ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

ছুটির দিনে মার্কেট শপিংমলে ঘুরছেন ক্রেতারা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১১ জুন ২০১৬

ছুটির দিনে মার্কেট শপিংমলে ঘুরছেন ক্রেতারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র রমজানের চার রোজা শেষ। রমজান শেষে মুসলমানদের জন্য খুশির জোয়ার নিয়ে আসে ঈদ আনন্দ। আর ঈদ আনন্দ মানেই নতুন পোশাক। পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাকের আয়োজন, সঙ্গে হরেক রকমের খাবারের আয়োজনও থাকে। যার প্রস্তুতিটা শুরু হয় রমজানের চাঁদ উঠার পর থেকেই। রমজানে অনেকেই নিজের অথবা পরিবারের সদস্যদের কেনাকাটার জন্য উত্তম দিন হিসেবে বেছে নেন ছুটির দিন শুক্রবারকেই। এবারের রমজানে সবমিলিয়ে চারটি শুক্রবার পাওয়া যাবে। যার প্রথম শুক্রবার ছিল এটি। রমজানের প্রথম শুক্রবারে মার্কেটগুলোতে মানুষের ভিড় থাকলেও কেনাকাটার ভিড় খুব একটা ছিল না। সবাই মার্কেটে ঘুরে বেড়িয়েছে আর নিজের পছন্দের পণ্যটি কেবলই দেখেছেন। ব্যতিক্রমও ছিল কেউ কেউ। পছন্দের পণ্যটি দেখা মাত্রই চটজলদি কিনে নিয়েছেন। কেননা পরবর্তীতে নাও পাওয়া যেতে পারে সেই শঙ্কায়। বিপণিবিতানগুলোতে ইতোমধ্যেই ঈদের আমেজ শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই মার্কেটে ভিড় বাড়ছে। এই ভিড় আরও বাড়বে বলেও দোকানদাররা জানিয়েছেন। ছুটির দিনে মার্কেটে এসে দোকানে দোকানে গিয়ে নতুন পোশাক ঘুরে দেখার কথা জানিয়েছেন ক্রেতারা আর বিক্রেতারা বলছেন দশ রোজার পর জমজমাট হবে বিকিকিনি। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটগুলো ঘুরে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক ও ধানম-ি হকার্স মার্কেটে রমজানের শুরু থেকেই কেনাকাটায় থাকে জমজমাট। আর ছুটির দিন হলে সে কেনাকাটা আরও কয়েগুণ বেড়ে যায়। শুক্রবার এসব বিপণিবিতানগুলোতে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতারা এক দোকান থেকে আরেক দোকানে যাচ্ছেন। আর বিক্রেতারা বলছেন, সামনের দিনগুলোতে আরও নতুন আইটেম আসবে। মূলত সন্ধ্যার পর ইফতার সেড়েই অনেকেই আসেন মার্কেটে। তবে দিনের বেলায়ও ক্রেতার কমতি ছিল না মার্কেটগুলোতে। খাওয়া দাওয়ার বিষয়টি না থাকার কারণে জুমার নামাজ আদায় করেই কেউ কেউ বেড়িয়েছেন মার্কেটের পণ্য দেখার জন্য। এদিন বড় বড় মার্কেট, বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউস ও শপিংমলগুলোতে দেখা যায় ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে নিজের শখের পণ্যটি দেখছেন। শাড়ি-জামার ডিসপ্লে করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মুখিয়ে আছেন বিক্রেতারা। নিউমার্কেটের বিক্রেতা আজাদ হোসেন জানান, আমাদের ক্রেতাদের বেশিরভাগই নারী। তবে এখনও বিক্রি জমে উঠেনি। সামনের শুক্রবার থেকে দম ফেলতে পারব না। তবে ক্রেতারা রোজই আসেন নতুন ডিজাইনের খোঁজ নিতে। আরও একাদিক ব্যবসায়ীরা জানালেন ঈদ বাজার জমজমাট হবে আরও কিছু দিন পর। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ঈদের বিকিকিনি পুরোদমে জমে উঠবে। তারা জানান, ঈদ উপলক্ষে এখনও অনকেই নতুন আইটেমে থ্রি-পিস বা অন্যান্য নতুন ডিজাইনের পোশাক উঠানো হয় নাই। আবার কেউ কেউ এনেছেন তবে ডিসপ্লে হয় নাই। তবে আগামী শুক্রবারের আগেই বিক্রেতাদের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়ে যাবে বলেও জানা গেছে। প্রতি বছরের মতো এবারও বড়দের বাহারি পোশাকের সঙ্গে শিশুদের পোশাকেও চমক থাকছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে ঈদের শপিংয়ে এসেছেন ইশতিয়াক হাসান ও তার পরিবার। স্বামী স্ত্রী ব্যতীত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য কেনাকাটা শেষ তাদের। ইশতিয়াক হাসান জানালেন, শুক্রবার সময় পেয়েছি মার্কেটেও ভিড় কম তাই কেনাকাটা করে ফেললাম। আমাদের দুজনেরটা আরেক শুক্রবার করে নিব। নিজের বাচ্চাদের জন্য ফ্রক, ছেলের জন্য পাঞ্জাবি, শার্ট ও প্যান্ট কিনেছেন। এছাড়াও বাবার জন্য লুঙ্গি ও মায়ের জন্য কাপড় কিনেছেন এই দম্পত্তি। ঈদ কেনাকাটার আশি ভাগ তারা করে ফেলেছেন বলেও জানালেন। ধানম-ি থেকে এসেছেন দুই বান্ধবী তৃষা আক্তার ও কাকলি। লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি করেন। এখন সবই বন্ধ। এই সপ্তাহেই বাড়ির পথ ধরবেন। তাই ছুটির দিনে নিজেদের ঈদ বাজারও সেড়ে নিলেন রাজধানী থেকে। দাম নিয়েও সন্তুষ্ট তারা। জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, গ্রামে যাব অনেক সময় জেলা শহরে পছন্দটা ঠিকমতো হয় না। তাছাড়া একটু আগেই কিনে ফেললাম কেননা জামা তৈরি করতে দিতে হবে তাই। বাড়ি যাব সব মিলিয়ে ভালই লাগছে। শুক্রবার বিকেলের দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কসহ ফ্যাশন হাউসগুলোতে ক্রেতার ভিড় ছিল লক্ষ্য করার মতো। বসুন্ধরা শপিং মলের একাধিক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজান শুরু হলেও বিক্রি তেমন বাড়েনি তবে আগামী সপ্তাহে এই বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন তারা। ছুটির দিন বলেই পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটায় নেমে পড়েন সবাই। দুপুর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটকেন্দ্রীক যানজটও বেড়ে যায়। কেননা, অনেকেই তাদের নিজস্ব গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরেন কেনাকাটার জন্য আর মার্কেটগুলোতেও পর্যাপ্ত পার্কিং না থাকার কারণে যানজট বেড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিদ্যুত ব্যবহারের কথা বিবেচনায় এনে সাধারণত রাত ১০টা পর্যন্ত বিপণিবিতান খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়। তবে ব্যবসায়ীরা রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত চালিয়ে যান বিক্রি। কখনও আবার ঈদেও আগের কয়েকটি দিন প্রায় সারারাত চলে কেনাকাটার হিড়িক। যদিও এবার ঢাকা এখনও কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে পবিত্র রমজানের প্রথম সপ্তাহ স্বাভাবিকভাবেই কেনাকাটা চললেও দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ীরা। গাউছিয়া, চাঁদনী চক, ধানম-ি হকার্স ও নিউমার্কেটে ঈদ উপলক্ষে এবারও রাখা হয়েছে ভারতীয় হিন্দি ছবি, সিরিয়াল ও নায়িকাদের নামে ট্যাগ করা বাহারি রং ঢংয়ের পোশাক। এছাড়া আধুনিক ও নতুন নতুন ডিজাইনের ভারতীয়, পাকিস্তানী ও দেশী সেলাই করা এবং সেলাইবিহীন থ্রি-পিসও রাখা হয়েছে বিপণিবিতানগুলোতে। বিদেশী পোশাকের পাশাপাশি এবার দেশী কাপড় ও ডিজাইনারদের তৈরি পোশাকের বুটিক হাউসগুলোতে হরেক রঙের পোশাকের হরেক ডিজাইন। বিভিন্ন নামও দেয়া হয়েছে এসব পোশাকের। মেয়েদের এবারের চাহিদা পোশাক বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, সব ধরনের পোশাকেরই চাহিদা থাকে। তবে গত বছরের মতো ‘পাখি’ জামার প্রতি বিশেষ আগ্রহ এবার নেই। তবে অনেক দিন ধরেই ‘ফ্লুরটাচ’ জামার চাহিদা ছিল ঈদে সে চাহিদা আরও থাকবে বলেও মনে করছেন অনেকে। এছাড়াও এবারের ঈদে ‘গোল ফ্রক’ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হবেন বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। আরও আছে ‘শারারা’ ‘লেহেঙ্গা’ ইত্যাদি। দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা উপাদান ব্যবহার করে পোশাকে শতভাগ বাঙালিয়ানা ফুটিয়ে তোলার কৃতিত্ব রয়েছে রাজধানীর শাহবাগের আজিজ মার্কেটে। এবার ঈদ আয়োজন নিয়ে শাহবাগের এই মার্কেটেও রয়েছে নানা চমক। ইতোমধ্যেই একাধিক দোকানে শোভা পাচ্ছে নিজেদেও দেশী কাপড়ে তৈরি ঐতিহ্যের পোশাক। এই সপ্তাহে আরও পোশাক আসবে বলেও জানান এখানকার ব্যবসায়ীরা। এছাড়া দেশী সুতি, তাঁত, খাদি, কাপড়ের তৈরি সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, নানা রকম শাড়ি, থ্রি-পিস, টি-শার্টসহ রকমারি পোশাকও রাখছেন ব্যবসায়ীরা। মার্কেটের পাশাপাশি বিভিন্ন ফুটপাথেও রয়েছে পোশাক মেলা। স্বল্প আয়ের মানুষ অনেকেই ছুটেন ফুটপাথে। তবে এবারের ফুটপাথেও এখনও বিকিকিনি শুরু হয়নি। তারাও বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আসছেন আর আশা করছেন চলতি সপ্তাহে শুরু হবে বিক্রি।
×