ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মিতু হত্যায় অন্যতম মূল আসামি গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১২ জুন ২০১৬

মিতু হত্যায় অন্যতম মূল আসামি গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম শাহজামান ওরফে রবিন (২২)। তাকে মূল আসামি হিসেবে চিহ্নিত করে শনিবার দুপুর থেকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে সিএমপি কার্যালয়ে। আজ রবিবার চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী রেকর্ড করার কথা রয়েছে। এ রেকর্ডের মধ্য দিয়েই মিতু হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িতদের ক্লু উদ্ঘাটিত হবে বলে আবু নসর গুন্নুর রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আজ। সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যার দিন সকালে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে কয়েক দফায় রাস্তার এপার-ওপার প্রদক্ষিণ করা ও মোবাইলে কথা বলে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি ভিডিওফুটেজে রেকর্ড হয়েছিল কয়েকজনের। এ রেকর্ড অনুযায়ী কয়েক দফায় রাস্তা পারাপার ছাড়াও রবিনের পরিধেয় বস্ত্রের ছবিও পুলিশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সর্বশেষ শনিবার সকালে তাকে গ্রেফতার করে। নগরীর বায়েজিদ থানাধীন শীতলঝর্ণা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম এলাকায়। তার বাবার নাম শাহজাহান। এ ব্যাপারে সিএমপি কমিশনার ইকবাল শনিবার সকালে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রবিনের সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ফুটেজ দেখেই তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তার হাঁটাচলাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এতে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে রবিন হত্যাকা-ে জড়িতদের একজন। আজ রবিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী রেকর্ড করার কথা রয়েছে। রবিন মূলত বেকার। কারও প্ররোচনায় সে এ হত্যাকা-ে জড়িয়েছে কিনাÑ সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাত্র ৮ম শ্রেণী পাস এই ছেলের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভাল না হলেও অপরাধের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়াও ভিডিওফুটেজে মোটরসাইকেলে তিন দুর্বৃত্তের ঘটনাস্থলে আগমন, হত্যাকা- ঘটানো ও বহির্গমনের চিত্র যেমন রয়েছে, তেমনি নগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে বাদুড়তলা এলাকায় পৌঁছানোর বিষয়টিও বিভিন্ন সিসি ক্যামেরায় ধারণ হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবর্তক মোড় থেকে মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা কালো মাইক্রোবাসটি অন্যদিকে চলে যায়। আরেকটি ক্যামেরায় দেখা গেছে, মোটরসাইকেল আরোহী ওই তিনজন শুলকবহর এলাকার বাদুড়তলার বড় গ্যারেজ নামক স্থানে মোটরসাইকেল রেখে ক্যামেরার আড়ালে চলে যায়। পরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে পুলিশ। দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সিএমপি কমিশনার আরও জানিয়েছেন, আবুল খায়ের গ্রুপের স্টাফ পরিবহনে ব্যবহৃত যে মাইক্রোবাসটি আটক করা হয়েছিল তা এখনও সিএমপি কার্যালয়ে রয়েছে। কিন্তু মাইক্রোচালক জানে আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তার সামনেই হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত ছিল তাদের খুব কাছ থেকেই দেখেছে জানে আলম। ফলে দুর্বৃত্তদের শনাক্তকরণে তাকে আবারও ডাকা হতে পারে। অপরদিকে মিতু হত্যার ঘটনায় প্রথম গ্রেফতারকৃত আসামি আবু নসর গুন্নুকে রিমান্ড আবেদনের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত এ আবেদনের শুনানির দিন রবিবার ধার্য করেছে। সে অনুযায়ী রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর হলে আরও বেশকিছু তথ্য পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গুন্নুর পরিবার বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের ৩০ লাখ টাকা বাণিজ্যের মাধ্যমে হত্যাকা-ে গুন্নুকে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছে। তখন গুন্নুকে হাটহাজারীর পশ্চিম ফরহাদাবাদ এলাকার মুসাবিয়া দরবার শরীফের ভক্ত ও একজন খাদেম দাবি করে নিরপরাধ বলা হয়েছে। এমনকি গুন্নুর সঙ্গে এ হত্যাকা-ের যেমন