ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবেদন করেছে ১৩ লাখ ১ হাজার ১৯ জন

অনলাইন ও এসএমএসে কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ জুন ২০১৬

অনলাইন ও এসএমএসে কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শেষ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বড় ধরনের কোন বিড়ম্বনা ছাড়াই শুক্রবার বিকেল তিনটায় শেষ হলো অনলাইন ও এসএমএসে কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া। আবেদন করেছে ১৩ লাখ এক হাজার ৯৯ জন মাধ্যমিক পাস করা কলেজ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। জমা পড়েছে ৪৪ লাখ ৯২ হাজার। আবেদনকারীদের মধ্যে নয় লাখ ৩৭ হাজার অনলাইনে ও বাকিরা আবেদন করেছেন এসএসএসে। এদিকে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণদের মধ্যে এবার প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির আবেদন করেনি। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতিবছরই দেড় লাখের মতো শিক্ষার্থী সাধারণ ধারায় থাকে না। তারা হয় কারিগরি ডিপ্লোমা বা অন্যান্য ধারায় চলে যায়। কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। মেয়েদের অনেকের এই সময়ে বিয়ে হয়ে যায়। ফলে তারা কলেজ ভর্তির বাইরে থেকে যায়। শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শেষে এখন তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু হবে। এসএসসির ফল বিবেচনা করে আগামী ১৬ জুন ফল প্রকাশ হবে। এরপর শিক্ষার্থীরা যেখানে ভর্তির জন্য মনোনিত হবে সেখানে ভর্তি হবে। একাধিক প্রতিষ্ঠানে মনোনিত হলে শিক্ষার্থী তার পছন্দের যে কোন একটিতে ভর্তি হতে পারবে। আবেদন প্রক্রিয়া শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. মোঃ আশফাকুস সালেহীন জানান, সার্বিক অবস্থান সন্তোষজনক। শিক্ষার্থীরা ভালভাবে আবেদন করতে পেরেছে। বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ফল পুনর্নিরীক্ষণসহ সকলের কথা বিবেচনা করে শুক্রবার তিনটা পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ দিয়েছিলাম আমরা। প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। প্রতিবছর যে সংখ্যক শিক্ষার্থী কলেজ ভর্তি হয় না এবার সংখ্যা তেমনই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এটা স্বাভাবিক সংখ্যা। অনেকেই আছে এই সময়ে শিক্ষার অন্যান্য ধারায় প্রবেশ করে। যারা সাধারণ শিক্ষায় থাকে না তারা আর কলেজ ভর্তির আবেদন করে না। কলেজ পরিদর্শক বলেন, সারাদেশে সাড়ে ১৯ লাখের বেশি আসন রয়েছে। ভর্তিতে কোন শিক্ষার্থীর সমস্যা হবে না। আবেদনের চিত্র সম্পর্কে জানা গেছে, বরিশালে ৬৫ হাজার ১০২, চট্টগ্রামে এক লাখ ৭ হাজার ৩৩০, কুমিল্লায় এক লাখ ২৬ হাজার ৩৫৯, ঢাকায় চার লাখ ৯ হাজার ৬৭৫, দিনাজপুরে এক লাখ ৩২ হাজার ৪৬৮, যশোরে এক লাখ ২৬ হাজার ৭৪৯, সিলেটে ৭৩ হাজার ৭১, মাদ্রাসা বোর্ডে এক লাখ ১৪ হাজার ৫৫৪ এবং কারিগরি বোর্ডে এক লাখ ১০ হাজার ৮০৭ জন আবেদন করেছে। আবেদনকারীদের ফলাফল বা মনোনয়ন ১৬ জুন একাদশে ভর্তির জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (িি.িীরপষধংংধফসরংংরড়হ.মড়া.নফ) প্রকাশ করা হবে। আবেদনের সময় প্রদত্ত মোবাইল ফোন নম্বরেও সংক্ষিপ্ত ফল পাওয়া যাবে। শিক্ষার্থীরা তাদের আবেদনকৃত কলেজের নোটিস বোর্ডেও ফল দেখতে পারবে। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে তাদের রোল, বোর্ড, পাসের সাল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ফলাফল দেখতে পারবে। গত ১১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়, যাতে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০১ জন অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৭৬১ শিক্ষার্থী। আবেদনকারী এবং মোট পাস করা শিক্ষার্থীর হিসাবে এক লাখ ৫১ হাজার ৫০৬ জন শিক্ষার্থী কলেজ ভর্তির আবেদন করেনি। গত কয়েক বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি করানো হলেও এবার দ্বিতীয়বারের মতো অনলাইনে এবং এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন নিয়ে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করানো হবে। ২৬ মে থেকে অনলাইন এবং এসএমএসে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরু করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। শিক্ষার্থীরা টেলিটক মোবাইল ফোনে এসএমএস এবং অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। প্রথম দিন টেলিটকের এসএমএস পাঠানোর পর ফিরতি এসএমএস দেরিতে আসায় বিড়ম্বনায় পড়েছিল প্রার্থীরা। পরবর্তীতে সমস্যা কাটিয়ে উঠে কর্তৃপক্ষ। এবার একজন প্রার্থীর একাধিক আবেদন ঠেকাতে আগেই পেমেন্ট নেয়া হয়। গতবছর পরে টাকা নেয়ায় অনেকে ভুয়া আবেদন পড়েছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভর্তি প্রক্রিয়ায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে কারিগরি সহায়তা করছে। অনলাইন এবং এসএমএস করে একজন শিক্ষার্থী এবার সর্বোচ্চ ২০ প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার সুযোগ পান। তবে যে কোন মাধ্যমে ১০টির বেশি আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। ২০টির প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আবেদনের সুযোগ থাকলেও গড়ে একেকজন শিক্ষার্থী চারটিও কম প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করেছে। এবার অনলাইনে আবেদনে মাত্র ১৫০ টাকা ফি দিয়ে ১০টি কলেজে আবেদন করা যায়। এসএমএসে প্রতি কলেজের জন্য ফি লাগে ১২০ টাকা। নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী, ১৬ জুন ফল প্রকাশের পর ১৮ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত আসনের বিপরীতে নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হবে। আর অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তি চলবে ২৩ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। একাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হবে আগামী ১০ জুলাই। বিলম্ব ফি দিয়ে আগামী ১০-২০ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হওয়া যাবে। একদিকে টাকা সাশ্রয় ছাড়াও অনলাইনে কার্যক্রম চলায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আগের মতো দৌড়াতে হচ্ছে না কলেজে কলেজ। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলছিলেন, আবেদন নিয়ে কলেজগুলোরও কোন চাপ নেই এখন। আমাদের কাজ শুরু হবে তালিকা প্রকাশের পর ভর্তি শুরু হলে। মতিঝিল আইডিয়াল কলেজের গবর্নিং বডির সদস্য স্থানীয় ১২ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার গোলাম আশরাফ তালুকদার জানালেন, অনলাইনে হওয়ায় আমাদের কোন চাপ নেই। নেই কোন ভর্তির তদ্বিরও। এর আগে গত বছর ভর্তিতে মহাসঙ্কট তৈরি হয়েছিল। সঙ্কট নিরসনে এবার আবেদনের জন্য কলেজ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি মাইগ্রেশনের রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। এবার একেকজন অনেক প্রতিষ্ঠানে মেধা তালিকায় আসার সুযোগ পাবে। এরপর সে তার মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার মধ্যে পছন্দের একটি প্রতিষ্ঠানেই ভর্তির সুযোগ পারে। কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন বলেন, এবার আমরা ভর্তির জন্য দুটি তালিকা প্রকাশ করব। একটি মেধা তালিকা, অপরটি অপেক্ষমাণ। দুটি তালিকাই একসঙ্গে প্রকাশিত হবে। মেধা এবং অপেক্ষমাণ তালিকার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ধরা যাক একটি কলেজে ২০০০ আসন আছে। এই কলেজে আবেদন পড়েছে পাঁচ হাজার। এর মধ্যে প্রথম ২০০০ জন মেধা তালিকায় স্থান পাবে। বাকি ৩০০০ অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকবে।
×