ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা ‘জেনে রেখো আমি এখনো মরিনি’

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১০ জুন ২০১৬

ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা  ‘জেনে রেখো আমি এখনো মরিনি’

‘কালো ঘোড়া আর/অশুভ লোকেরা/চলে গিটারের/সুড়ঙ্গপথে।’ স্প্যানিশ ভাষার ক্ষণজন্মা কবি, চিত্রশিল্পী, নাট্যকার ও সঙ্গীত পরিচালক ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা সরাসরি কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ গ্রহণ করেননি; তারপরও তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, রাজনৈতিক ইস্যুতেই। স্পেনের এক সময়ের দাপুটে সামরিক কর্মকর্তা এবং পরবর্তীতে দক্ষিণপন্থীদের ঐক্যের প্রতীক ফ্রান্সিসকো ফ্রাংকোর ফালাঞ্জিস্ট বাহিনীরÑ‘বুদ্ধিজীবী নিপাত যাক’ কর্মসূচীর মাত্র তিন দিনের মাথায় হত্যাকা-ের শিকার হন বিশ্বসাহিত্যের এই প্রবাদপুরুষ ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা! সেদিন ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে যাওয়া স্পেনের দক্ষিণপন্থী কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ লোরকা নামের একজন মহানশিল্পীর মর্যাদা বুঝেনি। আর তাইÑ ‘পথের ওপরে ওরা তাকে ফেলে রেখে গেল মৃত/বুকে গাঁথা ছুরি।/চিনল না কেউ তাকে।/কেঁপে উঠল কীভাবে যে পথের লণ্ঠন!’Ñলোরকা। ভাগ্যবিড়ম্বিত লোরকা জন্মেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সদ্য-হেরে যাওয়া একটি ক্ষত-বিক্ষত রাষ্ট্রÑ স্পেনে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে তামাম রাষ্ট্রযন্ত্র তখন হুমকির মুখে। দেশজুড়ে ভয়ঙ্কর অস্থিরতা বিরাজ করছিল। রাষ্ট্রের এরূপ দুর্বলতাকে পুঁজি করে দক্ষিণপন্থী ও প্রগতিপন্থীদের মধ্যে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। ইতালির ফ্যাসিবাদী বেনিতো মুসোলিনির সরকার ও জার্মানের নাৎসি বাহিনীর কর্ণধার এ্যাডলফ হিটলার দক্ষিণপন্থীদের পক্ষদুষ্ট হয়ে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহ করে পরিস্থিতিকে আরও ঘোটালে এবং পরিত্রাণরহিত করে তোলে। ফলে ধীরে ধীরে স্বৈরতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হয় দেশটি। তারই জের ধরে দেশের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও অস্থিরতা চলতে থাকে যুগের পর যুগ। একসময় বেঁধে যায় গৃহযুদ্ধ। এই গৃহযুদ্ধেটির মধ্যে অবশ্য লুকিয়ে ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বইঙ্গিত। সেই গৃহযুদ্ধেরই প্রথমদিককার বলি হলেন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশ্ববিখ্যাত কবি ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকাসহ অগণিত বুদ্ধিজীবী। লোরকার একমাত্র অপরাধÑ তিনি শ্রমিকদের এক বামপন্থী জোটের পত্রিকায় লেখালেখি করতেন এবং এ্যাডলফ হিটলার ও পর্তুগিজ স্বৈরশাসক আন্তোনিও সালাজারের বিরুদ্ধে সরাসরি বিবৃতি দিতেন। এছাড়া তার ভগ্নিপতি মানুয়েল ফেরনান্দেস-মন্তেসিনোসও ছিলেন প্রগতিশীল জোটের একজন একনিষ্ঠ কর্মী, সেই দল থেকেই মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। মৃত্যু নিয়ে লোরকার ভেতরে সবসময়ই বিভিন্ন ভয়ভীতি কাজ করত। তার লেখায় মৃত্যুর বিষয়টি কত বিচিত্রভাবে যে স্থান পেয়েছে! তিনি