ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যৌতুকলোভী স্বামীর টর্চার সেল থেকে মুক্ত হয়েও শঙ্কা কাটেনি লুবনার

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১০ জুন ২০১৬

যৌতুকলোভী স্বামীর টর্চার সেল থেকে মুক্ত হয়েও শঙ্কা কাটেনি লুবনার

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ যৌতুকলোভী ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্রের হোতা স্বামী শাহ আলমের বন্দীদশায় নির্যাতনের হাত থেকে মুক্ত করা হয়েছে স্ত্রী লুবনা আক্তারকে। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা প্রত্যাহার করা না হলে লুবনা ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। কারাগারে আটক অবস্থা থেকেই স্বামী শাহ আলম ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্রের সন্ত্রাসী সদস্যদের দিয়ে স্ত্রী লুবনা ও তার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেয়াচ্ছে। লুবনা ও তার পরিবার এখন ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্রের হোতা শাহ আলমের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য লুবনার পরিবার থানা পুলিশের সাহায্য কামনা করেছে। লুবনার পরিবারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ করা হয়েছে। লুবনা আক্তার। পিতামৃত লোকমান হোসেন বেপারী। মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানাধীন উত্তর মেদিনীম-লে তার গ্রামের বাড়ি। স্বামী শাহ আলমের যৌতুকের দাবিতে বছরের পর বছর অকথ্য নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এখন গ্রামের বাড়িতে পিত্রালয়ে আশ্রয় নিয়েছে লুবনা। সেখানেও তাকে ও তার পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছে প্রাণনাশের। নিরূপায় লুবনা বাধ্য হয়েই মামলা করেছেন স্বামী শাহ আলমের বিরুদ্ধে। এই মামলায় এখন কারাগারে আটক আছেন স্বামী শাহ আলম। এতে আরও ক্ষেপে গেছেন কারাবন্দী স্বামী। কোনভাবে কারাগার থেকে বের হতে পারলেই হলো। একে একে হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে লুবনা ও তার পরিবারের সদস্যদের। প্রায় আট বছর আগে, ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বিয়ে হয় লুবনার। সাত বছর বয়সের লামিয়া আক্তার রিয়া নামের একটি মেয়ে আছে তার। স্বামীর নাম শাহ আলম। বিয়ের আগে লুবনার পরিবারের জানা ছিল না স্বামী শাহ আলম পরনারীতে আসক্ত, নেশাখোর, পরবিত্তলোভী, প্রতারক। কিছুদিন যেতে না যেতেই উন্মোচিত হতে থাকে স্বামীর আসল কথা। বিয়ের পর থেকেই স্বামী যৌতুকের জন্য দিনের পর দিন অকথ্য নির্যাতন চালায় লুবনার ওপর। অন্য দশটি নারীর মতোই স্বামীর সংসার করার জন্য লুবনা স্বামীর নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যায়। বছরের পর বছর যৌতুকলোভী স্বামীর নির্যাতন সহ্য করার এক পর্যায়ে ফাঁস হয়ে যায় স্বামীর পরনারীতে আসক্ত হওয়ার ঘটনা। দ্বিতীয় বিয়ে করে গোপন রাখার ঘটনাটি যখন ধরা পড়ে তখন লুবনার ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার নেমে আসে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে স্বামী শাহ আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন স্ত্রী লুবনা। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, স্বামী শাহ আলম একজন যৌতুকলোভী, পরনারীতে আসক্ত, পরবিত্তলোভী, প্রতারক। দফায় দফায় যৌতুকের দাবি মিটাতে গিয়ে লুবনার পরিবার এ পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা দিয়েছে স্বামী শাহ আলমকে। স্বামী শাহ আলমের পিতার নাম আঃ মান্নান। রাজধানীর গে-ারিয়া থানাধীন নামাপাড়া এলাকার ডিসটিলারি রোডে তার বাড়ি। এই বাড়িতেই স্ত্রী লুবনাকে আটকে রেখে দিনের পর দিন নির্যাতন চালানো হতো। গত ১৫ এপ্রিল। বিকেল প্রায় চারটা। লুবনা ভাত খাচ্ছেন। এমন সময়ে স্বামী