ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ মৌলভীবাজারের ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১০ জুন ২০১৬

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ মৌলভীবাজারের ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলভী ও ইদ্রিস আলী সরদারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের তৃতীয় সাক্ষী মোঃ আব্দুল জলিল হাওলাদার ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানী সৈন্যরা শরীয়তপুরের দক্ষিণ মধ্য পাড়ায় সম্ভু নাথ কর্মকারসহ ৩৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২০ জুন দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তী আদেশের জন্য ২৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে পলাতক তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়না জারি করেছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর (সাবেক জেলা জজ) হƒষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি, প্রসিকিউটর সুলতান মুহাম্মদ সিমন ও প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা চমন। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ আব্দুল জলিল হাওলাদার। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬১ বছর। আমার ঠিকানা, গ্রাম- চিকনদী, থানা- পালং, জেলা- শরীয়তপুর। আমি শরীয়তপুর সমাজ সেবা অফিসে চাকরি করতাম। বর্তমানে অবসরে আছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। একাত্তর সালে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে রাজাকার আসামি মোঃ সোলায়মান মোল্লা ও রাজাকার ইদ্রিস আলী সরদার আর্মিদের সহায়তায় পালং থানায় শান্তি কমিটি গঠন করে। একাত্তরের ২০ মে আমি ও আমার বন্ধু খলিলুর রহমান আমাদের নিজ বাড়ি থেকে পালং থানার মনকোলা গ্রামে আমার ফুফুর বাড়িতে যাই। আমার ফুফুর বাড়ি ছিল আঙ্গারিয়া বাজারের পশ্চিম পাশে। আমরা বাজারে থাকা অবস্থায় শুনতে পাই যে, পাকিস্তান আর্মিরা মাদারীপুর থেকে আঙ্গারিয়া বাজারের দিকে আসছে। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই একটি লঞ্চ করে পাকিস্তান আর্মিরা আঙ্গারিয়া বাজার লঞ্চ ঘাটে আসে। সাক্ষী বলেন তখন আমি ও আমার বদ্ধু পাকিস্তান আর্মিদের অনুসরণ করতে থাকি। এ সময় আসামি সোলায়মান মোল্লা ও ইদ্রিস সরদার পাকিস্তান আর্মিদের দেখিয়ে বলে ঐ ব্যক্তি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তখন আর্মিরা আব্দুস সামাদকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর সম্ভু নাথকে দেখিয়ে বলে ওসকে মালাউন হে। তখন পাকি আর্মিরা সম্ভু নাথকে গুলি করে হত্যা করে। একই দিনে গ্রামের প্রায় ৩৫ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৌলভীবাজারের ৫ রাজাকারের অভিযোগ আমলে ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তী আদেশের জন্য ২৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে পলাতক তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে ছয় অভিযোগ প্রস্তুত করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন তদন্ত সংস্থা। এ পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি পাঁচজন হলেন- শামসুল হোসেন তরফদার, মোবারক মিয়া, নেসার আলী, ইউনুস আহমেদ এবং ওজায়ের আহমেদ চৌধুরী। তাদের মধ্যে ইউনুস আহমেদ ও ওজায়ের আহমেদ চৌধুরী কারাগারে আছেন। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় যা ২০ জানুয়ারি ২০১৬ সালে প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ১৩ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেদিনই জেলার রাজনগর উপজেলার গয়াসপুর গ্রামের আসামি ওজায়ের আহমেদ চৌধুরীকে (৬০) মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা থেকে ও সোনাটিকি গ্রামের মৌলভী ইউনুছ আহমদকে (৭০) তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
×