ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া-এরশাদ সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু বিভাজন সৃষ্টি করেছেন

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১২ জুন ২০১৬

জিয়া-এরশাদ সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু বিভাজন সৃষ্টি করেছেন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ লেখক, সাংবাদিক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ধর্মরিপেক্ষতা ও ’৭২-এর সংবিধানের ক্ষেত্রে কোন আপোস নয়। তিনি বলেন, ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ও পরে এরশাদ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অন্তর্ভুক্ত করে দেশে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। যতদিন পর্যন্ত দেশে ’৭২ সালের সংবিধান পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হবে ততদিন পর্যন্ত সংখ্যালঘু শব্দ থেকেই যাবে। তিনি বলেন, এ দেশে বারবার সংখ্যালঘুরা হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু লোক দেশান্তরী হয়েছেন। তিনি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি আনুপাতিক হারে সংখ্যালঘুদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি করেন। সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া এই বাংলাদেশ বেশিরভাগ সময় শাসিত হয়েছে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর দ্বারা। তিনি সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগ না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশ ছেড়ে যাওয়া সমস্যার সমাধান নয়। এই দেশ আপনাদের পিতৃভূমি। আর জামায়াত-হেফাজতীদের পিতৃভূমি পাকিস্তান। তারা পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী। পাকিস্তান তাদের মাতৃভূমি। তাই তাদেরই দেশত্যাগে বাধ্য করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর জিয়াউর রহমান অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সংবিধানকে ইসলামিক সংবিধান বানানোর চেষ্টা করেন, যার শেষ পেরেকটি ঠোকেন সাবেক প্রেসিডেন্ট স্বৈরাচার এরশাদ। তিনি সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। আমরা এটি বাতিলের জন্য মামলা করেছি। হাইকোর্ট মামলাটি খারিজ করেছে। সুপ্রীমকোর্টে আপীল করা হয়েছে। এই সরকারের আমলেই সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে অপসারণ করা হবে বলে আশা করি। শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের শেষ ভরসা। তার সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তিনি করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। তিনি সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংখ্যাগুরুদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শক্তি বাড়াতে হবে। এজন্য বিভিন্ন পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়ে কমিটি গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি শনিবার দুপুরে খুলনার বিএমএ ভবন মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি খুলনা আয়োজিত ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে এসব কথা বলেন। সংগঠনের খুলনা শাখার সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে সভার আলোচনায় অংশ নেনÑ বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. অনির্বাণ মোস্তফা, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ইউনুস আলী ইনু এবং সমকালীন তথ্যনির্ভর নিবন্ধ উপস্থপান করেন সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্র নাথ সেন। আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথি বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক বলেন, আমরা মনে করেছিলাম ’৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ধর্মীয় মৌলবাদের শ্মশান হয়েছে। কিন্তু আমাদের সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। খন্দকার মোশতাক ও জিয়া পাকিস্তানপ্রেমী ছিল। তারা ক্ষমতায় এসে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়। যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জিয়ার সহায়তায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। তাদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। জামায়াতীদের আর্থিক ভিত ধ্বংস করে দিতে হবে। জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা পাকিস্তানের পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে পারেনি। তিনি বলেন, শুধু জামায়াত নয়, বিএনপিও পাকিস্তানপন্থী দল। বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল আজ রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তবে এখন কেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্যাতনের শিকার হবে। এটা মেনে নেয়া যায় না।
×