শাহ আলম তার স্ত্রী লুবনাকে তার মায়ের কাছে যৌতুকের টাকার দাবিতে ফোন করতে বলেন। ফোন করার পর লুবনার মা বলেন, আমরা আর টাকা দিতে পারব না। এ পর্যন্ত কয়েক দফায় স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র, নগদ টাকাসহ ১২ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন আর টাকা দেয়া সম্ভব নয়। এই কথা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে লুবনার স্বামী শাহ আলম। কি? টাকা দিতে পারবে না। এই বলেই লুবনার চুলের মুঠি ধরে পিঠে ও সারা শরীরে বেদম প্রহার করে। এক পর্যায়ে রান্নাঘর থেকে চাকু এনে তাকে জীবনের তরে শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করে। লুবনার চিৎকারে স্বামীর বাড়ির ও আশ পাশের লোকজন এসে তাকে রক্ষা করেন। বাড়ির আশপাশের লোকজন তাকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়। স্বামী শাহ আলম আরও ক্ষেপে যান। তাকে বাপের বাড়িতে না পাঠিয়ে বাড়িতেই বন্দী করা হয়। বাড়িটি হয়ে ওঠে এক টর্চার সেল। এই টর্চার সেলে প্রতিদিনই স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে হতো লুবনাকে। লুবনার পরিবার এই খবর পেয়ে তাকে মুক্ত করতে আসেন। চার দিনের বন্দীদশা থেকে নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত বিপর্যস্ত অবস্থায় মুক্ত করা হয় লুবনাকে। তাকে মুক্ত করার পর দিন এই বিষয়ে জিডি করা হয়েছে রাজধানীর শ্যামপুর থানায়। শ্যামপুর থানার জিডি নম্বর ৯৪০ তাং ২০/০৪/২০১৬। জিডি করার পর লুবনা ও তার পরিবারকে ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে স্বামী শাহ আলম ও তার সহযোগী ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্রটি। শাহ আলম শুধু ইয়াবা ব্যবসায়ই করেন না, অবৈধ অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী ও ক্যাডার দলনেতা বলে পরিচিত। নিরূপায় লুবনা বাধ্য হয়ে স্বামী শাহ আলমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল-৩, ঢাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। এই মামলা দায়ের করার আগে তার একমাত্র মেয়ে লামিয়া আক্তার রিয়াকে আদালতের আদেশে মায়ের জিম্মায় নিতে সক্ষম হন। মায়ের ওপর আক্রোশ মিটাতে মেয়ে লামিয়াও তার লম্পট পিতার নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এখন প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন লুবনা ও তার পরিবার। লুবনার পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, স্বামী শাহ আলম তার ইয়াবা ব্যবসা ও নেশার টাকা জোগাড় করতে প্রায় প্রতিদিনই নির্যাতন চালাত। স্ত্রী লুবনা ইতোমধ্যেই জানতে পারেন, তার স্বামী গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম পারভিন। দ্বিতীয় স্ত্রী পারভিন ও তার মা রাবেয়া ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা ব্যবসা ও সেবনের সুবাদে পরিচয়সূত্রে শাহ আলম বিয়ে করেন পারভিনকে। পারভিন ও তার মা রাবেয়ার ইয়াবা ব্যবসায়ীর সহযোগী জসিম, সজিব ও মহসিন এলাকার সন্ত্রাসী। কিন্তু তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে এবং লুবনার পক্ষ থেকে যেসব ঠিকানা দেয়া হয়েছে সেখানে না পাওয়া যাওয়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভবপর হয়নি। তাদের মাধ্যমেই কারাগার থেকে শাহ আলম তার প্রথম স্ত্রী লুবনা ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। লুবনা ও তার পরিবার এখন কারাগারে আটক স্বামী শাহ আলম ও তার ইয়াবা ব্যবসার সন্ত্রাসী বাহিনীর দেয়া পাণনাশের হুমকির ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত। লুবনা ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃপক্ষের কাছে শাহ আলম ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের নিরাপত্তা বিধান ও প্রাণ রক্ষার দাবি জানিয়েছেন।
×