এটাও জানতেন যে দক্ষিণপন্থীরা সুযোগ পেলে যে কোন সময় তাকে হত্যা করতে পারে। এ সম্পর্কে একটি কবিতায় তিনি ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন। অবাক বিষয় হচ্ছেÑ লোরকার দেয়া ভবিষ্যদ্বাণীটাই কিনা শেষ পর্যন্ত অবিকল সত্যে পরিণত হলো! অবশ্য একজন কবির জন্যে মৃত্যুর কণ্ঠস্বর, প্রেমের কণ্ঠস্বর এবং শিল্পের কণ্ঠস্বর শুনার কলাকৌশল রপ্ত করাটা খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। এ ব্যাপারে লোরকার চমৎকার একটি মন্তব্যও চোখে পড়েÑ ‘শিল্পী, বিশেষ করে কবি, চূড়ান্ত অর্থে সব সময়েই নৈরাজ্যবাদী। তিনি কেবল তার ভেতরে জেগে ওঠা তিনটি প্রবল কণ্ঠস্বরই মন দিয়ে শোনেন : সব রকম আগাম সতর্কবার্তাসহ মৃত্যুর কণ্ঠস্বর, প্রেমের কণ্ঠস্বর আর শিল্পের কণ্ঠস্বর।’ ফ্রান্সিসকো ফ্রাংকোর মৃত্যুর পর তার তল্পিবাহকদের হাতে স্পেনের ক্ষমতাভার ন্যস্ত হলে ১৯৭৫ সালের দিকে ‘বিস্মৃতিচুক্তি’ আইন পাস করে তারা নিজেদের কুকর্মের প্রমাণগুলোকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে কিন্তু ২০০৭ সালের দিকে লুইস রদরিকেস সাপাতেরোর বামপন্থী সরকার ক্ষমতায় এসে ‘ঐতিহাসিক স্মৃতি আইন’ পাস করে সেদেশের গণকবরগুলোকে খোঁড়ার ব্যবস্থা করে, নিহতদের উপর গবেষণা কাজ চালানো হয় এবং স্বৈরপন্থীদের নির্মমতার নিদর্শন বের করে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। কিন্তু ভাবলে আশ্চর্য হতে হয় যে, ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকার আইরিশ জীবনীকার ইয়ান গিবসনের মতো একজন প্রত্যক্ষদর্শী লোরকাহত্যার যে ভূমিটি চিহ্নিত করেছিলেন সেখানকার মাটি খুঁড়ে তন্নতন্ন করে খোঁজার পরও কারও কোন দেহাবশেষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি! আশপাশের কোন জায়গাতেই মিলল জনমানুষের কোন লাশ কিংবা হাড্ডি-মাংসের অবশিষ্টাংশ! দেশের অন্য কোনখানেও খুঁজে পাওয়া যায়নি লোরকা-দেহের বিন্দুমাত্র অংশ। তিনি হয়ে গেলেন কবিতার মতনই রহস্যমানব। মৃত্যু এবং নিজের মরদেহ সম্পর্কে কবিতায় যে বক্তব্য দিয়ে গেছেন লোরকাÑ এ কি তাহলে সে কথারই শতভাগ নির্ভুল বাস্তবাতায়?Ñ ‘আমি টের পেলাম আমাকে তারা খুন করেছে। কাফে, গোরস্তান আর গির্জা তন্নতন্ন করে তারা খুঁজল আমাকে, উঁকি দিল পিপায় আর দেরাজে, তিনটি কঙ্কাল ল-ভ- করে উপড়ে আনল সোনার দাঁত, কিন্তু তারা আমাকে আর কখনো খুঁজে পেল না, আমাকে তারা খুঁজে পায়নি? না। আমাকে তারা আর খুঁজে পায়নি।’ [অনুবাদ : সাজ্জাদ শরিফ] কবি তো বটেই, একজন সফল নাট্যকার হিসেবেও লোরকার অবস্থান অনেক উঁচুতে। মৃত্যুর অল্পদিন আগেও ‘লা বাররাকা’ নামের একটি নাট্যদল সঙ্গে নিয়ে তিনি ঘুরে বেরিয়েছেন স্পেনের গ্রামাঞ্চলগুলোতে। ১৯২১ সালের দিকে সেনোবিয়া কামপ্রুবি আইমারের স্প্যানিশভাষায় অনূদিত রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’ নাটকের মধ্যেও ২৩ বছর বয়সী লোরকা তার বন্ধুবর জগতবিখ্যাত চলচ্চিত্রকার লুইস বুনুয়েলের সঙ্গে সহ-অভিনেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়। মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনয় করে সুনাম কুড়ানোর পাশাপাশি ১১টি মৌলিক নাটকের স্রষ্টা হিসেবেও তিনি অতুলনীয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। লোরকার কালজয়ী একটি নাটকের