[উৎসর্গ : কবি-সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক- শ্রদ্ধাস্পদেষু]
তারিক সুজাত
হাজার নাগরিকের আমি একজন
প্রাচীন এ জনপদে
কতবার আমি ঘুম-ভাঙানিয়া গানে
শহীদ মিনানে দাঁড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বাণী শুনিয়েছি
-আমাকে আপনারা ক্ষমা করবেন।
আজ যখন দূরে বসে ভাবি
সেই শৈশবের স্মৃতি, Ñ ঘোড়ার গাড়ি, গাড়োয়ান
বুড়িগঙ্গা, দোলাইখাল, সদরঘাটের লঞ্চের ভোঁ ভোঁ ...
কলেজিয়েট স্কুল, জগন্নাথ কলেজ
আনিস, আহমদ, তোফাজ্জল, আমির আলী
ফিরে যাই যৌবনের খোলা দরোজায়
বায়ান্নর সন্তান আমি
Ñ আমাকে আপনারা ক্ষমা করবেন।
রাত্রি যখন তন্দ্রা যায়, নগরীর ল্যাম্পপোস্টগুলো
বিষণœ হলুদ আলোর রেখা হয়ে
জানালার শিক গড়িয়ে বিছানার পাশে এসে বসে,
আমার কলম তখনও জেগে থাকে লেখার টেবিলে
আমি রেসকোর্স ময়দানে ধাবমান ঘোড়ার
খুরের শব্দের বদলে শুনি
প্রিয় মুজিব ভাইয়ের ডাক... আমার প্রজন্ম,
৫২ থেকে নগ্ন পায়ে হেঁটে হেঁটে আসে একাত্তরে
পরাণের গহীন ভেতর বাংলাদেশ কাঁদে!
অসময়ে কান্না থামাতে পারি না
ফুসফুসের বেয়াড়াপনাও আমি ক্ষমা করে দিতে পারি
কিন্তু
প্রিয় মানুষের হাসি হাসি মুখ দেখবো না,
যাঁরা প্রবল আলোর ঝাঁঝালো মঞ্চে
আমার পাশে বসেছিলেন
কাঠফাটা রোদে নগরীর অলিতে গলিতে
যাঁদের নিয়ে বেড়িয়েছি
সন্তানসম দুই মানিক আমার!
তোমাদের ঘড়ির কাঁটাগুলো এখন এতো দ্রুত ঘোরে
আমার মন্থর শ^াস-প্রশ^াস নিয়ে
তোমাদের প্রসারিত দুই বাহু
আর আলিঙ্গন করতে পারি না
Ñআমাকে আপনারা ক্ষমা করবেন।
কবিতার মঞ্চ, নাট্যশালার ঝলমলে আলো ফেলে
যেদিন সন্ধ্যায় আমি আমার প্রিয় নগরী ছেড়ে এসেছি
তোমাদের হাতে তুলে দেয়া চাবি Ñ সেই চাবি!
যে চাবি কেবল দ্রুতলয়ে শিখে ফেলে
মানবিক সম্পর্কের দরোজাগুলো রুদ্ধ করে দিতে
প্রবাসের বন্ধ ঘরে, ক্লান্ত ফুসফুসে
যখন আমার প্রিয় রমনার একটু হাওয়া প্রয়োজন
তখন কেবল এই বৃদ্ধ কলমটি
পুরনো বন্ধুর মতো পাশে রয়ে গেলো!
কোথাও আর কেউ নেই
বিক্রমাদিত্যহীন এই দেশে
আর কোনো কালিদাস কী জন্ম নেবে না?
Ñ আমাকে আপনারা ক্ষমা করবেন।