ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিনাজপুরে কয়লা ও শিলার বড় আধার

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১১ জুন ২০১৬

দিনাজপুরে কয়লা ও শিলার বড় আধার

বরেন্দ্র অঞ্চল দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী জনপদকে বলা হয় খনিজ সম্পদের ভা-ার। জরিপ অনুসন্ধানের আগে কেউ ভাবতে পারেনি এই মাটির ভূগর্ভে লুকিয়ে আছে এত সম্পদ। ১৯৬১ সালে জাতিসংঘের সহায়তায় পরিচালিত খনিজ সম্পদ জরিপে আবিষ্কৃত হয় জামালগঞ্জের কয়লা। তবে গভীরতার কারণে এই কয়লা তোলার ব্যাপারে সরকার এগোয়নি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর তাদের অনুসন্ধানে ১৯৮৫ সালে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ার ভূপৃষ্ঠের ১১৯ থেকে ৫০৬ মিটার গভীরতায় আবিষ্কৃত হয় কয়লাক্ষেত্র। মাত্র ৬.৬৮ বর্গকিলোমিটার সমীক্ষিত ও মূল্যায়নকৃত এলাকায় এখানে কয়লার মজুদের পরিমাণ ৩৯০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ওডিএর আর্থিক সহায়তায় পেট্রোবাংলা ১৯৮৭ হতে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ওয়ার্ড্রেল আর্মস্ট্রং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কয়লা মজুদের ওপর বিস্তারিত আর্থ-কারিগরি সমীক্ষা পরিচালনা করে । এই সমীক্ষার ভিত্তিতে বছরে এক মিলিয়ন মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ভূগর্ভস্থ খনি উন্নয়নের লক্ষ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের পিপি ১৯৯৩ সালের ২১ এপ্রিল অনুমোদিত হয় এবং বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯৩ সালের জুলাই মাসে। পেট্রোবাংলা এবং চীনা কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের মধ্যে ১৯৯৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গঠন করা হয় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড। খনিতে উৎপাদিত কয়লার ওপর ভিত্তি করে ২০০৩ সালে পিডিবি বড়পুকুরিয়ায় কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করে। ২০০৫ সালের ৩০ জুন এক হাজার চার শ’ ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে খনি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ করে। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্প ॥ বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানকালে ১৯৭৪ সালে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলাধীন হরিরামপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়ায় ভূপৃষ্ঠের ১৩৬ মিটার গভীরতায় উন্নতমানের কঠিন শিলার সন্ধান পায়। ১৯৭৬-৭৭ সালে কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসির মাধ্যমে এই শিলা উত্তোলনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়। মধ্যপাড়ার ভূগর্ভের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অফুরন্ত কঠিন শিলার আধার। যার বিস্তৃতি প্রথম পর্যায়ে ১.৪৪ বর্গকিলোমিটার। খনি বাস্তবায়নের জন্য তৎকালীন সরকার ১৯৭৮ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন করে। ১৯৭৯ সালে সৌদি উন্নয়ন তহবিল ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আশ্বাসের ভিত্তিতে জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শেষ হয়। ১৯৮৯-৯০ সালে জাপানের পরামর্শক নিপ্পন কোই কোম্পানির মাধ্যমে বাজার জরিপ ও আর্থিক মূল্যায়নের কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ ও উত্তর কোরীয় সরকারের মধ্যে অর্থনৈতিক কারিগরি, বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৯৪ সালের ২৭ মার্চ উত্তর কোরিয়ার সাউথ সাউথ কো-অপারেশন কর্পোরেশন এবং পেট্রোবাংলার মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২৬ জুন এটি কার্যকর হয়। বর্তমান অবস্থা ॥ প্রায় এক বছর ধরে খনির উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রয়েছে। আগে শিলা তোলার দায়িত্বে ছিল ব্লু স্টার নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে জিটিসি (জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম) ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি উৎপাদন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শিলা উৎপাদন শুরু করে। ৬ মাসের মধ্যে তারা তিন শিফটে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার মে. টন শিলা উত্তোলন করছিল। শিলা বাজারজাতে সুফল দেখা গিয়েছিল। এমনকি মধ্যপাড়া খনি রেল স্টেশন থেকে ওয়াগনে বিপুল পরিমাণ শিলা রেল সেক্টরে আসা শুরু হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হঠাৎ সাময়িক উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে জিটিসি। এতে সরকারের বিপুল রাজস্ব ক্ষতি হয়। জিটিসি বলছে, খনি উন্নয়নে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে তারা উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। -শ. আ. ম হায়দার পার্বতীপুর থেকে
×