ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ন্যূনতম কর হার বাড়ানোয় চাপে পড়বে দুর্বল কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১০ জুন ২০১৬

ন্যূনতম কর হার বাড়ানোয় চাপে পড়বে দুর্বল কোম্পানি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ন্যূনতম করহার বাড়ানোর কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ছোট কোম্পানিগুলোর আরও চাপ বাড়বে। যদিও কোম্পানিগুলোর দুর্বল ভিত্তির কারণে গত কিছুদিন ধরেই পুঁজিবাজারে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে দ্বিগুণ হচ্ছে কোম্পানি ও ফার্মের ন্যূনতম করহার আরোপের প্রস্তাব আসায় লভ্যাংশ ঘোষণাসহ নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কারণ নতুন বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে টার্নওভারের ওপর ন্যূনতম করহার বর্তমান দশমিক ৩০ শতাংশের পরিবর্তে দশমিক ৬০ শতাংশ করা হবে। কর্পোরেট করের পরিবর্তে দেয়া এ করের হার বৃদ্ধিতে কর রেয়াত সুবিধা নেয়া, কম মুনাফা বা লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর ব্যয় বাড়বে বলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো মনে করছে। আয়কর আইন অনুসারে, বিভিন্ন কারণে কর রেয়াত ও অব্যাহতি সুবিধা পাওয়া কোম্পানি ও লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলো বছর শেষে তাদের মোট টার্নওভারের ওপর সর্বনিম্ন করহার হিসাব করে রিটার্ন দাখিল করে থাকে। আর মুনাফায় থাকা কোম্পানির ক্ষেত্রে টার্নওভারের ওপর নির্ধারিত ন্যূনতম করহার অথবা কর্পোরেট করের মধ্যে যেটি বেশি হয় তা দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে কর্পোরেট করহার পূর্বের অবস্থায় থাকায় উচ্চ মুনাফায় থাকা কোম্পানির করে কোন পরিবর্তন আসছে না। তবে নানা কারণে রেয়াত সুবিধা পাওয়া, স্বল্প মুনাফায় থাকা কিংবা লোকসানি কোম্পানিগুলোর ওপর করের বোঝা বাড়বে। আর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে লোকসানি কোম্পানিগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির কারণে কর্পোরেট করে বিশেষ সুবিধা পেলেও সর্বনিম্ন করের ক্ষেত্রে বাজারে থাকার জন্য আলাদা কোন সুবিধা নেই দুর্বল কোম্পানির। লোকসানের পর নতুন করে কর বৃদ্ধির ফলে অধিকাংশ কোম্পানিই আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। উদাহরণস্বরূপ, তালিকাভুক্ত কোম্পানি সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সর্বশেষ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, লোকসানে থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সর্বনিম্ন কর পরিশোধ করেছে তারা। ২০১৫ হিসাব বছরে ১৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা লোকসানে থাকা সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ এনবিআরকে কর বাবদ দেয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, ১৪ কোটি টাকা টার্নওভারের বিপরীতে সর্বনিম্ন করহার ছিল দশমিক ৩০ শতাংশ। চলতি হিসাব বছরে কোম্পানিটির টার্নওভার গত বছরের সমান হলেও দশমিক ৬০ শতাংশ হারে কর বাবদ তাদের দিতে হবে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে চলতি বছর কোম্পানির লোকসান ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর এভাবে লোকসান বাড়লে এর ভার পড়বে সুহৃদের মতো লোকসানি কিংবা কম মুনাফার কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের ওপর। এ অবস্থা স্থায়ী হলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়তে পারে কিছু কোম্পানি। একই সমস্যায় ভুগবে এমন কোম্পানিগুলো হলো : দেশবন্ধু পলিমার, কে এ্যান্ড কিউ, বিডি থাই, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ফু-ওয়াং ফুড, বিচ হ্যাচারী, ফাইন ফুড, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, আরডি ফুড, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, বিকন ফার্মা, সালভো কেমিক্যালসহ আরও অন্তত ২০টি কোম্পানি। অর্থবিল ২০১৬ অনুসারে, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর সেকশন ৮২সির ৪(এ) সংশোধন করে ন্যূনতম করহার পরিবর্তন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংশোধনীতে ন্যূনতম করহার অনুসারে কোন কোম্পানির ন্যূনতম করের ক্ষেত্রে তিনটি প্রস্তাব করেছে এনবিআর।
×