ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এদের মধ্যে ১০ জন দ-প্রাপ্ত

যুদ্ধাপরাধ মামলার ৮৪ আসামি পলাতক

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১২ জুন ২০১৬

যুদ্ধাপরাধ মামলার ৮৪ আসামি পলাতক

আরাফাত মুন্না ॥ যুদ্ধাপরাধ মামলার ৮৪ আসামি পলাতক রয়েছে, যাদের মধ্যে ১০ জনকে ইতোমধ্যে দ- দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এসব আসামিকে গ্রেফতার করতে সরকারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে ট্রাইব্যুনালে। এছাড়া অভিযোগ তদন্তাধীন আছে এমন সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে পালিয়ে আছে ৩৮ জন। গত ছয় বছরে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ২৩ মামলার রায়ে ৩১ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসিসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, পলাতকদের গ্রেফতারের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আসামিদের মধ্যে যারা বিদেশে পালিয়ে আছে, তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ কাজ করছে। এছাড়া ট্রাইব্যুনালে বেশ কয়েক পলাতক আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ছয় যুদ্ধাপরাধীর চূড়ান্ত দ- কার্যকর হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ছয়টি মামলার বিচার চলছে। এছাড়া ২৬টি মামলায় ৭৫ জনের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্মান্তকরণসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ শতাধিক অভিযোগ জমা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে পলাতক রয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে অনেক আসামি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশত্যাগ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে পলাতকদের বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনাল একাধিকবার তদন্ত সংস্থার ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। মামলার বিচারের শুরুতেই রাজধানীর উত্তরা থেকে পালিয়ে যান জামায়াতের আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার। পিরোজপুরের সাবেক এমপি জাতীয় পার্টি নেতা জব্বার ইঞ্জিনিয়ার ও ফরিদপুরের বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড এলার্ট জারির পরও তাদের গ্রেফতার করা যায়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানায়, ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত যেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে, তাদের মধ্যে ১০ জন পলাতক রয়েছে। এরা হলো- আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, আলবদর নেতা গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরের আশরাফুজ্জামান খান, ফেনীর চৌধুরী মাঈনুদ্দীন, নগরকান্দার সাবেক পৌর চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকার, পিরোজপুরের আবদুল জব্বার ইঞ্জিনিয়ার, নেত্রকোনার সৈয়দ মোঃ হাসান আলী, কিশোরগঞ্জের চার রাজাকার ক্যাপ্টেন (অব) নাসিরউদ্দিন আহমেদ, গাজী আবদুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম। এর মধ্যে আবদুল জব্বারকে আমৃত্যু কারাদ- ও অন্য নয়জনের মৃত্যুদ-াদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে যাদের তাদের মধ্যে পলাতক ৩৬ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে যেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চলছে, তাদের মধ্যে পলাতক ৩৬ জন হলেন- জামালপুরের আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ হোসেন, আবদুল মান্নান, আবদুল বারী, হারুন ও আবুল হাশেম; হবিগঞ্জের মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া; কিশোরগঞ্জের নাসির উদ্দিন, গাজী আবদুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আযহারুল ইসলাম; যশোরের ইব্রাহিম হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবুর, আজিজ সরদার, কাজী ওহিদুল ইসলাম, আবদুল খালেক মোড়ল ও মশিয়ার রহমান; সাভারের আবুল কালাম; লক্ষ্মীপুরের ইউসুফ; ঢাকার আবদুল কুদ্দুস, সৈয়দ মোহাম্মদ হুসাইন ও জয়নাল আবেদীন এবং কক্সবাজারের মৌলভি জাকরিয়া সিকদার, অলি আহমদ, জালাল উদ্দিন, সাইফুল ওরফে সাবুল, মমতাজ আহম্মদ, হাবিবুর রহমান, আমজাদ আলী, আবদুল মজিদ, আবদুস শুক্কুর, জাকারিয়া, মৌলভি জালাল, আবদুল আজিজ ও ইদ্রিস আলী সরদার। পলাতক সন্দেহভাজন ৩৮ জন ॥ অভিযোগ তদন্তনাধীন রয়েছে এমন ৩৮ জন পালিয়ে আছেন। তাদের মধে আছেন, নেত্রকোনার খালেক তালুকদার, কবির খান, নূর উদ্দিন, সালাম বেগ ও শেখ মোঃ এ মজিদ; মৌলভীবাজারের শামছুল হক, নেছার আলী, মোবারক মিয়া, ফখরুজ্জামান, আবদুস সাত্তার, খন্দকার গোলাম রব্বানী, আবদুন নূর তালুকদার, আনিস মিয়া ও আবদুল মুছাব্বির মিয়া; ময়মনসিংহের ওয়াজউদ্দিন; গাইবান্ধার সাবেক এমপি জামায়াত নেতা আবু সালেহ মোঃ আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, নাজমুল হুদা, রুহুল আমিন মঞ্জু, আবদুল লতিফ ও আবু মুছলিম মোহাম্মদ আলী; দিনাজপুরের আবদুর রহিম মিয়া; জামালপুরের বেলায়েত হোসেন, নাসির উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেন; ময়মনসিংহের কাজী বদরুজ্জামান; গাইবান্ধা সদরের আবদুল জব্বার ম-ল, জাসিজার রহমান ওরফে খোকা, আবদুল ওয়াহেদ ম-ল, মমতাজ আলী বেপারী, আজগর হোসেন খান ও মোঃ রঞ্জু মিয়া; হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মোঃ লিয়াকত আলী; কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী; আটপাড়ার খলিলুর রহমান এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী বিএনপি নেতা কিশোরগঞ্জের ড. ওসমান ফারুক। যুদ্ধাপরাধ মামলায় পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশও নিয়মিত মনিটরিং করছে। বিদেশে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।
×