ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১২ জুন ২০১৬

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মাহে রমজানের আজ ষষ্ঠ দিবস। মাহে রমজানুল মুবারক তালীম ও তরবিয়াতের মাস। তিলাওয়াত ও তারাবিহের মাস। মহান আল্লাহ পাক এ মাসকে কোরান নাযিলের মাস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বলা হয়েছে : রমজান মাস, যে মাসে কোরান নাযিল হয়েছে- যা মানব জাতির হিদায়াত বা পথনির্দেশক -সূরা বাকারা। এ থেকে বোঝা যায়, এ মাস মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার পেছনে বড় কারণ- এটি নুযুলে কোরানের মাস। আর কোরান হচ্ছে: মানব জাতির হিদায়াতের চিরন্তন উৎস। তাই আমরা এ মাসে কোরান তিলাওয়াত করে এ মাসকে মহিমান্বিত করব এবং ইবাদতের এ অখ- সময়ে তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে ইসলামী অনুশাসন পালনে নির্ভুল গবেষণায় ব্রতী হব। তদুপরি এ মাসে কোরান তিলাওয়াতে রয়েছে বেশি পরিমাণে সাওয়াবের ঘোষণা। হাদিসে এসেছে, এ মাসে প্রতি নফল নামাজের সাওয়াব ফরজ ইবাদতের সমান আর প্রতিটি ফরজ ইবাদতের সাওয়াব সত্তর গুণ বেশি। কোরান তিলাওয়াত হচ্ছে নফল ইবাদতের মধ্যে সেরা ইবাদত। তাই আমরা কোরান তিলাওয়াত করে অধিক সাওয়াব ও সৌভাগ্য অর্জন করতে পারি। হযরত ইবনে ওমর (রা) বলেন, হুজুরে আকরাম (স) ফরমায়েছেনÑ লোহায় পানি লাগলে যেরুপ মরিচা পড়ে তদ্রুপ মানুষের কলবের মধ্যেও মরিচা পড়ে যায়। তখন একজন জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইহা পরিষ্কার করার উপায় কি? হুজুর (স) উত্তর দিলেনÑ মৃত্যুকে বেশি বেশি করে স্মরণ করা ও কোরানে পাক তিলাওয়াত করা। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত মুহম্মদ (স) বলেছেন: আমি তোমাদের নিকট দুই প্রকার নসিহত রেখে যাচ্ছি। এক প্রকার, যে তোমাদের সঙ্গে আলোচনায়রত আর অন্যটি হলো নীরব নিস্তব্ধ। প্রথমটি হলো আল্লাহর কালাম, দ্বিতীয়টি হলো মৃত্যুর স্মরণ। হযরত হাসান বসরী (রহ) বলেন, পূর্বেকার লোকেরা কোরান শরীফকে শাহী ফরমান মনে করত। তাই সারারাত তার ওপর চিন্তা, ফিকির করত এবং দিনেরবেলায় তদনুযায়ী আমল করত। আর বর্তমান জামানায় তোমরা জের, জবর ও অক্ষরসমূহকে বেশ দুরস্ত করছ, কিন্তু ওটাকে শাহী ফরমান মনে করছ না। কাজেই উহাতে চিন্তা ফিকিরও করছ না। এখানেই সমস্যা। হযরত আয়েশা (রা) বলেন, হুজুর পাক (স) ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক জিনিসের জন্য এক একটি গর্বের বস্তু আছে; যা দ্বারা সে গর্ব করে থাকে। আর আমার উম্মতের গৌরব ও গর্বের বস্তু হলো আল-কুরআন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (র) আল্লাহ তায়ালাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনার দরবারে নৈকট্য লাভের জন্য সবচেয়ে বড় উছিলা কি? উত্তর আসল: অহমদ! সেটা আমার কালামÑ কোরান শরীফ। আমি আরজ করলাম বুঝে পড়লে, নাকি না বুঝে পড়লে? ইরশাদ হলো: বুঝে পড়ুক বা না বুঝে পড়ুক উভয় অবস্থায়ই নৈকট্যের উছিলা। হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা) বলেন, হুজুর পাক (স) ইরশাদ করেছেন: রোজা ও কোরান বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনেরবেলায় খানাপিনা হতে বিরত রেখেছি। কাজেই তার বিষয়ে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। আর কোরান বলবে, হে আল্লাহ পরওয়ারদিগার! তাকে আমি রাত্রিবেলায় নিদ্রা হতে বিরত রেখেছিÑ তারাবিহ ও তিলাওয়াতে মশগুল রেখেছি। কাজেই তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক উভয়ের সুপারিশ কবুল করবেন। এছাড়া কোরানের তালিম ও বিশুদ্ধ কোরান প্রশিক্ষণের একটি মোক্ষম সুযোগ হিসেবেও আমরা এ সময় কাজে লাগাতে পারি। নবীজী স্বয়ং এ দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রেখে গেছেন। হাদিস শরীফে রয়েছে : মাহে রমজান আসলে আমাদের নবীজী হুজুরপুর নূর (স) ও হযরত জিব্রাইল (আ) পরস্পর সামনাসামনি নামাজের সুরতে বসতেন এবং একজন কোরান শরীফ তিলাওয়াত করতেন অন্যজন শুনতেন। ফলে কোরান শরীফের বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের অমিয় ধারার সূচনা হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কোরানের তিলাওয়াতের অবারিত এ সুযোগ কাজে লাগানোর তওফিক দান করুন, আমি।
×