ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১০ মাসে বিনিয়োগ বেড়েছে ২১ শতাংশ

বিদেশী বিনিয়োগের পালে হাওয়া

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১০ জুন ২০১৬

বিদেশী বিনিয়োগের পালে হাওয়া

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে ১৮২ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বাংলাদেশে এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। অর্থমন্ত্রী একে দেশে ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকার সুফল’ বলছেন। আর অর্থনীতির একজন গবেষক মনে করছেন, কয়েকটি বড় অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় দেশে বিনিয়োগের ‘আবহ’ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট-বিওপি) হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ১৮২ কোটি ডলার নিট বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে এসেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি ৫ লাখ ডলার। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ বাংলাদেশে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, মালয়েশিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, জাপান ও ভারত থেকে। আর সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম, টেক্সটাইল এ্যান্ড ওয়্যারিং, ব্যাংকিং, টেলিকমিউনিকেশন, বিদ্যুত, খাদ্য, সিমেন্ট, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আমাদের বিনিয়োগে একটা ধাক্কা এসেছে। এটা অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে যেমন এসেছে, তেমনি বিদেশী বিনিয়োগেও এসেছে। তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে, গত প্রায় দেড় বছরের যে পরিস্থিতি দেশে আছে, যেখানে লোকজনের একটা আস্থার ভিত্তি হয়েছে। আস্থাটা হচ্ছে এই জন্যই যে, এখানকার লোকজন এখন কাজ করে ব্যস্ত আছে। কোন ধরনের স্ট্রাইক, বন্ধ- এগুলোর মধ্যে তাদের আগ্রহ নেই। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কাজ বন্ধ রাখার অবস্থা এখন আর বাংলাদেশে নেই। এ সব কিছুই বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিবেচনায় নিচ্ছেন। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আসে ইকুইটি ক্যাপিটাল, রিইনভেস্টেড আর্নিং এবং ইন্ট্রা-কোম্পানি লোন- এই তিন ভাগে। এ তিন ভাগে আসা মোট অর্থপ্রবাহকে বলা হয় ‘গ্রস ফ্লো’। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যে অর্থ বাংলাদেশে নিয়ে আসছে, তা থেকে খরচ পুনরুদ্ধার (কস্ট রিকভারি) ও মুনাফার ভাগ (প্রফিট শেয়ার) হিসেবে যে টাকা দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে, তাকে বলা হয় ডিজইনভেস্টমেন্ট। গ্রস ফ্লো থেকে ডিজইনভেস্টমেন্ট প্রবাহ বাদ দিয়ে নিট প্রবাহ হিসাব করা হয়। বছরওয়ারি হিসাবে ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের গ্রস ফ্লো ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে সে বছর নিট ফ্লো ছিল ১৫০ কোটি ডলারে কিছু বেশি। ২০১৫ সালে নিট প্রবাহ ২২০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বিদেশী বিনিয়োগের এই পরিমাণ ‘এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ’ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলছেন, এই সময়ে বিনিয়োগের গতি বেড়েছে, যা ‘সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ এ প্রসঙ্গে বিআইডিএস গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, সেতু, মেট্রোরেলসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের এক ধরনের আবহ তৈরি হয়েছে। এতে দেশী বিনিয়োগকারীদের পাশপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছেন। দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে বিদেশী বিনিয়োগের পালে ‘হাওয়া’ লাগছে বলেই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের গ্রস ফ্লো ছিল ২০৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর ডিজইনভেস্টমেন্ট বাদ দিয়ে নিট প্রবাহের পরিমাণ ছিল ১৫২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। ২০১৫ সালে নিট প্রবাহের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের নিট প্রবাহ বেড়েছে ৪৪ শতাংশের বেশি।
×