নাম হচ্ছেÑ ইয়ার্মা। স্প্যানিশভাষায় যদিও ‘ইয়ার্মা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছেÑ বন্ধ্যা। কিন্তু এই নাটকের নায়িকা ইয়ার্মা নামের মেয়েটি মোটেই বন্ধ্যা ছিল না। অনেকটা জোর করেই তাকে সন্তান উৎপাদনের পথ থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। ক্ষুণœ করা হয়েছে তার স্বাধীনতা, রুদ্ধ করা হয়েছে আশা-আকাক্সক্ষার দ্বার। নাটকের নায়িকা ইয়ার্মার স্বামী হুয়ানের একঘেয়েমির কারণে সে কখনোই মাতৃত্বের ঘ্রাণ নিতে পারেনি। নাটকে দেখানো হয়েছে, ইয়ার্মার স্বামী হুয়ান একজন কৃষিজীবী এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি। তাই সে সন্তান-টন্তান নিয়ে সংসারের মধ্যে বাড়তি ঝামেলা আনতে চায়নি। কিন্তু হুয়ানের এমন অযৌক্তিক বক্তব্য নায়িকা ইয়ার্মার সন্তান-তৃষ্ণাকে দমিয়ে রাখার পরিবর্তে আরও প্রকট করে তুলেছে। মেয়েটির কোলজুড়ে সন্তান না আসায় সামাজিকভাবেও সে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছে এবং পাড়াপ্রতিবেশীর আনকোড়া সব মন্তব্য হজম করতে হচ্ছে। ‘বন্ধ্যা’ শব্দের অপবাদ কাঁধে নিয়ে মেয়েটি ঘুরে বেড়াতে হয় পথেপ্রান্তরে। একরোখা স্বামী হুয়ান কিছুতেই এ কথা মানতে নারাজ। ফলে বাধ্য হয়ে ইয়ার্মা নিকটতম ব্যক্তিদের বুদ্ধি পরামর্শ নেয়ার চেষ্টা করে, তাতেও স্বামী হুয়ানসহ তার দুই ননদ ইয়ার্মার উপর সীমাহীন নাখোশ হয়ে পড়ে এবং সর্বদা সন্দেহের চোখ উঁচিয়ে রাখে; চায় গৃহবন্দী করে রাখতে। তারপরও মেয়েটির ইচ্ছা ও স্বপ্নকে পূর্ণতা দেয়ার বিষয়ে কোনরকম আশ্বস্ত করেনি কেউ। উল্টো খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে বাধ্যগত স্ত্রীর মতন আচার-ব্যবহার করে সংসারের সুখসমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দেয়। ইয়ার্মা টলেনি তাতে। সে প্রতিবাদ করে। তার মনের করোটিতে প্রবল বিশ্বাস মাথাচাড়া দিয়ে ওঠল যে, সন্তান ছাড়া সংসারে কখনোই সুখশান্তি আসে না। পৃথিবীর বাস্তবতায় আপ্তবাক্য আর আবেগের কোন স্থান নেই। তাই টাকা-পয়সা, জমিজমা, স্বর্ণ-গহনা কিংবা বংশের আভিজাত্যতা চায়নি সে; তার ছোট্ট, একটিমাত্র চাওয়াÑ সন্তান। সন্তান-সন্তুতি ছাড়া সমাজে একজন নারীর বেঁচে থাকাটা যে ভীষণ দুষ্কর এ কথা প্রত্যাখ্যান করে হুয়ান; এক পর্যায়ে ইয়ার্মার সতীত্ব নিয়েও সে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। ইয়ার্মার মতো সতী একজন নারীর উদ্দেশ্যে স্বামীর মনগড়া বক্তব্য সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। সন্তান পাওয়ার আকাক্সক্ষায়, বুদ্ধিপরামর্শ এবং স্বামীর সুনজর পাওয়ার জন্যে সে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানোর সময় যে হাজারও সমস্যা-বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছে এটা নির্ভুল সত্য। কিন্তু কখনো নিজের সতীত্বকে সে কারও কাছে বিকেয়ে দেয়নি। ফলে স্বামীর আচরণের ক্ষীপ্ত হয়ে সে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেÑ ‘আমি তোমার আর একটি কথাও কিন্তু বরদাস্ত করব না। একটাও না। তুমি মনে করো, তুমি আর তোমার আত্মীয়-স্বজনরাই কেবল পরিবারের মানমর্যাদার কথা বোঝে। তুমি জানো না, আমাকে, আমার পরিবারকে কোনদিন কিছু গোপন রাখতে হয়নি। এসো এখানে, আমার কাপড়ের গন্ধ শুঁকে দেখো। আরও কাছে এসো! এখানে তোমার ছাড়া আর কারও গন্ধ পাওয়া যায় কিনা দেখো! আমাকে নগ্ন করে মাঝরাস্তায় দাঁড় করাও, থুতু ফেলো আমার ওপর, তোমার যা খুশি করো, কারণ আমি তো তোমার স্ত্রী, তোমার সে অধিকার আছে, কিন্তু তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি, আমার চরিত্র নিয়ে কোন কথা তুলবে না।’ ইয়ার্মা এত শক্ত কথা উচ্চারণ করার পরও হুয়ানের অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি, সন্তান না গ্রহণের দৃঢ়তা এবং মুহুর্মুহু স্ত্রীকে কটাক্ষকরণ অব্যাহত থাকায় শেষতক স্বামীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইয়ার্মা। সজোরে গলাটিপে ধরে। হুয়ানের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সে আর হাত উঠায়নি। নাটকের অন্তিমপর্যায়ে এসে নিজের স্বামীকে হত্যা করে ইয়ার্মা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠলÑ ‘আমি হত্যা করেছি! আমি আমার শিশুকে হত্যা করেছি! আমি আমার নিজের সন্তানকে হত্যা করেছি!’ এ চিৎকার যেমন বন্ধ্যাত্বের গ্লানি বয়ে বেড়ানো সন্তানপ্রত্যাশী কোন নারীর, তেমনিভাবে শৃঙ্খলিত জীবন থেকে বেড়িয়ে আসার জন্যে কোন মানুষের তীব্র হুঙ্কার। পুরো নাটকটাই মানুষের জীবনবোধকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। এটা পরাধীন স্পেনে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, দমনপীড়ন নীতি ও অধিকারবঞ্চিত মানুষের একটি প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবেও ধরে নেয়া যায়। পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত হয়ে, স্বাধীনভাবে বাঁচার যে চিরকালীন বাসনা মানুষকে তাড়িত করেÑ তারই শৈল্পিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন লোরকা ‘ইয়ার্মা’ নাটকে। স্প্যানিশ সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি হিসেবে যদিও লোরকার নামটি খুব সহজেই এখন উচ্চারিত হয় কিন্তু ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের আগেও স্পেনের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত সে দেশে নিষিদ্ধ ছিল লোরকার সাহিত্য। গানের মালা, নিউইয়ার্কে কবি ও জিপসি পদাবলি গ্রন্থের পাশাপাশি মারিয়ানা পিনেদা, বার্নার্দা আলবার, পাঁচ বছর পর এবং ইয়ার্মা নাটকের জন্য পৃথিবীতে এখনো টিকে আছেন লোরকা। জীবদ্দশাতেই মনে তাঁর বিশ্বাস বদ্ধমূল ছিল যে, দৈহিকভাবে তার মৃত্যু হলেও শব্দের ধমনিতে ঠিকই তিনি বিচরণ করবেন অনন্তকাল। ফলে, তিনি মারা গেলে কিংবা কারও হাতে হত্যার শিকার হলে ক্ষণিকের জন্যে অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে হয়তো কিন্তু হাজার কোটি ভক্তপাঠকের হৃদয়ে যুগের পর যুগ বেজে ওঠবে লোরকার স্তুতি-সঙ্গীত। লোরকার ‘কালো মৃত্যুর গজল’ কবিতায় সে কথারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়Ñ ‘ঘুম দেব আমি এক মুহূর্ত,/এক মুহূর্ত, একটি মিনিট, এক শতাব্দী;/কিন্তু জেনে রেখ আমি এখনো মরিনি...’ ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে ৫ জুন স্পেনের আন্দালুসিয়ার ফুয়েন্তে বাকারোস নামক ছোট্ট একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বসাহিত্যের এই অনিবার্য কবি। ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা বেঁচে ছিলেন মাত্র ৩৮ বছর।
×