ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটপাথ দখলমুক্তির শুরুতেই বিপত্তি ॥ গুলিস্তানে দফায় দফায় সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১০ জুন ২০১৬

ফুটপাথ দখলমুক্তির শুরুতেই বিপত্তি ॥ গুলিস্তানে দফায় দফায় সংঘর্ষ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সঙ্কটের নগরী রাজধানী। একদিকে জনসংখ্যার বাড়তি চাপ। ঈদ সামনে রেখে সমস্যার মাত্রা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত এ কারণেই বহুমাত্রিক সমস্যা মোকাবেলা করে চলতে হচ্ছে নগরবাসীকে। দখল রাস্তা। খালি নেই ফুটপাথ। অবৈধ কার পার্কিং তো আছেই। আছে পানি ও গণপরিবহন সঙ্কট। যানজট তো প্রতিদিনের সমস্যা। বেহাল রাস্তাঘাটের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। নগরীর নানা সঙ্কট সমাধানের যাত্রা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। নগরীর বেশিরভাগ ফুটপাথ ও রাস্তা এখন দখলমুক্ত। খোদ গুলিস্তানের চেহারা বদলে গেছে। তবে দখল উচ্ছেদ করতে গিয়েই বৃহস্পতিবার গুলিস্তানে হকারদের সঙ্গে বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে হকার উচ্ছেদে অনড় অবস্থানে পুলিশ ও মেয়ররা। নগরীর বেহাল সড়কগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মগবাজার-মৌচাক সড়ক এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী। যানজট নিরসন ও অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার দিনভর পুলিশকে তৎপর দেখা গেছে। লাইসেন্সবিহীন যানবাহন পাকড়াও অভিযানও চলেছে সমানতালে। সিটিং সার্ভিস থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের বাসে উঠিয়ে দিতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে ঢাকার ১৪ প্রবেশ ও বের হওয়ার পয়েন্টে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক চলছে পুলিশের। পানি সঙ্কট সমাধানেও নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। সব মিলিয়ে চলছে সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা। তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয় তাই এখন দেখার বিষয়। পুলিশ জানিয়েছে, রজমান উপলক্ষে রাজধানীতে মৌসুমী ব্যবসায়ী ও গাড়ি চালকদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। এ বছর তা প্রতিরোধে নেয়া হয়েছে সর্বাত্মক ব্যবস্থা। জানতে চাইলে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজীব দাস জনকণ্ঠ’কে বলেন, রমজান উপলক্ষে মৌসুমী পরিবহন চালকসহ ব্যবসায়ীদের বিষয়টি মাথায় রেখেই ঈদ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরও রিক্সার সংখ্যা বাড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এ বছর আমরা এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। এ বিষয়ে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। যেন কোন অবস্থাতেই মৌসুমী রিক্সা চালকরা রাজধানীতে প্রবেশ করতে না পারেন। তিনি বলেন, বাড়তি গাড়ির চাপে যানজট বাড়ে। অনেক সময় ভিআইপি ও ভিভিআইপি সড়কেও চলে রিক্সা। এ নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। তাছাড়া অদক্ষ চালকরা ট্রাফিক আইন কানুন কিছুই জানেন না। এতে আরও সমস্যা বাড়ে। তাই আমরা চেষ্টা করছি অন্য বারের তুলনায় মৌসুমী গাড়ির চাপ কমানোর জন্য। আশা করি এ বছর আমরা ইতিবাচক ফল পাব। পরিচ্ছন্ন ঢাকার জন্য আন্তরিকতার অভাব নেই- সাঈদ খোকন ॥ যানজট ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পরিস্থিতি দেখতে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান পরিদর্শন করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। বৃহস্পতিবার গুলিস্তানের অগ্রণী ব্যাংকের গলি থেকে হেঁটে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে দিয়ে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার পর্যন্ত এলাকা ঘোরেন তিনি। এ সময় মেয়রের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়াসহ কর্মকর্তারা। পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে নেমেছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযানে। যদিও এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। তবুও ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, যে কোন মূল্যে রাস্তা পরিষ্কার রাখা হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকন বলেন, আশপাশে সবকিছুই যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখছি। এখন ইচ্ছেমত নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন করতে পারব। এখন লাখ লাখ মানুষ পরিষ্কার গুলিস্তান দেখছে, মানুষ ভালভাবে মুভমেন্ট করতে পারছে, দীর্ঘ অনেক দিন ধরে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজ সেই কাজের সফলতা পাচ্ছি। আশা করি পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ আমরা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে পারব। তিনি বলেন, পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই। এজন্য সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছি। আস্তে আস্তে নগরবাসী এর সুফল পাবেন। এসব কিছু ডিএমপি কমিশনার ও পুলিশের সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, রমজান মাসে রাস্তাঘাটে চাপ বাড়ে, এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। একটু