ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১০ জুন ২০১৬

খোশ আমদেদ মাহে  রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ সম্মানিত পাঠকদের মাহে রমজানের চতুর্থ দিবসের শুভেচ্ছা। আজ সেহ্রি সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা। ‘সেহ্রি’ শব্দটি আরবি ‘সাহরূন’ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সুবেহ সাদিকের পূর্বে যা পানাহার করা হয় তাকে সেহ্রি বলে। হাদিস শরীফে সেহ্রি খাওয়ার অনেক ফযিলত ও বরকতের কথা বর্ণিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘তিনটি কাজে বরকত রয়েছে। মুসলমানদের জামা’আতে, সারিদ নামক খাদ্যে ও সেহ্রিতে।’ সেহ্রি খাওয়া মুস্তাহাব। সেহ্রি খাওয়াতে বহু বরকত রয়েছে। কারণ এর দ্বারা রোজা রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মন প্রফুল্ল থাকে। এগুলো হলোÑ সেহ্রি খাওয়ার বাহ্যিক বরকত। এর অন্তর্নিহিত বরকত এই যে, ওই সময় আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমত অবতীর্ণ হয়। এটা দু’আ কবুলের সময়। এ সময়কার দু’আ, যিকির, ইবাদত ও ইস্তিগফার আল্লাহ তায়ালার নিকট অতি পছন্দনীয় (নব্বী, শরহে মুসলিম)। হযরত আনাস (রাদি) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা) বলেছেন : ‘তোমরা সেহ্রি খাও। কেননা সেহ্রিতে বরকত রয়েছে।’ (মুসলিম)। হযরত আমর ইব্ন আস (রাদি) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবের (ইহুদি ও নাসারাদের) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহ্রি খাওয়া।’ (বুখারী ও মুসলিম)। সেহ্রি খাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় হলো রাতের শেষভাগ। ফকিহ্ আবুল লাইস সমরকান্দী (রহ) বলেন, সেহ্রির জন্য উপযুক্ত সময় হলো রাতের ষষ্ঠাংশ। অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে সুবেহ সাদিক পর্যন্ত যে কয় ঘণ্টা হয় তার ছয় ভাগের শেষভাগ। (আলমগীরী, প্রথম খ-)। সেহ্রির আদবসমূহের অন্যতম হচ্ছে হালাল খাদ্য গ্রহণ করা। হারাম ও সন্দেহযুক্ত খাদ্য পরিহার করা। অতি ভোজন থেকে বিরত থাকাও সেহ্রির আরেকটি আদব। অর্থাৎ পরিমিত আহার করতে হবে। এ পরিমাণ আহার করবে না যাতে কষ্ট হয় ও ঢেঁকুর ওঠে। সেহ্রির জন্য খাদ্য গ্রহণ করা সম্ভব না হলে অন্তত এক গ্লাস পানি হলেও পান কওে নেবে। এতে সেহ্রির বরকত ও সাওয়াব লাভ হবে। এই ধারণায় যদি সেহ্রি গ্রহণ করে যে, সুবেহ সাদিক হয়নি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সুবেহ সাদিক হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তার ওপর কাযা ওয়াজিব হবে। কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। (আলমগীরী, প্রথম খণ্ড)। সুবেহ সাদিকের ব্যাপারে সন্দেহ হলে সেহ্রি গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উত্তম। অবশ্য সন্দেহ সত্ত্বেও পানাহার করলে রোজা পূর্ণ হয়ে যাবে। তবে যদি সুবেহ সাদিক হওয়ার পর পানাহার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয় অথবা এ ব্যাপারে প্রবল ধারণা সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে তার প্রতি রোজা কাযা করা ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী, প্রথম খ-) আগেই বলেছি, শেষ রাতে উঠে পরিমিত পানাহার গ্রহণের জাগতিক, নৈতিক উপকারিতা রয়েছে। সেহ্রি গ্রহণের জন্য উঠলে সত্যিকারের মানুষ আর ফজরের জামাত ত্যাগ কওে না। এ সময়টুকুতে বিবেক-বুদ্ধিও ভাল কাজ করে, ব্রেন থাকে ঠা-া শীতল। আমরা নিজেরা এ সময় ওঠার অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি সন্তানদেরও ওঠানোর এবং সময়টুকু তাদের লেখাপড়া মুখস্থ করার জন্য একটি মোক্ষম সময় হিসেবে অনুশীলন করাতে পারি। সিয়াম সাধনার মাসের এটিও একটি বড় ইতিবাচক দিক। ইংরেজীতে একটা কথা আছে, মর্নিং শোজ দ্য ডে। সকালের সূর্যই বলে দেয় দিনটি কেমন যাবে। তাহাজ্জুদ, সেহ্রি ও ফজরের জামাতের মাধ্যমে আমরা একটি সুস্থ ও কর্মময় জীবনের সূচনা করতে পারি। দিনের সূচনাতেই কর্মের প্রতি তাগিদ করে মহানবী (সা) বলেছেন, ‘যারা ফজরের জামাত সম্পন্ন করে কিছুক্ষণ হলেও দুনিয়াবী কাজকর্ম সম্পন্ন না করে ঘুমিয়ে পড়ে দারিদ্র্য তাকে পিছু টানে।’ অন্যত্র তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লি উম্মাতি বুকুরিহাÑ হে আল্লাহ আমার উম্মতদের ভোরের সময়টুকুতে বরকত দাও।’
×