ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিমন্ত্রী এবার নামছেন অনিবন্ধিত সিম ধরার বিশেষ অভিযানে

তিন কোটির বেশি সিমের নিবন্ধন হয়নি, অধিকাংশই চালু

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১২ জুন ২০১৬

তিন কোটির বেশি সিমের নিবন্ধন হয়নি, অধিকাংশই চালু

ফিরোজ মান্না ॥ তিন কোটিরও বেশি সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতির আওতায় আসেনি। এগুলোর বেশিরভাগই এখনও চালু রয়েছে। অনিবন্ধিত সিম বন্ধ করার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও ওই নির্দেশ মানছে না অপারেটররা। এবার প্রতিমন্ত্রী অনিবন্ধিত সিম ধরার জন্য বিশেষ অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন। অনিবন্ধিত সিম ধরা পড়লে প্রতি সিমে ৫০ মার্কিন ডলার করে জরিমানা দিতে হবে আপারেটরদের। অনিবন্ধিত সিম চালু রাখতে অপারেটরদের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। মোবাইল সিম পুনর্নিবন্ধনের মহাকর্মযজ্ঞ ঘটা করে ইতি টানা হয়েছে গত ৩১ মে। এই সময় পর্যন্ত ১১ কোটি ৬০ লাখ সিম পুনর্নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। গ্রাহকের হাতে থাকা আরও প্রায় তিন কোটি সিম নিবন্ধন হয়নি। যেসব মোবাইল অপারেটরের সিম প্রি-এ্যাক্টিভ রয়েছে ওই সব সিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিমন্ত্রী বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রি-এ্যাক্টিভ সিম অথবা ভেরিফাইড না করা সিম বন্ধ না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে সিমপ্রতি ৫০ মার্কিন ডলার করে জরিমানা করা হবে। টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর পর ৩১ মে পর্যন্ত ১১ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক তাদের সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনর্নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় প্রি-এ্যাক্টিভ সিম বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া গ্রাহকের হাতে থাকা আরও তিন কোটি সিম অপারেটররা বন্ধ করার কথা জানালেও তারা তা করেনি। এখন অনেক অনিবন্ধতিত সিম চালু রয়েছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যই এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে সব অনিবন্ধিত সিম দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকা- ও অবৈধ ভিওআইপি থেকেই যাবে। তাই যে করেই হোক এসব সিম বন্ধ করতে হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোন মোবাইল অপারেটরকে ছাড় দেয়া হবে না। আগামী সপ্তাহ থেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর (পুলিশ-র‌্যাব) বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হবে। কোথাও কোন প্রকার অনিবন্ধিত সিম বা প্রি-এ্যাক্টিভ সিম সিম বন্ধ না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে সিমপ্রতি ৫০ মার্কিন ডলার করে জরিমানা করা হবে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের পর মোবাইলে অপরাধের মাত্রা অনেক কমে এসেছে বলেও প্রতিমন্ত্রী বলেন। প্রতিদিন শুধু গুলশান থানাতেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ জমা হতো সর্বনিম্ন ২০টি। সেখানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন সম্পন্ন করার পর গত ১ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত মাত্র একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। একই সঙ্গে বিটিআরসির হিসাব মতে, ১-৭ জুন পর্যন্ত অবৈধ ভিওআইপির পরিমাণ নজিরবিহীনভাবে কমে গেছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। কার নামে কোন অপারেটরের কতটি সিম পুনর্নিবন্ধিত হয়েছে তা ৭ জুলাই থেকে মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। এ বিষয়ে কাজ হচ্ছে। এখন আর কেউ ইচ্ছে করলেও নিবন্ধিত সিম দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকা- ও অবৈধ ভিওআইপি করতে পারবে না। সূত্র জানিয়েছে, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে অনিবন্ধিত মোবাইল সিম নিষ্ক্রিয় হলেও তা সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন করে পুনরায় চালু করতে পারবেন গ্রাহকরা। নিষ্ক্রিয় হওয়ার দিন থেকে ৫৪০ দিনের মধ্যে তা না করলে ওই গ্রাহক তার সিমের স্বত্ব হারাবেন। ওই সিম অপারেটর অন্য যে কারও কাছে বিক্রি করতে পারবে। আগের নির্দেশনায় নির্ধারিত সময়ের পর অনিবন্ধিত সিম টানা দুই মাস বন্ধের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও অপারেটরদের নতুন নির্দেশনা পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এদিকে অনিবন্ধিত সিমের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করার আবেদন জানিয়ে একই দিন আদালতে একটি আবেদন করা হয়েছে অপারেটরদের পক্ষ থেকে। দেশে গ্রাহকের হাতে থাকা প্রায় ১৩ কোটি ২০ লাখ সিমের মধ্যে ১১ কোটি ৬০ লাখ সিম নিবন্ধিত হয়েছে। বাকি সিমগুলো নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে। বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযাগ বিভাগ থেকে আগে ঘোষণা ছিল, অনিবন্ধিত সিম বন্ধ হয়ে গেলে তা টানা দুই মাস বন্ধ থাকবে। এ সময় সিম উঠানো যাবে না বা কেনা যাবে না। দুই মাস পর সেই সিম কিনে নিতে হবে গ্রাহককে। কিন্তু এই ঘোষণা অপারেটররা মানছে না। তারা অনিবন্ধিত সিম নির্দিষ্ট ফি নিয়ে চালু করছে। আর বহু সিম বন্ধই করেনি। বিষয়টি জেনে বিটিআরসি বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন কার্যক্রমে অনিবন্ধিত সিম বা রিম চালু করার চারটি বিষয় উল্লেখ করে অপারেটরদের নতুন নির্দেশ পাঠিয়েছে।
×