ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের অনেক তথ্যই দিয়েছেন আসলাম

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১০ জুন ২০১৬

মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের অনেক তথ্যই দিয়েছেন আসলাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের কথা পুলিশকে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে কাউন্টার টেররিজম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এ কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আসলাম চৌধুরী অনেক তথ্যই দিয়েছেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সব তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসলাম চৌধুরী আমাদের জানিয়েছেন, ভারতে মোসাদের কার কার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কারা তাকে ওখানে যেতে উৎসাহিত করেছেন। কাদের সহযোগিতায় তিনি মোসাদের সঙ্গে ওই বৈঠকে গিয়েছেন। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এ মামলা হওয়ার আগে ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসেবেও তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। রিমান্ডে আসলামের কাছে কী তথ্য পাওয়া গেছেÑ সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মনিরুলকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওখানে (ভারতে) কার কার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কারা কারা জড়িত ছিল। কাদের কাদের ক্লিয়ারেন্স নিয়ে তিনি সেখানে গিয়েছেন, কারা কারা তাকে উৎসাহিত করেছেন এই কাজে। পরে কী পরিকল্পনা ছিলÑ অনেক কিছু তিনি বলেছেন। মনিরুল বলেন, এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে, অর্থাৎ যাদের নাম রিমান্ডে এসেছে, তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। চট্টগ্রামের নেতা আসলাম চৌধুরীকে মাসখানেক আগে বিএনপির নতুন কমিটিতে যুগ্মমহাসচিব হিসেবে মনোনীত করেন খালেদা জিয়া। আর লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ইসরাইলের বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী এম কে আয়ুব কারার একজন সাবেক উপদেষ্টা। তিনি নিজের নামে মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালান। সম্প্রতি ভারতের এক সম্মেলনে তাদের দুজনের সাক্ষাতের ছবি ও খবর গণমাধ্যমে এলে আলোচনার সূত্রপাত হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিএনপি ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে। ইসরাইল কিংবা মোসাদের সঙ্গে কোন ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছেÑ আসলামের ওই সফর ছিল ‘ব্যক্তিগত’। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ১৫ মে ঢাকার খিলক্ষেত থেকে আসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর ২৬ মে গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রব্বানি গুলশান থানায় আসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি করেন, যেখানে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০/বি (রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র), ১২১/এ (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ষড়যন্ত্র) এবং ১২৪/এ (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পুলিশপ্রধান একেএম শহীদুল হক মামলা হওয়ার দিন সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে ‘চুক্তি করার কথা’ আসলাম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছেন’। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে একপর্যায়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে দিবালোকে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় ‘বিদেশী’ জড়িত থাকতে পারে। তিনি বলেছেন, বিদেশী মদদপুষ্ট হয়েই তাকে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। মনিরুল ইসলাম বলেন, বাবুল আক্তারের স্ত্রী দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের শিকার। তবে এ ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক না কেন। তাকে খুঁজে বের করা হবে। গত রবিবার সকালে জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুধবার হাটহাজারী থেকে সাবেক শিবির ক্যাডার আবু নছর গুন্নুকে (৪০) গ্রেফতার করে পুলিশ। সাবেক এই শিবির ক্যাডার দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যে থাকলেও ৫ বছর আগে তিনি দেশে ফেরেন। ফিরেই হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদের একটি মাজারে খাদেম হিসেবে যোগ দেন তিনি। মিতু হত্যায় আবু নছরের সম্পৃক্ততা আছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আবু নছর হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল কিনা, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে হত্যায় তার যে সম্পৃক্ততা আছেÑ এ ব্যাপারে নিশ্চিত তিনি। একই দিন মিতু হত্যায় জড়িত থাকার সন্দেহে চট্টগ্রাম নগরী থেকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস চালকসহ আটক করে পুলিশ। রবিবার সকালে মিতু হত্যাকাণ্ডের পর মোটরসাইকেলে করে তিনজন পালিয়ে যাওয়ার পরপরই ওই কালো রঙের মাইক্রোবাস ও আর নিজাম রোডের সড়ক অতিক্রম করে গোলপাহাড় মোড়ের দিকে চলে যেতে দেখা যায় পুলিশের সংগ্রহে থাকা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে। পুলিশের ধারণা, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্তদের ‘ব্যাক-আপ’ হিসেবে মাইক্রোবাসটি ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া ঘটনার পর বিভিন্ন সময়ে পুলিশ কর্মকর্তারাও মাইক্রোবাসের সম্পৃক্ততার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা জানিয়েছিলেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দুর্বৃত্তরা যখন মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করছিল, তখন জিইসি মোড়ের দিকে কিছুটা অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল একটি কালো মাইক্রোবাস। মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যাওয়ার ১০ সেকেন্ডের মাথায় ঘটনাস্থলে আসে মাইক্রোবাসটি। পাঁচ সেকেন্ডের মতো ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে চলা শুরু করে মাইক্রোবাসটি। পরে গোলপাহাড় মোড়ের দিকে চলে যায় ওই মাইক্রোবাস। কালো কাচের এ মাইক্রোর চালকের আসনের পাশের জানালাটা খোলা ছিল। অন্য সব জানালা বন্ধ ছিল। এর আগে রবিবার রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার বাদুড়তলা বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি মোটরসাইকেল উদ্ধারের কথা জানিয়ে সেটি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা বলে দাবি করে পুলিশ।
×