ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নৌপথের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১২ জুন ২০১৬

নৌপথের বেহাল দশা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বর্ষা মৌসুম আসন্ন। এখন মুসলমান ধর্মের পবিত্র রমজান মাস। একমাস পরই সবয়েছে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। প্রতিবছর ঈদের মৌসুমে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। তাদের যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। এবার ভরা বর্ষা মৌসুমে ঈদ-উল-ফিতর হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে এবার দখিনের যাত্রীদের ফিরতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, মনিটরিং ছাড়াই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে বেপরোয়া নৌযান চলাচল করছে। মেঘনার ডেঞ্জার জোন থেকে শুরু করে ঢাকা-বরিশাল রুটে নৌযান চলাচল করছে ইচ্ছামাফিক। ফলে প্রায় বছরই বর্ষা ও ঈদ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। নৌ-দুর্ঘটনার পর পরই বিআইডব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরসহ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তৎপরতা শুরু করলেও পরে সবকিছুই থমকে দাঁড়ায়। নৌযান মালিকরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নৌযান পরিচালনা করতে থাকে। ১৫ মার্চের পর মেঘনার ডেঞ্জার জোনে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও মালিকরা তা তোয়াক্কা করে না। দৌলতখান-আলেকজান্ডার, মনপুরা-হাতিয়া, বেতুয়া-তজুমদ্দিন-ইলিশা-মজু চৌধুরীরহাট, মীর্জাকালু ও হাকিমউদ্দিনসহ বিভিন্ন রুটে চলে অবৈধভাবে একতলা লঞ্চ। এসব রুটে এ মৌসুমে সি-ট্রাক চলাচলের কথা থাকলে তা কৌশলে বিকল দেখিয়ে পরিচালনা করা হয় একতলা লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। গত বছরও বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরায় যাত্রীবাহী ট্রলারডুবিতে দশজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বর্ষা মৌসুমে ওই রুটে ট্রলারে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না। ইতোপূর্বে বর্ষা মৌসুমে ‘কেয়ারি সিন্দাবাদ’, ‘সন্দীপ’, ‘কুতুবদিয়া’ জাহাজ দক্ষিণাঞ্চলের ডেঞ্জার জোনে পরিচালনা করা হয়। গত কয়েক বছর এগুলো দেখা যাচ্ছে না। বে-ক্রসিং জাহাজের পরিবর্তে চলছে ছোট ছোট একতলা লঞ্চ। বিআইডব্লিউটিসি এসব রুটে পর্যাপ্ত সি-ট্রাক দিতে ব্যর্থ। কয়েকটি হাতেগোনা সি-ট্রাক থাকলেও ইজারাদার তা বিকল দেখিয়ে ইচ্ছামাফিক ছোট নৌযান পরিচালনা করে আসছে। মানুষ বাধ্য হয়ে অবৈধ নৌযানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় না থাকার সুযোগে প্রভাবশালী নৌযান মালিকরা এ মৌসুমে যাত্রী জিম্মি করেই হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অর্থ। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঢাকা-বরিশাল রুটে রোটেশন পদ্ধতিতে চলাচল করছে দোতলা লঞ্চ। আরও জানা গেছে, ঢাকা ও বরিশাল উভয়প্রান্ত থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র রুট পারমিট অনুযায়ী প্রতিদিন ৭-৮টি করে লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও যাত্রীদের জিম্মি করে উভয়প্রান্ত থেকে ৪-৫টি করে লঞ্চ পরিচালনা করা হয়। এতে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি দক্ষ মাস্টার, সুকানি ও ড্রাইভার ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে এ অঞ্চলের নৌপথে দীর্ঘদিন লঞ্চ চলাচল করছে। বিআইডব্লিউটিএ’র হিসাব মতে দক্ষিণাঞ্চলে নৌ-রুট ৮৮টি। এর মধ্যে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি নৌযান চলাচল করে ৪৩টি রুটে। বাকি অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে চলে এমএল টাইপের একতলা ছোট লঞ্চ। সরকারী হিসাব মতে, প্রতিদিন নৌপথে এ অঞ্চল থেকে যাতায়াত করে দেড় লাখের বেশি যাত্রী। এসব রুটে শতাধিক লঞ্চের ফিটনেস সার্টিফিকেট রয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়।সেখানেও ট্যাক্স ফাঁকির জন্য যাত্রী পরিবহন কম দেখানো হয়। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী ‘সুন্দরবন-৭’ লঞ্চে বয়া আছে মাত্র ১৫৩টি। যাত্রী ধারণক্ষমতা সরকারী হিসেবে ৯৯০ জন, কিন্তু কখনই অধিক যাত্রীর নিচে ওই লঞ্চটি গন্তব্যে রওয়ানা হয় না। ‘সুরভী-৭’ লঞ্চে বয়া আছে ১০৭টি, যাত্রী ধারণক্ষমতা ১ হাজার ২৫০ জন। ‘সুরভী-৬’ লঞ্চে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৮৯০ জন। বয়া আছে ১২৫টি।কীর্তনখোলা-১ লঞ্চের ধারণক্ষমতা ৭১৫ জন, বয়া আছে একশ’টি। নিয়ম অনুযায়ী চার যাত্রীর জন্য একটি করে বয়া থাকার কথা। বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর বহরে যুক্ত হয়েছে ‘কীর্তনখোলা-২’ ও ‘সুরভী-৯’ নামে আরও দু’টি লঞ্চ। লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের উঠতে হয় আল্লাহর ওপর ভরসা করে। নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলোর মতই একতলা লঞ্চগুলো চলাচল করছে এ অঞ্চলে বড় বড় নদীতে। অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী অর্ধেক লঞ্চেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাস্টার ও ড্রাইভার নেই। লঞ্চগুলো চালায় খালাসী ও হেলপাররা।
×