ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টুটুল মাহফুজ

সাগরেরও তাপমাত্রা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১০ জুন ২০১৬

সাগরেরও তাপমাত্রা বাড়ছে

উষ্ণায়নের ফলে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন সাগরের পানির সম্প্রসারণের কারণেই এমনটা ঘটছে । কিন্তু এর অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে? ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে? সেজন্য আমাদের কী করা উচিত? উষ্ণায়নের ফলে সাগরের জলের উচ্চতা বেড়ে চলেছে। বর্তমানে ‘সি লেভেল’ বাড়ছে বছরে তিন মিলিমিটার করে। তার একটা কারণ মেরু অঞ্চলের তুষার ও হিমবাহের বরফ গলা। অপরদিকে তাপমাত্রা বাড়ার ফলে সাগরের পানির সম্প্রসারণ ঘটছে। এভাবে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার ফলে বিভিন্ন দ্বীপরাজ্য ও বাংলাদেশ বা নেদারল্যান্ডসের মতো উপকূলবর্তী দেশগুলো বিপদের মুখে। এ যাবত ধরে নেয়া হয়েছিল যে, বিশ্বব্যাপী বরফ গলার ফলেই সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ার ফলে সাগরের জলরাশির সম্প্রসারণ ঘটছে, অর্থাৎ তার ঘনত্ব কমে গিয়ে আয়তন বাড়ছে। দৃশ্যত ‘সি লেভেল’ বাড়ার এটাও একটা বড় কারণ। বন বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওডেসি এ্যান্ড জিওইনফর্মেশন ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ইয়ুরগেন কুশে বলেন, আমরা গত ১২ থেকে ১৫ বছরের ফলাফল পরীক্ষা করে দেখেছি, বছরে তিন মিলিমিটার করে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে। এ পর্যন্ত আমরা ভেবেছিলাম যে, এর এক-চতুর্থাংশ সম্ভবত উষ্ণায়নের ফলে। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, ‘সি লেভেল’ বাড়ার ৫০ শতাংশ কারণ হলো উষ্ণায়নের ফলে সাগরের পানির সম্প্রসারণ। নতুন তথ্য বন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটি স্যাটেলাইট থেকে পাঠানো ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, গত ১২ বছরে উষ্ণায়নের এই বিশেষ ফলশ্রুতি যা ভাবা গিয়েছিল, তার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে স্যাটেলাইটের ডাটা অ্যানালাইজ করে সাগরের পানির সম্প্রসারণ নিখুঁতভাবে হিসাব করা যায়। অপরদিকে উষ্ণায়নের ফলে পানির সম্প্রসারণ যদি সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ায় একটা বৃহত্তর ভূমিকা পালন করে থাকে, তাহলে অতীতে অনেক কম তুষার গলা জল সাগরে গিয়ে পড়েছে। কারণ সাগরের পানির উচ্চতা আগের মতোই বছরে তিন মিলিমিটার করে বেড়ে চলেছে। তবে এর একটা খারাপ দিকও আছে। এর অর্থ, সাগর আরও অনেক বেশি তাপ শুষে নিয়েছে। জিওডেসি অ্যান্ড জিওইনফর্মেশন ইনস্টিটিউটের ডক্টর-ইঞ্জিনিয়ার রোয়লফ রিটব্রুক বলেন, ‘‘সাগরের পানি যে আগের চেয়ে বেশি গরম হচ্ছে, সেটার তাৎপর্য আছে। কারণ সাগরের গরম পানি থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়। কাজেই ধরে নেয়া যেতে পারে যে, সাগরের পানি যত গরম হবে, ততই আরও জোরালো ঘূর্ণিঝড় অথবা আরও ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে।” জলের তাপমাত্রা বাড়লে সেই তাপ বাষ্প সৃষ্টি করে। বাষ্পের মাধ্যমে সেই শক্তি বাতাসে গিয়ে পড়ে, ফলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। দেখা দেয় ব্যাপক বৃষ্টিপাত আর বন্যা । পানি আর বাতাসের মধ্যে তাপমাত্রার ব্যবধান যত বেশি হবে, ঘূর্ণিঝড় ঠিক তত বেশি জোরালো হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আরও ঘন ঘন আবহাওয়ার দুর্যোগ ঘটবে, বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। শতাব্দীর শেষ অবধি ঝড় আর বন্যা থেকে ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যে পদক্ষেপ প্রয়োজন এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষভাবে বিপন্ন। এখানে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে দ্রুতহারে। একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ কোটি মানুষের বাস এমন এলাকায়, যেখানে সাগরের জল বাড়লে, তাদের ঘরছাড়া হতে হবে। প্রফেসর ইয়ুরগেন কুশে মনে করেন, ‘‘আমাদের বিভিন্ন ধরনের ‘স্ট্র্যাটেজির’ প্রয়োজন পড়বে। এমন এলাকা আছে, যেখানে বাঁধের উচ্চতা বাড়াতে হবে – একে বলে মানিয়ে নেয়ার নীতি। আবার এমন এলাকা আছে, যেখানে উপকূল থেকে সরে যেতে হবে। এলাকা অনুযায়ী দেখতে হবে, সেখানে কি করা যায়, তার খরচ কীরকম পড়বে। আমাদের এখনই এসব নিয়ে ভাবতে হবে।” সূত্র : বিসিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×