কোন সম্পৃক্ততা নেই, তেমনি তাকে ফাঁসানোর পাঁয়তারা করছে মাজার কমিটির আরেকটি পক্ষ। কারণ মাজার মুসাবিয়ার দুই মেয়ের পক্ষ নিয়ে দুটি গ্রুপ নানা দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। ফলে একটি পক্ষ গুন্নুকে ফাঁসানোর জন্য পুলিশকে ম্যানেজ করেছে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে। এমন অভিযোগ সিএমপি কমিশনার উপড়ে দিয়ে বলেন, গুন্নুর সঙ্গে এ হত্যাকা-ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছেÑ এটা আমরা নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেফতার করেছি। কোনভাবেই ফাঁসানোর বিষয়টি সত্য নয়। কারণ গুন্নুকে গ্রেফতারের পর নানাভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তবে বিভ্রান্তিতে ফেলতে গুন্নুর পরিবার এ ধরনের অভিযোগ তুলতে পারে। উগ্রবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর পাশাপাশি অন্য কোন অপরাধীও এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সে বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। জঙ্গী সংগঠনের পাশাপাশি রবিনের সামাজিক অবস্থান হিসেবে পুলিশের তীর এখন ভাড়াটে কিলারের দিকে। তবে গত ৫ জুন সকালে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী খুনের ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী যে তিনজন ঘটনাস্থলে হত্যাকা- সংঘটিত করেছে তাদের মধ্যে একজন এই রবিন। ঘটনার মূল অপরাধী হিসেবে শেষ পর্যন্ত তাকেই চিহ্নিত করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ভিডিওফুটেজের তথ্যে প্রমাণ রয়েছে। তবে সিএমপি কমিশনার এমনও বলেছেন, আমাদের যেসব ভিডিওফুটেজ সংরক্ষিত রয়েছে সেগুলো মূলত স্পষ্ট নয়। তবুও যাচাই-বাছাই করেই রবিনকে শীতলঝর্ণা এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ জিজ্ঞাসাবাদে বাকিদের তথ্যও উঠে আসবে বলে তিনি ধারণা করছেন। গত শুক্রবার বিকেলে মিতু হত্যার বিচার চেয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠন এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধন চলাকালীন রিক্সাচালক বেশে মোঃ ইব্রাহিম নামের এক যুবক বেশ কয়েকবার ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করলে পুলিশের সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাকে তল্লাশি শুরু করে। এ তল্লাশিতে তার সঙ্গে কাঁধে ঝুলানো স্কুলব্যাগে থাকা দুটি ধারালো ছোরা ও একটি রশি উদ্ধার করে। এছাড়াও তার কাছে পাওয়া যায় একটি কার্ড রিডার। তার মোবাইলে সংরক্ষিত ছিল বেশকিছু ইসলামী গান ও মোবাইল নম্বর। কোতোয়ালি থানা পুলিশের ওসি জসিম উদ্দিন শনিবার দুপুরে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন এই যুবকের গ্রামের বাড়িতেও খোঁজ নেয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানা এলাকায় তার বাড়ি। তবে গ্রামের মানুষ তার পরিচয় শুনতেও নারাজ। দীর্ঘ দুই বছর ধরে তার সঙ্গে আত্মীয়স্বজনের কোন সম্পর্ক নেই। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়াও প্রেসক্লাব চত্বরে তারা সন্দেহজনক ঘোরাফেরার বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া যাবে। আইজিপি আসছেন ॥ এসপি বাবুল আক্তারের পতœী মাহমুদা খানম মিতুর নৃশংস হত্যাকা- ঘটনার ৮ দিন পরও পুলিশসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা সুনির্দিষ্ট কোন ক্লু উদ্ঘাটন করতে না পারায় জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়ত কোন না কোন সংগঠনের উদ্যোগে নগরীতে খুনীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হচ্ছে। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিন পর্যালোচনার জন্য আইজিপি একেএম শহীদুল হক আজ চট্টগ্রাম আসছেন। সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছবেন এবং পরে ১১টা নাগাদ দামপাড়া পুলিশ লাইনসে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে বিশেষ করে মহানগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অনেকের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। আইজি এক সময় চট্টগ্রাম জেলার এসপি ও পরবর্তীতে ডিআইজি হিসেবে কাজ করে গেছেন। চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলা সম্পর্কে তার সম্যক ধারণা রয়েছে। এর পাশাপাশি দেশজুড়ে যেভাবে প্রতিনিয়ত টার্গেট কিলিং চলছে বিষয়টিসহ সার্বিক ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।
×