ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ জুন ২০১৬

খোশ আমদেদ মাহে  রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ রমজানুল মোবারকের ৫ম দিবস। আমরা এখন রহমতের দশকের মাঝামাঝিতে। মহানবী (স) বলেছেন, আওয়ালুহু রাহমাহ আওসাতুহু মাগফিরাহ দওয়া আখিরুহু ইতকুম মিনান্নারÑ এ মাসের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের এবং সমাপনী দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির। আজ আমরা রোজা ভাঙ্গা বা ইফতার করা সম্পর্কে ২/১টি মাসলা মাসায়িল বর্ণনা করব। রোজা রাখার সময়সীমা এবং ইফতার করার নির্দেশ দিতে গিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন: অতপর তোমরা রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর। এখানে রাত বলতে রাতের সূচনা বা সূর্যাস্তকে বোঝানো হয়েছে। মহানবী হুজুরেপুর নূর (স) রাতে কোন আহার গ্রহণ না করে অর্থাৎ ইফতার ছাড়া একের পর এক রোজা রেখে যেতে বারণ করেছেন। এ ধরনের রোজা রাখাকে বলা হয় ‘সাওমে বিসাল’। ইফতার গ্রহণ ছাড়া রোজা রাখলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর দ্বারা অন্যান্য ধর্মীয় অনুশাসন ও পরিবার-পরিজনের হক আদায়ে বিঘœ সৃষ্টি হয়। আসলে আল্লাহ তায়ালা কোন মানুষকে সিয়ামের মাধ্যমে উপোস রেখে মারতে চান না, তিনি চান একটি সুনির্দিষ্ট সময় ধরে তাঁর নির্ধারিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করতে। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরাইরা (রাদি) বলেন: রাসূলে কারীম (স) প্রতিটি রোজার মাঝখানে রাতে পানাহার, ইফতার বর্জনকে নিষেধ করেছেন। তখন একজন লোক আরজ করল -ওহে আল্লাহর রাসূল (স) আপনি যে এমনটি করেন। উত্তরে হুজুর (স) বললেন, তোমরা আমার মতো কে আছো? আমি ঐ রকম রোজা রাখি। কেননা আমার দয়াময় আল্লাহ আমাকে খাওয়ান আর পানও করান।’ এ থেকে বোঝা যায়, ইফতার গ্রহণ মুমিন মুসলমানদের জন্য রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। এর সুষ্ঠুতার মধ্যে সিয়ামের পূর্ণতা নির্ভর করে। এ সম্পর্কিত হাদিস ও আইন গ্রন্থগুলোর মাধ্যমে জানা যায় যে, কোন কিছু আহারের মাধ্যমে গোটা দিনের সমাপ্তি টানাই হলো ইফতার। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে হয়। আমাদের মহানবী হযরত মুহম্মদ (স) ইরশাদ করেছেন: যতদিন পর্যন্ত লোকেরা (সূর্য ডোবার পর) কালবিলম্ব না করে ইফতার করবে, ততদিন তাদের ওপর মঙ্গল অব্যাহত থাকবে। যখন নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে, সূর্য ডুবে গেছে তখন কালবিলম্ব না করে ইফতার সাড়া মোস্তাহাব। দেরি করে ইফতার করা মাকরুহ। তবে মেঘলা দিনে কিছু দেরি করে ইফতার করা ভাল। কেননা, দিনে কেউ সূর্যাস্ত গেছে বলে মনে করে ইফতার করে ফেলল কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সূর্য দেখা দিল। এমতাবস্থায় সে গুনাহগার হবে না সত্য, তবে তার ওপর এ রোজা ক্বাযা করা ওয়াজিব হবে। এর জন্য দেখুন মা’আরিফুল কোরান (পৃঃ ৯৬)। ইফতারির আইটেমের মধ্যে বর্তমানে আমাদের দেশে টক-ঝাল মিষ্টিজাত নানা দ্রব্যের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রবল ঝোঁক দেখা যায়। এসব যদি হালাল পথে উপার্জিত হয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয় তবে নাজায়েজের কিছু নেই। সচরাচর বিভিন্ন দেশে আল্লাহর বান্দারা বিচিত্র রকমের পানাহারে অভ্যস্ত। এসব পানাহার ও খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করাই বড় কথা। তবে খোরমা দিয়ে ইফতার করা সবচে’ উত্তম। এ ছাড়া মিষ্টিজাত দ্রব্য অথবা পানীয় দ্বারা ইফতার করা ভাল (আবু দাউদ)। সাহাবী আনাস (রাদি) বলেন, আল্লাহর রাসূল (মাগরিবের) নামাজের পূর্বে ইফতার করতেন কয়েকটি তাজা খেজুর দিয়ে। যদি তিনি তাজা খেজুর না পেতেন শুকনো খেজুর (অর্থাৎ খোরমা) দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন।—(রিয়াজুস সালেহিন)। আমরা ইফতার গ্রহণের সূচনাতে সামান্য খোরমা/ মিষ্টিজাত দ্রব্য কিংবা পানি মুখে দিয়ে সুন্নাতের সাওয়াব পেতে পারি। এরপরই অন্যান্য আহার্য গ্রহণ করা যায়। হাদীস সংকলন দারে কুতনীতে এসেছে: রোজাদারের সামনে যখন ইফতারের জন্য আল্লাহর নিয়ামত খাদ্যদ্রব্য আসে তখন এ বলে শোকরিয়া আদায় করা উচিত, আল্লাহর নামে আরম্ভ করি এবং তাঁরই প্রশংসা করি। প্রভু হে! তোমারই উদ্দেশে আমি রোজা রেখেছিলাম। এখন তোমারই খাদ্য থেকে ইফতার করছি। তুমি পবিত্র ও প্রশংসনীয়। আমার রোজা কবুল কর। তুমি তো সর্বশ্রোতা এবং সবজান্তা। প্রিয় নবী (স) ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ব্যক্তির জন্য তা গুনাহ মাফ এবং দোযখের আগুন হতে নাজাতের কারণ হবে। রোজাদারের পুণ্যের সমান পুণ্য লাভ করবে। অথচ রোজাদারের সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র কম করা হবে না। (এমনকি) যে ব্যক্তি কাউকে একটি খেজুর/ কিছু পানি কিংবা সামান্য দুধ দিয়ে ইফতার করাবে আল্লাহপাক তাকেও উত্তম সওয়াব প্রদান করবেন। (এছাড়া) যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে তৃপ্তির সঙ্গে আহার করাবে আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউজে কাওসার হতে এমন পানি পান করাবেন যে, বেহেস্তে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে আর পিপাসা অনুভব করবে না। (বুখারী, মুসলিম, আহমদ) আমরা যেন মহানবীর সুন্নাহ ও আদর্শ অনুযায়ী ইফতার গ্রহণে প্রয়াসী হই।
×