ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কেনাবেচা ২৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে

ঈদের কেনাকাটায় ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১২ জুন ২০১৬

ঈদের কেনাকাটায় ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি সম্পন্ন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঈদ সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এরই মধ্যে অধিকাংশ পাইকারি মার্কেট জমে উঠলেও খুচরা পর্যায়ের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এখনও জমে উঠেনি। রোজার প্রথম দিন থেকে ক্রেতা টানতে শব-ই-বরাতের পর থেকে পুরোদমে ঈদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অধিকাংশ ব্যবসায়ী। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীরা ঈদ পণ্য-সামগ্রীতে কানায় কানায় ভরে তুলেছে দোকানগুলো। যদিও রোজার আগে থেকে অনেক ক্রেতা কেনাকাটা শুরু করায় শব-ই-বরাতের পর থেকেই ঈদের বিকিকিনি শুরু হয়েছে। পাইকারি মার্কেট থেকে খুচরা মার্কেট পর্যন্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঈদের কেনাকাটা শুরু হলেও অনেক ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, রোজার আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি ও প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন করে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ সবকিছু মিলিয়ে কাক্সিক্ষত বিক্রি নাও হতে পারে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বেশ কিছু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রস্তাবিত বাজেটে অনেক পণ্যে নতুন ভ্যাট আরোপ, প্যাকেজ ভ্যাট দ্বিগুণ করা, কিছু কিছু পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে পোশাক সব পর্যায়ে দাম বাড়বে। এতে ক্রেতাকে গত বছরের তুলনায় বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে। ফলে অনেক ক্রেতার ঈদ বাজেট ছোট হতে বাধ্য। তাদের দাবি আমদানি করা ও দেশে উৎপাদিত সব পণ্যের দাম বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে। গতবারের চেয়ে অন্তত ১৫-২০ শতাংশ দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজধানীর গাউসিয়া, বসুন্ধরা সিটি, ধানম-ি হকার্স মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, ইসলামপুর, ফুলবাড়ি, পলওয়েল, মৌচাক, ফরচুন মার্কেটসহ বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলোতে ঈদের বিভিন্ন পণ্য সাজানো হয়েছে। এসব দোকানে পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, থানকাপড়, থ্রিপিস, জুতা, চশমা, ঘড়ি, ইমিটেশন জুয়েলারি, দর্জি, স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের দোকানগুলোতে ঈদের আমেজ বিরাজ করলেও ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে ১০ রোজার পরে ক্রেতার উপস্থিতি অনেক বেশি হবে বলে অধিকাংশ দোকানিরা মনে করছেন। রাজধানীর ফরচুন সুপার মার্কেটে ইমপ্রেস ফ্যাশনের মালিক রাসেল বলেন, এ মার্কেটে আমাদের দুটি ফ্যাশন হাউস রয়েছে। এবারের ঈদে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করা। গত বছর বেশ ভালই বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এ বছর বিক্রি ততটা নাও হতে পারে। এখন পর্যন্ত যে পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি তাতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। তবে আশা করছি ৮-১০ রোজার পরে বিক্রি বাড়বে। ঈদের জিনিসপত্রে দাম ও বর্তমানের বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে কথা হয় ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেবের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজেট প্রস্তাবনায় অনেক পণ্যের ওপর সম্পূরক শিল্প ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) আরোপ হওয়ায় অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়েছে। চিনি, ভোজ্য তেল, আটা, ময়দা ও ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দাম এরই মধ্যে বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমে যাবে। তিনি আরও বলেন, অনেক পণ্যে ভ্যাট মওকুফ ছিল সেগুলোতে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। এর প্রভাব ঈদের বাজারেও পড়বে। সাধারণ মানুষের বাজেট অনেক কমে যাবে। যারা পাঁচটা পণ্য কিনত তারা দুটি কিনবে। যেসব পণ্য না কিনলেই নয় সেসব পণ্য কিনবে। এ নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক চিন্তিত। দেখা যাক ঈদের সময় কী হয়। এদিকে বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে এবার আমদানির পরিবর্তে ব্যবসায়ীরা দেশী পণ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আসন্ন ঈদ বাজারে দেশীয় শাড়ি ও পোশাকের কদর বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। জামদানি, বেনারশী ও কাতান শাড়ির পাশাপাশি জনী, নবরূপা, গ্রামীণ ও আড়ংয়ের তৈরি দেশী শাড়ি নারীদের মন কাড়তে এরই মধ্যে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে দেশীয় অন্যান্য ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্টেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
×