ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনবিআর পেটের খবর নিয়ে পেটেই ছুরি চালিয়েছে

এফবিসিআইয়ের ৯০ শতাংশ বাজেট প্রস্তাব গৃহীত হয়নি

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১২ জুন ২০১৬

এফবিসিআইয়ের ৯০ শতাংশ বাজেট প্রস্তাব গৃহীত হয়নি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দফায় দফায় আলোচনাকে প্রহসন বলে অভিহিত করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাতলুব আহমাদ। তিনি জানান, চার মাস ধরে আলোচনা করে ফলাফল প্রায় শূন্য। তিনি বলেন, মূসক নিয়ে ৮৪টি, আমদানি শুল্ক নিয়ে ২৩৯টি ও আয়কর নিয়ে ১১৮টিসহ মোট ৪৪৭টি প্রস্তাব দিয়েছি। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই গৃহীত হয়নি। এজন্য আমি লজ্জাবোধ করছি। আগামীতে প্রস্তাবনা দিতে যাবেন কি-না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এর চেয়ে এনবিআরকে প্রস্তাব না দিলেই বেশি পেতাম। শনিবার রাজধানীতে ফেডারেশন ভবনে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বাজেট প্রস্তাবনা দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির সংলাপে ডাকা হয়েছিল এফবিসিসিআইকে। সভায় আমরা আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও শুল্কখাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৪৪৭টি প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে মাত্র ৫৩টি প্রস্তাব রাখা হয়েছে। দীর্ঘ চার মাস কঠোর পরিশ্রম করে আমরা প্রস্তুাবনা তৈরি করেছিলাম। সেগুলোর সিংহভাগই না রাখায় আমাদের সেই পরিশ্রমই বৃথা গেল। তাই আগামীতে এনবিআর ডাকলে আর যাবো কি-না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, চার মাস শ্রম দিয়ে এনবিআরকে যে প্রস্তাব দিয়েছি, তার ১০ শতাংশ রাখা হয়েছে- এটাতে লজ্জাবোধ করছি। আমরা হাওয়ার ওপরে কোন প্রস্তাব দেইনি। এনবিআর চার মাসে আমাদের পেটের খবর নিলো, পরে আমাদের পেটেই ছুরি চালালো। অথচ আমরা বই আকারে প্রস্তাব দিলাম, তার কিছুই রাখল না। ‘এনবিআরকে প্রস্তাব না দিলেই এর চেয়ে বেশি পেতাম’ বলেও মন্তব্য করেন মাতলুব। মাতলুব বলেন, সময় এসেছে এনবিআরকে সঠিক পথে আনার। ব্যবসায়ীরা টিকেই না থাকতে পারলে ভ্যাট কোথা থেকে দেবেন? এনবিআর একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে। তাহলে কেন এই প্রহসনের ডায়ালগ? এনবিআরের কর্মকর্তারাই রাজস্ব আদায় বাড়াতে চান না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজস্ব দিতে চান না- এ ধারণা প্রতিষ্ঠা করবেন না। রাজস্ব কর্মকর্তারাই চান না, রাজস্ব বাড়ুক। আমরা অনেক খবর পেয়েছি। তারা বলেন, কেন সরকারকে দেবেন? আমাদেরকে দিন’। প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাটের আওতা বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারাই ভ্যাট দিচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে আরও বেশি ভ্যাট আদায় করবে। ভ্যাটের নেট বাড়েনি। বার বার মিটিং করে আমাদের পেটের কথা বের করে আবার আমাদের পেটেই ছুরি চালাবে। ৪ বছরেও একটা সিস্টেম ডেভেলপ করতে পারেনি এনবিআর। এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনায় যৌথভাবে ৭টি প্রস্তাব গৃহীত হয়। তার একটিও প্রস্তাবিত বাজেটে আসেনি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। আশা করি, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের আগে বিষয়টির সুরাহা হবে। মাতলুব আহমাদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বর্তমানে মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থায় ২২টি সেবার ক্ষেত্রে সংকুচিত ভিত্তিমূল্য ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট সেবা খাতসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসকল ক্ষেত্রে এফবিসিসিআইয়ের সুপারিশ অনুযায়ী সংশোধনীর প্রস্তাব করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য করা হয়েছে যা অযৌক্তিক। এছাড়া সম্পূর্ণ আবাসিক কাজে ব্যবহারের জন্য এবং বাণ্যিজিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত অনধিক ১৫০ বর্গ ফুটের কোন স্থাপনা ভ্যাট অব্যাহতি ছিল সেটাও তুলে নেয়া হয়েছে অর্থাৎ ছোট দোকানসহ সকলকেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করতে হবে যা অযৌক্তিক। তাই এই সংশোধনী বাতিল করার দাবি জানান তিনি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, পৃথিবীর কোথাও রফতানির উপরে উৎসে আয়কর কাটা হয় না। বিশ্বব্যাপী প্রচলিত রফতানি প্রণোদনা নীতিমালার আলোকে রফতানি খাতে প্রস্তাবিত উৎসে কর বৃদ্ধির হার বাতিল করে বর্তমান প্রযোজ্য উৎসে কর কর্তনের হার ০.৬ শতাংশ ধার্য করে কর্পোরেট কর ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। পোশাক শিল্পের কর্পোরেট করের হার ৩৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। পোশাক শিল্পের রফতানি আয়ের ওপর কর হার হ্রাস করে ১০ শতাংশ করা না হলে এ খাতে বিনিয়োগ হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিবন্ধক আমদানি পর্যায়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি, মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর (অওঞ) প্রত্যাহারের দাবি জানানো হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে আমদানি পর্যায়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি, মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামাল ও উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীদের কাজ রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা নয়, রাস্তা আটকানো নয়। আমাদের কাজ উৎপাদন করা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। আমরা চাই সরকার আমাদের এসব কাজে সহযোগিতা করুক। এটাই আমাদের মূল দাবি।
×