ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাস্তার একি হাল!

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১১ জুন ২০১৬

রাস্তার একি হাল!

রাজধানীর মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ এলাকার সড়ক যানবাহন চালকদের জন্য ভীতিকর বলে পরিচিত। যানজট এখানে নিত্যসঙ্গী। গুরুত্বপূর্ণ এই যোগাযোগ কেন্দ্রের চারপাশে ফ্লাইওভার নির্মিত হলে চলাচল আরও সহজ হবে এমন ধারণা থেকেই হয়ত এখানে ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য সাময়িক কিছু দুর্ভোগ যে হবে সেটাও সবার জানা। যে কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এমন কষ্ট হয়েই থাকে। সাধারণভাবে মানুষও তা মেনে নেয়। কারণ, সামনে সুদিন! কিন্তু এলাকাটি এখন পথচারীদের জন্য এক যন্ত্রণার নাম। বুধবারের একটি দৃশ্য, রাস্তার ওপর বিশাল বিশাল গর্ত। গর্তে জমেছে বৃষ্টির পানি আর কাদায় দুর্ভোগ একাকার। এই চিত্র দীর্ঘদিনের। তবে এখন বর্ষা মৌসুম, তাই দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়েছে। দুর্ভোগ লাঘবে ব্যানার হাতে পানিতে দাঁড়িয়ে আছেন মৌচাক-মালিবাগসহ আশপাশের মানুষ। কারণ, রাস্তার চিত্র দেখতে আসছেন মন্ত্রী। মন্ত্রী এলেন, দেখলেন। বিশাল গর্ত। থৈ থৈ পানি। পিচ উঠে গেছে। কোন কোন স্থানে ইটের খোয়াও নেই। পিচের কোন চিহ্নই দেখা যায় না। অবস্থা এমন যে, হেঁটেও চলা দায়। প্রশ্ন হচ্ছে সত্যিই কি এটি কোন রাস্তা? দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন ছোট ছোট ডোবা। যানজটের এই নিত্য দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে চলতে হচ্ছে পথচারীদের। যার প্রভাব পড়ছে আশপাশের সড়কসহ গোটা রাজধানীতে। এটি নির্মীয়মাণ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তার দৃশ্য। অথচ রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পসমূহের অন্যতম এই ফ্লাইওভার। সড়কের বেহালদশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পানি সরিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সড়কটি মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আল্টিমেটাম দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগেও একাধিকবার রাস্তাটি মেরামতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টরা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না। প্রায় নয় কিলোমিটার প্রকল্প এলাকার পাঁচ কিলোমিটারই এখন চলাচলের অনুপযোগী। অথচ এ নিয়ে কারও কোন মাথাব্যথা নেই। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের যদি এই চিত্র হয় তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। শুধু মালিবাগ-মগবাজারই নয়, যানজট এখন পুরো রাজধানীর নিত্যদিনের যন্ত্রণার নাম। যানজটের অনেক কারণ রয়েছে। এ নিয়ে গবেষণাও কম হয়নি। টানা বৃষ্টিতে যানজটে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এখন রমজান মাস। ক’দিন পরই ঈদুল ফিতর। বলাবাহুল্য, যানজট এ সময় আরও অসহনীয় হয়ে উঠবে। আসলে বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পথে সমন্বয় সাধনসহ যেসব সমস্যা দেখা দেয় তা দূর করা প্রয়োজন। মালিবাগ-মগবাজার প্রকল্প নিয়ে যে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে তার তিক্ত অভিজ্ঞতা এ দাবিকে আরও জোরালো করছে, তাতে সন্দেহ নেই। মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের মন্থর গতিতে উদ্বিগ্ন পথচারীরা। তারা বুঝতে পারছেন, অশেষ সম্ভাবনার এ প্রকল্প এ মুহূর্তে জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সময়ের কাজ সময়ে না হলে বাড়তি মূল্য দিতে হয়। দুর্ভাগ্য যে, এ খেসারত চূড়ান্ত বিচারে জনগণই দিয়ে থাকে, যারা এখন প্রতিনিয়ত চলার পথে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। দ্রুত এই দুর্ভোগের অবসান হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
×