ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেড় হাজার কোটি টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১১ জুন ২০১৬

সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দেড় হাজার কোটি টাকা বিদ্যুত বিল  বকেয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দেড় হাজার কোটি টাকা বিদ্যুত বিল বকেয়া পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে বকেয়া পাওনা আদায় করা যাচ্ছে না। ক্ষেত্র বিশেষে অভিযান চালিয়ে এমনি কিছু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, বিদ্যুত বিল না দেয়ায় বিলের উপর সুদ (এলপিএস) জমে বিলের পরিমাণ বেশি হয়ে গেছে। এতে অনেকেই বিল দিতে চাচ্ছে না। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বিল নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিল পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিতরণ কোম্পানি বিল না পাওয়ায় আর্থিক অনটন বাড়ছে। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেলে বিতরণ কোম্পানিগুলো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে পারত। যাতে গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি পেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত সপ্তাহে বিদ্যুত বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে জানা যায়, সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট বকেয়া বিদ্যুত বিলের পরিমাণ এক হাজার ৫৫৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বকেয়া পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এলাকায়। সংস্থার বকেয়ার পরিমাণ ৭২২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর পরেই রয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বকেয়া। বিতরণ কোম্পানি ৪৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা আদায় করতে পারছে না সরকারী গ্রাহকদের কাছ থেকে। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) বকেয়ার পরিমাণ ১২৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ১২৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা আর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৮৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা আদায় করতে পারছে না। দেখা যায়, ২০১১ সালে বকেয়া বিদ্যুত বিলের পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি হলেও পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০০ কোটি টাকায়। ২০১৩ সালে বকেয়া বিদ্যুত বিলের পরিমাণ আরও ১৫০ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকায়। ২০১৪ সালে তা ২৫০ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকায়। এ বছর মার্চ পর্যন্ত বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। খোদ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিটি কর্পোরেশন সবখানেই রয়েছে বকেয়া বিদ্যুত বিল। মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত বিল বকেয়া পড়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের ৭৭৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। তবে সব মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা মিলিয়ে সরকারের ৫০টি বিভাগ এই দেনার দায় কাঁধে নিয়ে বছরের পর বছর ঘুরছে। কেন বার বার চাপ দেয়ার পরও বিল দেয় না সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চেয়েছিলাম ডিপিডিসির স্পেশাল টাস্কফোর্সের প্রধান মুনীর চৌধুরীর কাছে। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, স্রেফ অবহেলা করেই বিল দেয় না সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। একটু সচেতন হলেই বিদ্যুত বিল সময় মতো পরিশোধ করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন তিনি। আর কোন সমস্যা রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে বিল নিয়ে কারও কারও আপত্তি রয়েছে আবার কেউ কেউ বিলের উপর অতিরিক্ত সুদ জমে যাওয়ায় বিল দিচ্ছে না বলেও জানান তিনি। তবে এসব সমস্যার সামাধান হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। বিদ্যুত বিভাগের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়গুলোকে দফায় দফায় চিঠি চালাচালি করা হলেও কার্যত কোন কাজ হয় না। সরকারী অফিসগুলো বিদ্যুত বিল পরিশোধে বরাবরই উদাসীনতা দেখাচ্ছে। প্রতিবারই দেখা যায় অর্থবছরের শেষ দিকে বিদ্যুত মন্ত্রণালয় বৈঠক করছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রণালয়গুলো বিদ্যুত বিল পরিশোধে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়। কিন্তু কেউ এই কথা শোনে না। সাধারণ গ্রাহকদের বিদ্যুত বিল বকেয়া থাকলে যত সহজে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ বিল আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সরকারী সংস্থা ও অফিসগুলোর ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব হয় না। মাঝে মাঝে শুধু তাদের বিলের জন্য তাগাদা দেয়া হয়। সরকার বিদ্যুত খাতে সর্ব্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করলেও নিজেদের মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোর কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে পারছে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিবছর পৃথক বরাদ্দই থাকে বিদ্যুত বিল দেয়ার জন্য সেই অর্থ কোথায় কোনখাতে ব্যয় করা হয় বিষয়টি অনুসন্ধান করা জরুরী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
×