ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের সম্মেলন পিছিয়ে ২২ ও ২৩ অক্টোবর

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১২ জুন ২০১৬

 আওয়ামী লীগের সম্মেলন পিছিয়ে ২২ ও ২৩ অক্টোবর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দ্বিতীয় দফা পেছালো আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। বৈরী আবহাওয়া, বর্ষা এবং ঈদের কারণে নির্ধারিত ১০ ও ১১ জুলাই সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর সম্মেলনের নতুন তারিখ ঠিক হয়েছে। এবারের সম্মেলনে দলের সভাপতিম-লী, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকম-লীর পদ সামান্য বাড়ানো হবে। সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও সম্মেলন প্রস্তুতি উপ-কমিটির সদস্যদের সঙ্গে যৌথসভায় এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। সে অনুযায়ী গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। গত ৯ জানুয়ারিতে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বর্তমান কমিটির মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে ২৮ মার্চ জাতীয় সম্মেলনের প্রথম তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণ দেখিয়ে প্রথম দফায় তা পিছিলে ১০ ও ১১ জুলাই সম্মেলনের চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করা হয়। নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করতে গঠিত ১১টি উপ-কমিটি গত প্রায় এক মাস ধরে বিরামহীন বৈঠক করে প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও পবিত্র ঈদের ছুটির ফাঁদে এই সম্মেলন যথাসময়ে সম্পন্ন করার ব্যাপারে কিছুটা হলেও সংশয় ছিল কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের মধ্যে। শনিবারের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা উঠলে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়েই দ্বিতীয় দফার মতো কাউন্সিল পিছিয়ে নতুন এই তারিখ ঘোষণা করা হয়। এ কারণে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদও শনিবারের বৈঠকে ৬ মাস বাড়ানো হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয় সভাপতির সূচনা বক্তব্যের পর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দলের দফতর সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। এরপরেই সম্প্রতি জাপানে অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারী ক্ষমতায়, টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্বনেতারা প্রশংসা করায় দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রস্তাব আনেন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক ডাকসু ভিপি আকতারুজ্জামান। এ সময় উপস্থিত নেতারা এই প্রস্তাবকে সর্বসম্মতিক্রমে স্বাগত জানিয়ে করতালি জানিয়ে দলীয় সভাপতিতে অভিনন্দন জানান। জানা গেছে, প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন সফল করতে গঠিত উপ-কমিটির নেতাদের কাছে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় উপ-কমিটির নেতারা তাঁদের কাজের সর্বশেষ রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল রহমান সম্মেলনের সময় কিছুটা পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব তুলে বলেন, পবিত্র রমজান মাসের পরই ঈদ হবে। এছাড়া হঠাৎ করেই চলছে বৈরী আবহাওয়া, ঝড়-বৃষ্টি। আর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সারাদেশের কাউন্সিলর, ডেলিগেটস ও নেতাকর্মীরা অনেক আনন্দ নিয়ে সম্মেলনে আসে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও ঈদের ছুটির পর এতবড় একটা সম্মেলন সর্বাত্মকভাবে সফল করা কিছুটা হলেও কঠিন। তাই সম্মেলনের সময় কিছুটা পিছিয়ে দিলেই ভাল হয়। এ প্রস্তাবকে সমর্থন করে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, সম্মেলনের নির্ধারিত ১০ ও ১১ জুলাইয়ের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামার ভেকেশন চলে। যে সময়ে বিদেশী ডেলিগেটরা খুব কম উপস্থিত হতে পারবেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা এমন আভাস দিয়েছেন। কিন্তু তারিখ পেছানো হলে অর্থাৎ শীতকালে করলে বিদেশী অতিথিদের উপস্থিতি বেশি হবে। বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। আরও ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা এ প্রস্তাবটি সমর্থন করে বলেন, রমজানের ঈদের পরপরই সম্মেলন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। কারণ ঈদের ছুটিতে দেশের বেশিরভাগ মানুষই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে উৎসব পালন করে। তাই ঈদের পরও এক সপ্তাহ রাজধানীতে ঈদের ছুটির আমেজ থাকে। ঈদের ছুটির মাত্র একদিন পরই আওয়ামী লীগের মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সম্মেলন করলে অনেক নেতাকর্মীই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন। আর বর্ষাকাল ওই সময়ে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর কোরবানি, হজ এবং দুর্গাপুজো রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে শোকের মাস আগস্ট। এ সবকিছুই বিবেচনা করা দরকার। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে পঞ্জিকা দেখে নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন। ঈদ, কোরবানি, হজ এবং শোকের মাস আগস্টের কথা বিবেচনা করে তিনি ২২ ও ২৩ অক্টোবর সম্মেলনের নতুন তারিখ প্রস্তাব করেন। বৈঠকে সর্বসম্মতক্রমে সম্মেলনের নতুন এই তারিখকে নির্ধারিত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদের আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক তাঁর রিপোর্টে বলেন, জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে সময়োপযোগী ও আধুনিক গঠনতন্ত্র দলের জন্য প্রয়োজন। আর বাস্তবতার নিরিখে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পরিধিও কিছুটা বাড়ানো প্রয়োজন। সেজন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৫ জন সভাপতিম-লী সদস্য থেকে বাড়িয়ে ১৭ করা, সাংগঠনিক সম্পাদক ৭ থেকে বাড়িয়ে ১০ করা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩ থেকে বাড়িয়ে ৫ করা, সাতটি বিভাগীয় শাখা থেকে ১০টি করা, সাংগঠনিক ইউনিটসহ বিভিন্ন শাখা বাড়ানোর প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও আলোচনা করে এ ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান। তিনি ইউনিয়ন ও পৌর নির্বাচনে দলের মনোনয়নের জন্য পৃথক একটি মনোনয়ন বোর্ডের বিষয়টি গঠনতন্ত্রে নতুন করে সংযোজনের জন্য আবদুর রাজ্জাককে নির্দেশ দেন। সম্মেলন প্রস্তুতির সাজসজ্জা উপ-কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সদস্য সচিব মির্জা আজম কাউন্সিলের জন্য নৌকার আদলে মূলমঞ্চের নকশার অনুমোদন করিয়ে নেন। সূত্র জানায়, সভায় দলের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, আমরা কেন দলের ২০তম সম্মেলনের কথা বলছি, এটা ২১তম সম্মেলন হবে। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনি যে বিশেষ সম্মেলনে ধরে এটা বলছেন সেটা ঠিক না। এবারের সম্মেলন ২০তমই হবে। বৈঠকে কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পিরোজপুর, বরিশাল, খুলনা, নড়াইলসহ প্রায় ১০টি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে বিভিন্ন উপ-কমিটির কাজের অগ্রগতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এইচটি ইমাম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফর উল্লাহ, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আকতারুজ্জামান, আবদুর রহমান, ড. আবদুর রাজ্জাক, ড. হাছান মাহমুদ, ক্যাপ্টেন (অব) তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
×