মানিয়ে নিতে হবে। একসঙ্গে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এমন আশা করা ঠিক নয়। এতদিনের সমস্যা আমরা একটু একটু করে মেটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ সময় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, রমজানের সাতদিন আগে থেকে নগরী যানজটমুক্ত এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য মেয়রের নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। রাস্তাঘাটকে আমরা চলাচলের উপযোগী করেছি, সবাই যেন বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারেন সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। যানজটকে সহনশীল মাত্রায় রাখা হবে এবং এই শহরকে আর কোনভাবেই নোংরা করতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে থেকে শুরু করে ফুলবাড়িয়া, সব জায়গা আমরা যানজটমুক্ত করেছি। এখন দীর্ঘ সময় যানবাহনগুলোকে আর আটকে থাকতে হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবে সবকিছু চলাচল করতে পারছে। অথচ দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এই এলাকায় যানজটের সমস্যা লেগেই ছিল। একটু ইতিবাচক উদ্যোগের কারণে সবকিছু স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আমাদের ভাল কাজগুলো মিডিয়াতে বেশি বেশি প্রচার করেন। পরিদর্শনকালে নগর ভবন ও ট্রাফিক পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। হকারদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ ॥ গুলিস্তানে ফুটপাথের হকারদের সঙ্গে বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে হকারদের উচ্ছেদ করে যান চলাচলের উপযোগী করা ফুটপাত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের পরিদর্শনের পরপরই এই সংঘর্ষ বাধে। বেলা তিনটায় মেয়র চলে যাওয়ার পরপরই ঢাকা ট্রেড সেন্টারের দোকান মালিক ও ফ্লাইভারের নিচে ফুটপাথে বসা হকারদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের কারণে বায়তুল মোকাররম থেকে গুলিস্তান, নবাবপুর এবং ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুলিস্তানে আসাদ পুলিশ বক্স থেকে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীগামী বাসও বন্ধ ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত। এর ফলে রোজার মধ্যে ইফতারের আগে ঘরমুখো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঢাকা ট্রেড সেন্টারের ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, মার্কেট কমিটির লোকজন ফুটপাথের দোকানদারদের চলে যেতে বলে। কিন্তু তারা না গিয়ে কমিটির লোকদের মারধর শুরু করে। তখন ব্যবসায়ীরা জোট বেঁধে হকারদের ওপর চড়াও হয়। রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের কারণে বিভিন্ন রুটে কিছু সময়ের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যাত্রীদের পাশে পুলিশ ॥ রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের কোন অনুমোদন নেই। অথচ ঢাকার রাস্তায রাস্তায় এখন সিটিং সার্ভিস লেখা বাসের অভাব নেই। কোন বাসে আবার লেখা রয়েছে কম স্টপেজের গাড়ি। অর্থাৎ সিটিংয়ের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে তিনগুনেরও বেশি অর্থ আদায় করা হচ্ছে। বিষয়টি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বিআরটিএ ও পুলিশ সবাই জানে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মাত্র চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেই দায় সারতে চায় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই। তাই বৃহস্পতিবার যাত্রীদের পাশে দাঁড়াল তেজগাঁও জোনের পুলিশ। নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী সিটিং সার্ভিস থামিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সবযাত্রী পরিবহনে বাধ্য করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে পুলিশ সদস্যরা বলছেন, গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রতিদিনই মানুষের অপেক্ষা করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে উত্তরা, বনানী, গুলশান, আব্দুল্লাহপুর, গাজীপুরসহ বিভিন্ন রুটের সিটিং সার্ভিস বাসগুলো থামিয়ে সব যাত্রী তুলে দেয়া হয়েছে। প্রথমে এ নিয়ে বাস চালকরা আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেই পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান তারা। শতাব্দি পরিবহনের যাত্রী কামরুল জানান, কামারপাড়া থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই বাসটিতে ৪০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু খিলক্ষেত থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৪০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। মগবাজার হলি ফ্যামেলি হাসপাতালের সামনে থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নেয়া হয় ২০ টাকা ভাড়া। এ নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার পুলিশ এই পরিবহনটিকেও আটকে দাঁড়িয়ে থাকা সবযাত্রী তুলে দিয়েছে। ১৪ পয়েন্টে থাকবে স্বেচ্ছাসেবক ॥ রাজধানীর আশপাশের মহাসড়কগুলোতে যানজট নিরসনে ১৪ পয়েন্টে ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকে এক হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন। মহাসড়কের পাশে যত অবৈধ স্থাপনা আছে, তা উচ্ছেদ করা হবে।
×