ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অভিভাবকরাও যোগ দিলেন, কাকরাইলের রাস্তা বন্ধ

৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল দাবিতে আন্দোলন জোরদার

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১২ জুন ২০১৬

৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল দাবিতে আন্দোলন জোরদার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি বছরই পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চলমান আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। আন্দোলনে নেমেছেন রাজধানীর নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী ও তাদের উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। ভিকারুননিসা নূন, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের পর এবার রাস্তায় নেমেছেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজের অভিভাবকরা। পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে শনিবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন তারা। এ সময় কাকরাইলে প্রতিষ্ঠানটির সামনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। গত সপ্তাহে একই দাবিতে প্রথমে অভিভাবকরা ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। কর্মসূচীতে অভিভাবকরা বলেছেন, শিশুর মানসিক বিকাশে এবং হয়রানি থেকে বাঁচতে এ পরীক্ষা বাতিল করতে হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কিছু বোঝার আগেই তাদের পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। এ পরীক্ষা শারীরিক ও মানসিক চাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা আরও বলেন, যেহেতু সরকার ইতোমধ্যে পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেহেতু এ সিদ্ধান্ত এ বছর থেকেই কার্যকর করতে হবে। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অভিভাবক দিলারা আক্তার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আমাদের দাবিগুলো সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। ভিকারুননিসা নূনের কর্মসূচী থেকে এ বছরই পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করার দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন কর্মসূচীতে অভিভাবকরা বলেন, ২০০৯ সালে প্রবর্তিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বিগত ৭ বছরের মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের কাক্সিক্ষত সুফল বয়ে আনতে পারেনি। বরং এ পরীক্ষার যাঁতাকলে কোমলমতি শিশুরা বনসাই হয়ে বেড়ে উঠছে। পরীক্ষার নামে শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত। এ পরীক্ষায় কেড়ে নিচ্ছে শিশুদের মূল্যবান সময় ও আনন্দময় শৈশব। একই দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অভিভাবকরা। বুধবার এ দাবিতে প্রতিষ্ঠানের ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছেন কয়েক শত অভিভাবক। আইডিয়ালে এই আন্দোলনের আহ্বায়ক সালমা আক্তার বলেন, আমরা সব সময় বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তায় থাকি। সরকার বিষয়টি স্পষ্ট করছে না। এই সিদ্ধান্তে বাচ্চারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই পরীক্ষার জন্য তাদের আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়, যার ফলে তাদের ওপর মানসিক টর্চার চলে। রমজান মাসেও তাদের নিয়ে প্রতিদিন কোচিং করাতে হচ্ছে। এই সার্টিফিকেটের যদি কোন মূল্যায়নই না থাকে তবে এই বছর কেন আমাদের বাচ্চারা পরীক্ষা দেবে। ২০১৬ সালের পরীক্ষা বাতিল না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন এ অভিভাবক। আরেক অভিভাবক মুন্নি আক্তার বলেন, আমরা মন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়ে বলতে চাই চলতি বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করুন। অন্যথায় আমরা লাগাতার আন্দোলনে যাব। এর আগে গত মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ায় পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে চলতি বছর, নাকি আগামী বছর থেকে পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা তুলে দেয়া হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালু হওয়ায় তা বিলুপ্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও মন্ত্রিসভা থেকেই নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা চাই প্রাথমিক সমাপনী একটি হবে, আর তা অষ্টম শ্রেণীতে। অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষা শেষে আমরা শিক্ষার্থীদের সনদ দেব। মন্ত্রী বলেন, যেহেতু মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত হয়েছিল তাই উভয় মন্ত্রণালয়ের (শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা) একটি মতামত সেখানে (মন্ত্রিসভায়) যাবে। সমাপনী একটা, না দুটো হবে- মন্ত্রিসভা সেই সিদ্ধান্ত দেবে। তবে আমরা চাইব যে প্রাথমিকে যেন একটাই সমাপনী পরীক্ষা থাকে। চলতি বছর পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা হবে কিনা- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, চেষ্টা করছি কত দ্রুত এটা করতে পারি। এখনও ছয় মাস সময় আছে। এ বছরই যেন বাস্তবায়ন করতে পারি সে চেষ্টা করব। এখন থেকে প্রস্তুতি নিলে এটা বাস্তবায়ন করতে পারব।
×