ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইটি ডটকম ডেস্ক

কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ট্যাব

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১১ জুন ২০১৬

কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ট্যাব

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তির চিত্রপট বদলে যাচ্ছে। একটা সময় পর্যন্ত কাজ বলতেই ডেস্কটপ কম্পিউটারকে বুঝালেও সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে ল্যাপটপ। এখন ট্যাবলেট পিসিও অফিসের কাজে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিতে শুরু“করেছে। কিন্তু কাজের গতি আর মান বজায় রাখতে কেমন ধরনের ট্যাবলেট পিসি দরকার সেটা আমরা অনেকেই জানি না। ট্যাবলেট পিসি বা সংক্ষেপে ট্যাব এখন আমাদের দেশেরও বেশ জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি পণ্য। এ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের নানা দামের ট্যাব এখন আমাদের দেশেও বেশ সহজলভ্য। অবশ্য প্রচলিত অফিস-ওয়ার্ক বা মূলধারার কাজের জন্য এখনও ট্যাবলেট পিসি আমাদের দেশে ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। উন্নত বিশ্বের কথা অবশ্য আলাদা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এক প্রযুক্তি গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য, জার্মানি বা ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে অফিসের মূলধারার কাজের জায়গাতেও প্রায় ৪০ শতাংশ স্থান দখল করে নিয়েছে ট্যাবলেট পিসি। কাজের উপযোগী ট্যাবলেট পিসির কনফিগারেশন কেমন হওয়া প্রয়োজন, তা তুলে ধরা হলো এই লেখায়। স্টোরেজ ॥ কাজের ক্ষেত্রে ট্যাবলেট পিসি ব্যবহার করতে চাইলে শুরুতেই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে এর স্টোরেজের পরিমাণ। স্মার্টফোনের মতো ডিভাইসে ইন্টার্নাল মেমোরি খুব বেশি দরকার না হলেও কাজের ক্ষেত্রে ট্যাবলেট পিসি ব্যবহার করতে চাইলে একটু বেশিই স্টোরেজ প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে মূল কাজগুলোকে ইন্টার্নাল স্টোরেজে রাখাটাই শ্রেয় হবে। কেননা ইন্টার্নাল বা বিল্ট-ইন স্টোরেজের গতি এক্সটার্নাল স্টোরেজের চাইতে বেশিই হবে। স্টোরেজের পরিমাণ কতটা বেশি প্রয়োজন হবে, তা নির্ভর করবে আসলে আপনার কাজের গতি-প্রকৃতির ওপর। আপনার কাজের ক্ষেত্রে যদি মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে, তাহলে যে কোন ধরনের ট্যাবেই বিল্ট-ইন বা ইন্টার্নাল স্টোরেজ অবশ্যই ৩২ গিগাবাইট হতে হবে। বর্তমানে অবশ্য ক্লাউড স্টোরেজের বহুল ব্যবহার এই ক্ষেত্রে খানিকটা সুবিধা দিতে পারে। আর্কাইভ বা পুরনো ফাইলগুলোকে ক্লাউড এ্যাকাউন্টে রাখলে সেক্ষেত্রে হালনাগাদ কাজগুলোই কেবল ট্যাবে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্টোরেজ নিয়ে চিন্তা খানিকটা হলেও কমবে। আবার আর্কাইভ কাজগুলো এক্সটার্নাল একটি মেমোরি কার্ডেও সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রেও ইন্টার্নাল স্টোরেজকে খানিকটা চাপমুক্ত রাখতে পারবেন। উইন্ডোজ ট্যাবে অবশ্য আরও বাড়তি স্টোরেজ পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। একটু প্রফেশনাল ধরনের ইন্টেল এ্যাটম প্রসেসরে চালিত উইন্ডোজ ট্যাবে ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজের দেখা মিলে থাকে। আর ইন্টেল কোর প্রসেসরে ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজও রয়েছে। উইন্ডোজ ট্যাবে তাই স্টোরেজে একটু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। ডিসপ্লে ॥ কাজের ক্ষেত্র বিবেচনায় রাখলে স্টোরেজের মতোই সমান গুরুত্ব দাবি করে ট্যাবের ডিসপ্লে। ট্যাবলেট পিসি ব্যবহারের অন্যতম মূল একটি উদ্দেশ্যের জায়গায় রয়েছে সহজে বহনযোগ্যতা। সেক্ষেত্রে ডিসপ্লের আকার কতটা বেশি হলে কাজের স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে বহনযোগ্যতার সুবিধাও নিশ্চিত হবে, সেটা ভেবে দেখার মতো বিষয়। সাধারণভাবে ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি আকৃতির ট্যাবলেট পিসিগুলো বহনে সুবিধা হয়ে থাকে। আবার একটু ভারি কাজের জন্য এমন আকৃতির ডিসপ্লে খানিকটা ছোটও মনে হতে পারে। অন্যদিকে সরাসরি ল্যাপটপের বিকল্প হিসেবে ১২ ইঞ্চির মতো বড় আকারের ডিসপ্লের ট্যাবলেট পিসিও পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আসলে বেশকিছু অপশন রয়েছে ট্যাব কেনার জন্য। একদিকে যেমন রয়েছে ৮ ইঞ্চি আকৃতির ট্যাব, অন্যদিকে রয়েছে ৯.৭ বা ১০ ইঞ্চি আকৃতির ট্যাবও। এর মাঝামাঝি কাজ ও বহনযোগ্যতার সুবিধার জন্য ৮.৯ ইঞ্চি বা ৯ ইঞ্চি আকৃতির ট্যাবও রয়েছে বাজারে। আপনার কাজের ধরনের ওপরেই মূলত বহনযোগ্যতার সঙ্গে আপোস করতে হবে ডিসপ্লে আকারে। ডিসপ্লের রেজ্যুলেশনও বিবেচনার দাবি রাখে। ভাল মানের সব ট্যাবেই অবশ্য ডিসপ্লে রেজ্যুলেশন পাওয়া যাবে ভাল। সেক্ষেত্রে ১২৮০ বাই ৮০০ পিক্সেল রেজ্যুলেশন হতে পারে কাজের জন্য বেশ আদর্শ। অবশ্য ১০৮০ পিক্সেল রেজ্যুলেশনেও প্রফেশনাল কাজ করতে অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন না। ব্যাটারি লাইফ ॥ প্রসঙ্গ যখন কাজের, তখন আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি লাইফও গুরুত্বপূর্ণ। কাজের মাঝখানে যখন-তখন ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই কাজের কোন কথা নয়। আবার ট্যাবলেট পিসির মতো ডিভাইসে ভারি কাজ করলে ব্যাটারি একটু বেশি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। তাই ব্যাটারির সক্ষমতাকে গুরুত্ব দিয়ে কিনতে হবে কাজের ট্যাব। এক্ষেত্রেও অবশ্য ডিসপ্লের আকারের ওপর নির্ভর করতে হবে আপনাকে। ডিসপ্লের আকার যত বড় হবে, ব্যাটারির সক্ষমতা তত বেশি হলে ভাল হয়। ব্যাটারি নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত থেকে কাজ করতে চাইলে তাই ৬০০০ এমএএইচ থেকে ৮০০০ এমএএইচ সক্ষমতার ব্যাটারি ট্যাবে থাকলে ভাল। আবার ট্যাবভেদে একই ব্যাটারি সক্ষমতায় ব্যাটারি ব্যাকআপেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তাই ব্যাটারি ব্যাকআপের রেটিং দেখেও কিনতে পারেন ট্যাব। সেক্ষেত্রে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম ডিভাইসগুলো আপনার জন্য হবে আদর্শ। আবার ৭ ঘণ্টার ব্যাটারি ব্যাকআপকে যদি কাজের জন্য যথেষ্ট মনে করেন, সেক্ষেত্রেও ডিভাইসের ব্যাটারি ব্যাকআপে ৮ ঘণ্টা রেটিং থাকা ভাল। পারফর্মেন্স ॥ ট্যাবের পারফর্মেন্স বিবেচনায় আনলে হার্ডওয়্যার কনফিগারেশনে প্রধানত দুইটি যন্ত্রাংশের দিকে নজর দিতে হবে। এর একটি হলো প্রসেসর এবং অন্যটি র‌্যাম। কাজের ক্ষেত্রে প্রসেসরকে তুলনা করা যায় ট্যাবের মস্তিষ্কের সঙ্গে। প্রসেসর বিবেচনার ক্ষেত্রে দুইটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয় গতি (গিগাহার্জে) এবং কোর। প্রসেসরের গতি যত বেশি হবে প্রসেসর তত দ্রুত কাজ করতে পারবে, এটাই স্বাভাবিক। আর প্রসেসরের কোরের পরিমাণ যত বেশি হবে, সেই প্রসেসর তত বেশি কাজের চাপ নিতে পারবে। মাল্টিটাস্কিংয়ের মতো কাজের জন্যও প্রসেসরের কোর সংখ্যা বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রসেসর যদি ট্যাবের মস্তিষ্ক হয়, র‌্যামকে তাহলে তুলনা করতে হবে ট্যাবের ক্ষণস্থায়ী (টেম্পোরারি বা শর্ট-টার্ম) মেমোরির সঙ্গে। এক্ষেত্রে র‌্যাম যত বেশি থাকবে, ট্যাব তত বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবে এবং মাল্টিটাস্কিংয়েও সুবিধা পাওয়া যাবে। এ্যান্ড্রয়েড ট্যাবের ক্ষেত্রে এখন কোয়াড-কোর তো বটেই, অক্টাকোর প্রসেসরেরও দেখা মিলছে। উইন্ডোজ ট্যাবে অবশ্য কোরআই প্রসেসরও পাওয়া যায়। আর এ্যান্ড্রয়েড ট্যাবে ২ থেকে ৩ গিগাবাইট র‌্যাম আদর্শ হতে পারে কাজের জন্য। আরও ভারি কাজের জন্য উইন্ডোজ ট্যাবে এখন ৪ থেকে ৮ গিগাবাইট পর্যন্ত র‌্যামের দেখা মিলে থাকে। সাধারণভাবে তাই এ্যান্ড্রয়েড ট্যাবে ২ গিগাহার্জ গতির কোয়াড-কোর প্রসেসরের সঙ্গে ২-৩ গিগাবাইট র‌্যাম হতে পারে আপনার পছন্দের প্রসেসর-র‌্যাম কম্বিনেশন। আর মাইক্রোসফটের নিজস্ব সারফেস ট্যাবের ক্ষেত্রে ১.৭ গিগাহার্জ কোরআই৭ প্রসেসরের সঙ্গে ৮ গিগাবাইট পর্যন্ত র‌্যামের দেখা পাবেন। অপারেটিং সিস্টেম ॥ ট্যাবের ক্ষেত্রে অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্বও কম নয়। এক্ষেত্রে এ্যাপলের আইওএসের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি নানা ধরনের বৈচিত্র্যময় সব কাজের এ্যাপস। এ্যান্ড্রয়েডেও এখন প্রচুর এ্যাপস রয়েছে পেস্টোরে। তাছাড়া ট্যাব নির্মাতাদের প্রায় সকলেই এ্যান্ড্রয়েডের বিশেষ কাস্টমাইজ ইন্টারফেস ও এ্যাপস ব্যবহার করে থাকে। ফলে এ্যান্ড্রয়েডও এখন পিছিয়ে নেই। এক্ষেত্রে উইন্ডোজ ট্যাবের একটি বড় সুবিধা হলো সব ধরনের উইন্ডোজ ডিভাইসেই একই এ্যাপসগুলো ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। উইন্ডোজ ৮ থেকে এই প্রচলন শুরু হয়েছে। উইন্ডোজ ১০ বাজারে আসলে তা সকল ডিভাইসের জন্যই একই সংস্করণ হিসেবে বাজারজাত করা হবে। আর এদের সকল এ্যাপসও তখন একই হয়ে যাবে। আবার সাধারণ কাজের ক্ষেত্রে উইন্ডোজ প্যাটফর্ম ব্যবহারের পূর্ব-অভিজ্ঞতার কথাও মাথায় রাখতে হবে। আপনার অফিস যদি মূলত এ্যাপল ডিভাইসের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে থাকে, তাহলে আইপ্যাড এয়ার বা আইপ্যাড মিনি হতে পারে ভাল পছন্দ। আর অফিসের উইন্ডোজ এনভায়রনমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করতে চাইলে সারফেসের যে কোন সংস্করণ ছাড়াও ডেল ও লেনোভোর বেশ কয়েকটি ট্যাব মডেল চলে আসতে পারে আপনার পছন্দের তালিকায়।
×