ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ আলীর জানাজা ও শেষকৃত্যে মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১১ জুন ২০১৬

মোহাম্মদ আলীর জানাজা ও শেষকৃত্যে মানুষের ঢল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মোহাম্মদ আলী। শুক্রবার ‘শেষকৃত্য’ শেষে জন্মস্থান কেন্টাকির লুইসভিলে কিংবদন্তি এই বক্সারকে সমাহিত করা হয়। তার আগে বৃহস্পতিবার হয় জানাজা। এ উপলক্ষে কেন্টাকিতে মানুষের ঢল নামে। সাধারণ থেকে সাবেক মার্কিন প্রেসিন্ডেন্ট বিল ক্লিনটন, তারকা অভিনেতা উইল স্মিথ, তুরস্ক প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোয়ানসহ বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে হাজারও মানুষ ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ বক্সারকে চিরবিদায় জানান। জানাজায় ১৪ হাজার, দাফন কার্য ও শেষকৃত্যে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। কফিন বহনকারী দলে ছিলেন স্মিথও- যিনি ২০০১ সালে নির্মিত ‘আলী’ চলচ্চিত্রের মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন। চিরশয্যায় বাস্তবের আলীকে বয়ে নিয়ে যান সিনেমার আলী। ৩ জুন আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৭৪ বছর বয়সী আলী। তিনি দীর্ঘদিন পারকিনসন্স রোগে ভুগছিলেন। অলিম্পিক স্বর্ণ ও বক্সিংয়ের তিন-তিনটি চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী আলী ছিলেন কিংবদন্তিদেরও কিংবদন্তি। একজন ক্রীড়বিদের পরিচয় ছাপিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সাধারণের মহানায়কে। দুই দিনব্যাপী আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জন্মস্থান লুইসভিলের ফ্রিডম হলে পারিবারিক জানাজাসহ ছিল ৩০ মিনিটের প্রার্থনা অনুষ্ঠান। জানাজা পড়ানো ইমাম জায়িদ শাকির বলেন, ‘ইসলামী রীতি অনুযায়ীই আলীর জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।’ শুক্রবার সকালে স্থানীয় রীতি অনুযায়ী কফিন নিয়ে শোকযাত্রার আয়োজন করা হয়- শৈশবের বাড়ি, আলী সেন্টার, দ্য সেন্টার ফর আফ্রিকান-আমেরিকান হেরিটেজ হয়ে সেটি মোহাম্মদ আলী বুলভার্ড অতিক্রম করে। কবরস্থানে যাওয়ার পথ ছিল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ঢাকা, যেমনটা তিনি জীবদ্দশায় ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। আর বিকেলে আন্তঃধর্মীয় অনুষ্ঠানে নামে হাজারও মানুষের ঢল। স্মরণ অনুষ্ঠানের জন্য ১৫ হাজার বিনামূল্যের টিকেট আগের দিনই আধা ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, খ্রীস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করা আলীর প্রথম নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে। ইসলাম গ্রহণের পর নাম পাল্টে রাখেন মোহাম্মদ আলী। আমেরিকার মুসলিম আধ্যাত্মিক নেতা শেরম্যান জ্যাকসন বলেন, ‘বড় নিঃসঙ্গ বোধ করছি। কঠিন, ভারি সুন্দর এবং জীবনের দৃঢ় কিছু চলে গেছে।’ পুরো অনুষ্ঠানটি টিভিতে লাইভ সম্প্রচার করা হয়, যেটিকে আমেরিকানদের জন্য ‘শিক্ষনীয়’ মুহূর্ত বলে অভিহীত করেন তিনি। আয়োজনে ছিলেন মুষ্ঠিযুদ্ধ ডন কিং, মানবাধিকার কর্মী জেসি জ্যাকসন ইউসুফ। অনেক মার্কিন মুসলমান বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে লুইসভিলে ছুটে আসেন। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েটে স্বর্ণ জয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন আলী। দ্য গ্রেটেস্টÑ বলে খ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধা ১৯৬৪ সালে সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন। ৬১ পেশাদার লড়াইয়ের ৫৬টিতেই জিতেছেন বিরল প্রজাতির এই বক্সার। যেখানে ৩৭ বারই প্রতিপক্ষকে সরাসরি নকআউট করেন- উভয় ক্ষেত্রে যা রেকর্ড। ১৯৭৪ সালে মধ্য আফ্রিকার জায়ারের কিনশাসাতে জর্জ ফোরম্যানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক লড়াই ‘র‌্যাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ নামে পরিচিত। তার বিখ্যাত লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছে ১৯৭১Ñএ জেব ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’ এবং ‘থ্রিলা ইন ম্যানিলা’।
×