ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাঞ্জাবির বৃহত্তম বাজার পুরান ঢাকার শরীফ মার্কেট ভিড়ে ঠাসা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১০ জুন ২০১৬

পাঞ্জাবির বৃহত্তম বাজার পুরান ঢাকার শরীফ মার্কেট ভিড়ে ঠাসা

রহিম শেখ ॥ ঈদ মানেই নতুন পোশাকে নতুন করে নিজেকে সাজিয়ে তোলা। ছোট-বড় সবাই ঈদে নতুন পোশাকে নিজেকে সাজাতে চায়। ঈদে ছেলেদের পোশাকের মধ্যে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে পাঞ্জাবি। খুচরা বাজারে পাঞ্জাবি বিক্রি শুরু না হলেও শব-ই-বরাতের পর থেকেই পাইকারি বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে। সারাদেশের পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে পাঞ্জাবির বৃহত্তম পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার শরীফ মার্কেট। এ মার্কেটের ৪৩২ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এখন সারাদেশে একযোগে পাঞ্জাবি সরবরাহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দেশের মোট পাঞ্জাবির চাহিদার ৮০ শতাংশই সরবরাহ করে থাকে শরীফ মার্কেট। এবার ঈদ উপলক্ষে শরীফ মার্কেট থেকে প্রতিদিন সারাদেশে প্রায় ৭/৮ লাখেরও বেশি পাঞ্জাবি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী এবার ঈদে প্রায় আড়াই কোটি পিস পাঞ্জাবি বিক্রি হতে পারে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, ঈদ মার্কেট সামনে রেখে শব-ই-বরাতের আগে থেকে শরীফ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা শুরু করেছেন পাঞ্জাবি তৈরির কাজ। কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় এ মার্কেটের পাঞ্জাবি দিনরাত তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া সারাদেশে এ মার্কেটের পাঞ্জাবির চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা পাঞ্জাবি তৈরি ও বিপণনেও যথেষ্ট যতœশীল। শরীফ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছে ঈদ মৌসুমের বেচাকেনা। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কয়েক লাখ পিস পাঞ্জাবি। শরীফ মার্কেট থেকে পাঞ্জাবি সংগ্রহ করতে এসেছেন বগুড়ার ব্যবসায়ী আফসার উদ্দিন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এষানকার তৈরি পাঞ্জাবি দামে সস্তা ও টেকসই হওয়ার কারণে ক্রেতাদের আলাদা চাহিদা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্রেতারা একটু সস্তায় পাঞ্জাবি কিনতে চায়, যা শরীফ মার্কেটে পাওয়া যায়। শরীফ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এবার শরীফ মার্কেটের অধিকাংশ পাইকারি ব্যবসায়ীরই ঈদ উপলক্ষে গড়ে এক লাখ পাঞ্জাবি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বড় মাপের প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি। এবার ঈদ উপলক্ষে শরীফ মার্কেট থেকে প্রতিদিন সারাদেশে ৭/৮ লাখেরও বেশি পাঞ্জাবি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। এ ধারা আগামী ২০ রমজান পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। রমজানের অন্তত ১৫ দিন আগেই এ বেচাকেনা শুরু হয়েছিল। সে অনুযায়ী এবার ঈদে প্রায় আড়াই কোটি পিস পাঞ্জাবি বিক্রি হতে পারে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। সমিতির প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়েছে পৌনে এক কোটি পিস পাঞ্জাবি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শরীফ মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রঙের ও মানের কাপড়ে তৈরি এবং আধুনিক কারুকার্য শোভিত ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের পাঞ্জাবি ও ফতুয়া। পাইকারি দরে প্রতি পিস পাঞ্জাবির সর্বনিম্ন দাম ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। শরিফুল ইসলাম নামে এক বিক্রেতা জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ-উল-ফিতর