ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহ্যবাহী এ ভবন না ভাঙ্গার আবেদন

নারায়ণগঞ্জের লাল দালান সংরক্ষণের দাবি

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১১ জুন ২০১৬

নারায়ণগঞ্জের লাল দালান সংরক্ষণের দাবি

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজার এলাকায় ঐতিহ্যবাহী দোতলাবিশিষ্ট লাল দালানটি (পুরাতন কোর্ট ভবন) ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলের আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা ঐতিহ্যবাহী ভবনটি ভেঙ্গে শিল্পকলা একাডেমি ও পাবলিক লাইব্রেরীর জন্য নতুন ভবন তৈরি করা হবে বলে গণপূর্ত বিভাগ, নারায়ণগঞ্জ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান। ইতোমধ্যে ওই পুরাতন ভবনটিতে অবস্থিত ৯টি সরকারী অফিস অন্যত্র সরিয়ে নিতে নোটিসও দেয়া হয়েছে। এতে বেকায়দায় পড়েছে ওই ভবনে থাকা সরকারী অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে ঐতিহ্যবাহী লাল দালানটি সংরক্ষণের দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা লাল দালানট বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীতে ফতুল্লার চাঁদমারী এলাকায় জেলা প্রশাসকের নতুন ভবন তৈরি হলে লাল দালান হতে কার্যক্রম নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত ভবনে ৯টি সরকারী অফিস গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে বরাদ্দ নিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অফিসগুলো হলোÑ জেলা ট্রাফিক অফিস, ফায়ার সার্ভিসের জেলা অফিস, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জেলা সঞ্চয় অফিস, স্কুল হেলথ, ভোক্তা, জেলা ক্রীড়া, শিল্পকলা এবং ভূমি জরিপ অফিস। গত ৮ মে গণপূর্ত বিভাগ, নারায়ণগঞ্জ এক চিঠির মাধ্যমে ওই ভবনের সকল অফিস আগামী এক মাসের মধ্যে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। এতে বেকায়দায় পড়েছেন ওই ৯টি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফিন্সের উপসহকারী প্রকৌশলী দিনমনি শর্মা জানান, লাল দালানটি ভেঙ্গে ফেলা হবে। তাই ওই ভবনটি ছেড়ে দিতে আমাদের নোটিস দেয়া হয়েছে। আমরা আরও ৬ মাস সময় চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। নগরীর সচেতন মহল জানায়, প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জে লাল দালালটি এখনও ঐতিহ্যের একটি চিহ্ন হিসেবে ধারণ করে আছে। নারায়ণগঞ্জে যতগুলো ঐতিহ্যবাহী ভবন আছে, তার মধ্যে এ লাল দালানটি অন্যতম। তাই নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যের চিহ্ন হিসেবে লাল দালানটি সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমি ভবন হচ্ছে এজন্য আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু লাল দালানটি সংরক্ষণ করে ওই ভবনের পেছনের খালি জায়গায় শিল্পকলা একাডেমির ভবন করারও অনুরোধ জানান তারা। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা সুন্দর আলী জানান, এটি পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী একটি ভবন। ভবনটি আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করে রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, কেউ ঐতিহ্যবাহী কোন জিনিস টিকে রাখতে চায় না। লাল দালানটি ব্রিটিশ আমলে গড়ে তোলা হয়েছে। ব্রিটিশের পর পাকিস্তান এসেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি আমাদের সংরক্ষণ করা উচিত। তাছাড়া ১৯৭১ সালে এ লাল দালানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অস্ত্রাগার ছিল। এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা এ অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করে এনে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার করেছে। তাই লাল দালানটি না ভেঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর হিসেবেও সংরক্ষণ করা যায়। ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, লাল দালানটি আমাদের নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্য। স্মৃতি ধরে রাখতেই এটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ, নারায়ণগঞ্জ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জানান, লাল দালান (পুরাতন কোর্ট ভবন) কোন জমিদার বাড়ি নয়, কোন পুরাকীর্তিও নয়। তাই এটা সংরক্ষণ করার সুযোগ নেই। ভবনটি ভেঙ্গে শিল্পকলা একাডেমি ও পাবলিক লাইব্রেরীর জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।
×