ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্গাপুরে তিন শ’ বছরের চিনামাটির মজুদ

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১১ জুন ২০১৬

দুর্গাপুরে তিন শ’ বছরের চিনামাটির মজুদ

সিরামিক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল- ‘চিনামাটি’ বা ‘সাদামাটি’। ইংরেজীতে বলা হয়- ‘চায়না ক্লে’ বা ‘হোয়াইট ক্লে’। নেত্রকোনার সীমান্ত জনপদ দুর্গাপুরের কয়েকটি পাহাড়ী এলাকায় রয়েছে এ মাটির খনি। ঢাকা, গাজীপুর প্রভৃতি অঞ্চলের সিরামিক কারখানাগুলোয় প্রতিবছর এখান থেকে বিপুল পরিমাণ চিনামাটি সরবরাহ করা হয়। অথচ যেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ- সেখানে, অর্থাৎ দুর্গাপুর বা নেত্রকোনায় আজও এ ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উপরন্তু অপরিকল্পিত এবং যাচ্ছেতাই ভাবে মাটি আহরণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয়রা। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পাশাপাশি সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে উপযুক্ত রাজস্ব থেকে। দুর্গাপুর উপজেলার মাইজপাড়া, আড়াপাড়া ও পাঁচকাহনীয়া (বিজয়পুর) মৌজায় দেশের বৃহৎ এ চিনামাটির খনি। এই খনিজ মাটি সিরামিক পণ্য বা তৈজসপত্র ছাড়াও টাইলস, ইনস্যুলেটর, রিফ্যাক্টরি, কাঁচ, স্যানিটারি ওয়্যার ও কাগজ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে এখানে চিনামাটির খনি আবিৃষ্কত হয়। আর মাটি তোলা শুরু হয় ১৯৬০ সালে। সর্বপ্রথম কোহিনূর কেমিক্যালস মাটি তোলার কাজ শুরু করে। ১৯৭৩ সালে এতে যোগ দেয় বিসিআইসি। সর্বশেষ ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে পরিচালিত ভূতাত্ত্বিক জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ এসব এলাকার ১৪ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ৬০ মিটার গভীর পর্যন্ত দুই দশমিক ৪৭ মিলিয়ন টন চিনামাটি মজুদ রয়েছেÑ যা দিয়ে দেশের অন্তত তিন শ’ বছরের চাহিদা মেটানো সম্ভব। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো এই খনিজ সম্পদ তদারকি করে। বর্তমানে ১০-১২টি কোম্পানির নামে ওই খনিজ মাটি আহরণের মাইনিং লিজ রয়েছে। কিন্তু জানা গেছে, অধিকাংশ কোম্পানিই নীতিমালা লঙ্ঘন করে যাচ্ছেতাই বা অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে সাদামাটি উত্তোলন করায় বিভিন্ন সময়ে এলাকাটির প্রকৃতি বা পরিবেশের ভারসাম্যের যেমন ক্ষতি হয়েছেÑ তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় আদিবাসীরা। তাদের অনেকে ভিটামাটি থেকে পর্যন্ত উচ্ছেদ হয়েছে। পাশাপাশি বিপুল অঙ্কের রাজস্বও ফাঁকি দিচ্ছে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো। এ কারণে পরিবেশ সংগঠন ‘বেলা’র রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বর্তমানে মাটি উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবিÑ ভবিষ্যতে যদি কোম্পানিগুলোকে মাটি উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়- তাহলে যেন অবশ্যই যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ এবং সঠিকভাবে তদারকি করা হয়। -সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে
×