সামনে রেখে রোজার এক মাস আগে থেকে অভিজ্ঞ সব ডিজাইনার দ্বারা পাঞ্জাবি তৈরি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের চাপের কারণে শরীফ মার্কেট খোলা রাখা হচ্ছে রাত ১২টা পর্যন্ত। এ প্রসঙ্গে শরীফ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও এলবি গার্মেন্টের মালিক লুৎফর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় অন্যবারের তুলনায় এবার অনেক আগে থেকেই পাঞ্জাবির বাজার জমে উঠেছে। তিনি বলেন, ক্রেতা চাহিদা মাথায় রেখেই পাঞ্জাবিতে আধুনিক ডিজাইন ও উন্নতমানের কাপড় সংযোজন করা হয়েছে। চীন থেকে উন্নতমানের কাপড় এনে পাঞ্জাবি তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, শরীফ মার্কেট থেকে প্রতিদিন সারাদেশে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ পাঞ্জাবি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে শরীফ মার্কেট। প্রায় প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। দোকানের ফ্লোরে বসে ব্যবসায়ীরা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেনদেন করছেন। বেচাকেনা ও পাইকারদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। আট তলাবিশিষ্ট শরীফ মার্কেটে ৪৩২ পাইকারি দোকান রয়েছে। এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে পাঞ্জাবি তৈরির নিজস্ব কারখানা ও গোডাউন। রমজান সামনে রেখে আরও মাসখানেক আগে থেকেই তাদের সব রকম প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ঈদ সামনে রেখে এখানকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের তৈরি পাঞ্জাবির পাশাপাশি ইন্ডিয়ান অরেঞ্জ ক্রাশ, টিস্যু কাতান নেট, ইয়াগ রোলেক্স, চল্লি, কাশ্মীর সিল্ক, দুলহান, টু পিস, থ্রী পিস, ফোর পিস, বোম্বে সিল্ক, অল বডি কারচুপির কাজ, কারচুপির নক্সা, রাজশাহী সিল্ক, তসর কাপড়ের ওপর কাজ এবং কম্পিউটার দিয়ে ডিজাইন করা বিভিন্ন রকম পাঞ্জাবি প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন। মার্কেটের সপ্তম ও অষ্টম তলায় রয়েছে পাঞ্জাবি তৈরির কারখানা। এখানে সুদক্ষ কয়েক শ’ শ্রমিক দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পাঞ্জাবি তৈরির কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে শরীফ মার্কেটের অপু গার্মেন্টসের ম্যানেজার সাব্বির রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে পাঞ্জাবির বিক্রি অনেক বেড়েছে। ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এ মার্কেট থেকে পাঞ্জাবি সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ঝামেলা না থাকায় গতবারের চেয়ে এ বছর বিক্রি বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে চলতি বছর পাঞ্জাবির দাম কিছুটা বেড়েছে বলে তিনি জানান। আগে এক থেকে দেড় শ’ টাকায় পাঞ্জাবি পাওয়া গেলেও এখন সম্ভব নয়। সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে ১২ হাজার টাকায় পাঞ্জাবি বিক্রি করা হচ্ছে। আগের তুলনায় দাম কিছুটা বাড়লেও ক্রেতা উপস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানালেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে শরীফ মার্কেট ছাড়াও রাজধানীর পীর ইয়ামেনী, মালিবাগ এলাকার আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স, সায়েন্স ল্যাবরেটরিসংলগ্ন মিরপুর ও এলিফ্যান্ট রোডের কয়েকটি মার্কেটে পাঞ্জাবির পাইকারি বিক্রির কথা জানা গেছে। তবে সেগুলো নিতান্তই অল্প এবং এদের অধিকাংশ পাইকারই শরীফ মার্কেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে। এর বাইরে রাজধানীতে পাঞ্জাবির খুচরা বিক্রির অসংখ্য দোকান রয়েছে। দোকানিরা জানিয়েছেন, লম্বা পাঞ্জাবির চেয়ে মাঝারি ও শর্ট পাঞ্জাবির চাহিদাই বেশি ক্রেতাদের কাছে। খুচরা মার্কেটে সাধারণত ৫শ’ থেকে ৭ হাজার টাকা মূল্যের পাঞ্জাবিই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
×