ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লুইসভিলে বিদায় যাত্রায় হাজারো ভক্ত

অন্তিম শয়ানে কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ জুন ২০১৬

অন্তিম শয়ানে কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুষ্টিযোদ্ধা মুহাম্মদ আলীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানালেন তার হাজার হাজার ভক্ত ও অনুরাগী। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকির লুইসভিলে মুহাম্মদ আলীর জন্য বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন তারা। দুদিনব্যাপী যে বিদায়যাত্রার আয়োজন করা হয় তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার এই প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আর এই বিদায়যাত্রা কেমন হবে তা এই কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা তার জীবদ্দশায় আরও এক বছর আগেই ঠিক করে গিয়েছিলেন। পরিবারের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য দিয়েছে। মুহাম্মদ আলী দ্য গ্রেট গত শুক্রবার ৭৪ বছর বয়সে মারা যান। শুক্রবার কেন্টাকির কেভ হিল সিমেট্রিতে তাঁকে দাফন করা হয়। তার মরদেহ নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে মোটর শোভাযাত্রা চলে ভক্তদের। শোভাযাত্রা শেষ হয় কেভ হিল সিমেট্রিতে। এখানেই একটি বেসরকারী গোরস্থানে মোহাম্মদ আলীকে দাফন করা হয়। আলীর কফিন বহনকারীদের মধ্যে ছিলেন অভিনেতা উইল স্মিথ এবং মুষ্টিযোদ্ধা লেনক্স লুইস ও মাইক টাইসন। আলীর কফিন বহনকারী হিসেবে টাইসনের নাম পরে যুক্ত হয়। খবর বিবিসি/সিএনএনের। দাফন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের অনেকেই অংশ নেন, অনেকেই টেলিভিশনে সম্প্রচারের দিকে চোখ রাখেন। অনেকে মনে করছেন এই প্রার্থনা অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইসলাম ও তার চর্চাকে পরিচিত করে তুলবে। ১৯৬৪ সালে মুহাম্মদ আলী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এর আগে তার নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে। মুসলমানদের মাঝে অনুপ্রেরণা যোগাতে একজন মুষ্ঠিযোদ্ধা ও বক্তা হিসেবে সারা বিশ্ব ভ্রমণ করেন মুহাম্মদ আলী। দাফন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেশটির বিভিন্ন রাজ্য থেকে মুসলমানরা ছুটে আসেন কেনটাকিতে। দু’দিনব্যাপী আয়োজিত জানাজা, দাফন ও আন্তঃধর্ম প্রার্থনা সভা শুক্রবার পর্যন্ত চলে। শুক্রবার আলীর মরদেহ নিয়ে লুইসভিলের প্রধান প্রধান এলাকা প্রদক্ষিণ করা হয়। বিশেষ করে মুহাম্মদ আলী যেখানে বেড়ে উঠেছেন সেই বাড়ি এবং তার নামে গড়ে তোলা জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার কফিন লক্ষ্য করে ভক্তরা গোলাপের পাপড়ি ছিটায়। আলীর ভক্তরা এ সময় ‘আলী আলী’ বলে কফিনের আশপাশে চিৎকার করতে থাকেন। এই দাফন অনুষ্ঠানে শুক্রবারের আয়োজনগুলোর টিকেট বিক্রি শুরু করার এক ঘণ্টার মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব ও সেলিব্রেটিরা এই কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হন। এদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান ও জর্দানের বাদশাহ আবদুল্লাহ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পারিবারিক কারণে এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। প্রেসিডেন্ট ওবামা তার বড় মেয়ে মালিয়ার গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে যোগদান করায় শুক্রবার এ প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে পারেননি। মোহাম্মদ আলীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত মানবাধিকার নেতা ম্যালকম এক্সের কন্যা আতাল্লাহ শাবাজ, আলীর স্ত্রী লোনি এবং মেয়ে মরিয়ম ও রাশেদা বক্তব্য রাখেন। ১৯৬৪ সালে আলী নেশনস অব ইসলামে যুক্ত হন। পরে তিনি ইসলামের মূলধারায় যুক্ত হন। ইসলাম ধর্ম প্রহণ করলে নিজের নাম ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে পরিবর্তন করে মোহাম্মদ আলী হয়। ওই সময় তিনি বলেন, ক্যাসিয়াস ক্লে ‘দাস নাম’। শুক্রবার কেন্টাকির লুইসভিলে মোহাম্মদ আলীর দাফন অনুষ্ঠানে ২০ হাজার মানুষের জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েট বক্সিংয়ে সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ আলী খ্যাতি অর্জন করেন। এর পরপরই পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধে লড়েন আলী। ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ বলে খ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধা ১৯৬৪ সালে মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন। প্রথম মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন আলী। ৬১টি মুষ্টিযুদ্ধের ৫৬টিতেই জয় পান তিনি। এর মধ্যে ৩৭টিই ছিল নকআউট। ১৯৮১ সালে অবসর নেন মোহাম্মদ আলী। ১৯৯৯ সালে ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ মোহাম্মদ আলীকে ‘স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করে। একই বছর বিবিসি তাঁকে ঘোষণা করে ‘স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য সেঞ্চুরি’।
×