘণ্টা বাজান সোবার্স। এছাড়া সোবার্সের সঙ্গে আলীর সাক্ষাতের কিছু দুর্লভ ছবি সে সময় দেখানো হয়েছে লর্ডসের জায়ান্ট স্ক্রিনে।
×