ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল

সরকার এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবে না

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ৯ জুন ২০১৬

সরকার এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকার প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রস্তাবিত বাজেটকে উচ্চাভিলাষী ও গতানুগতিক অ্যাখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের পক্ষে এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ এ সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। তাই তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই। সংসদে যারা বিরোধী দল রয়েছে তারাও গৃহপালিত বিরোধী দল। কোন ব্যাপারে এ বিরোধী দল বিরোধিতা করতে পারেন না। বাজেটে রফতানিমুখী পোশাক শিল্পে নতুন করে ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে উৎস কর আরোপ করায় অনেক ছোট ও মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে রফতানিমুখী পোশাক খাত প্রতিযোগিতার শক্তি হারাবে। এতে কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে এবং দারিদ্র্যকে প্রকট করে তুলবে। তিনি বলেন, পোশাক শিল্প দেশের প্রধান কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত। তাই পুরো বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনার দাবি রাখে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ফোকলা হয়ে পড়েছে। এই ব্যাংকগুলো পুঁজি ঘাটতিতে পড়ে নিদারুণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অতীতেও একই কারণে বড় অঙ্কের বরাদ্দ করদাতাদেরই অর্থে বহন করা হবে। এই বরাদ্দ সৎ করদাতাদেরে ওপর জরিমানা আরোপ করে লুটেরাদের প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবমতে প্রতিবছর দেশে বেকার হচ্ছে প্রায় ২৪ লাখ মানুষ। সে হিসাবে গত ২ বছরে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ লাখ। অপরদিকে এই সময়ে মাত্র ৬ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হয়েছে। এজন্য কাউকে শাস্তি পেতে হয়নি। পুঁজিবাজারে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকে আত্মহত্যা করেছে। পুঁজিবাজারের কাঠামোগত দুর্বলতার জন্যই এই লুণ্ঠন সম্ভব হয়েছে। অথচ দুর্বল এ বাজারকে শক্তিশালী করার কোন উদ্যোগ নেয়নি সরকার। ঘোষিত বাজেটকে গতানুগতিক আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদশের অর্থনীতির আকার বড় হতে থাকায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার অস্বাভাবিক নয়। তবে তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বাজেটের রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে মানুষকে অতিরিক্ত করের বোঝা বহন করতে হবে। বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফখরুল বলেন, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু কাক্সিক্ষত মাত্রায় রাজস্ব আহরণ সম্ভব না হওয়ায় ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের জন্য সংশোধিত বাজেটের পরিমাণ ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। অর্থাৎ ৩০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা কমানো হয়। চূড়ান্ত হিসাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। ফখরুল বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বের্ডের সক্ষমতার ওপর আস্থা রেখে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হবার আশা পোষণ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবে তাকে আশাভঙ্গের কষ্ট পোহাতে হয়েছে। তাই আমাদের শঙ্কা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সম্ভব হবে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে সেক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী কি করবেন। পূর্ববর্তী অর্থবছরগুলোর মতো তাঁকে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রায় নিম্নমুখী সংশোধন করতে হবে। অর্থাৎ কাটছাঁট করতে হবে। তাহলে কোথায় তিনি কাটছাঁট করবেন? শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার মত কল্যাণমুখী খাত থেকে অথবা মানবকল্যাণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, এমন কোন খাত থেকে। মির্জা ফখরুল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের আকার দেশের অতীত বাজেটগুলোর ধারাবাহিকতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই বাজেটের মোট ব্যয় জিডিপির ১৭ শতাংশের মতো। এর আগের বাজেটগুলো জিডিপির ১৫ থেকে ১৬ শতাংশের মধ্যে ছিল। এইদিক থেকে বলা যায় বাজেটটি গতানুগতিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। দূরবর্তী অতীতের বাজেটের আকারের সঙ্গে তুলনা করলে প্রস্তাবিত বাজেটটি উচ্চাকাক্সক্ষী। অর্থমন্ত্রী নিজেও বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন বাজেট উচ্চাকাক্সক্ষী। ‘বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়’ সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, অর্থমন্ত্রী তো রাজনীতিবিদ নন, তিনি আমলা। আর আমলা থেকে পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রী হয়েছেন। তাই উনার মতো একজন লোকের কাছ থেকে বিএনপি এ ধরনের কথা আশা করেনি। বিএনপি আশা করে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন এবং রাজনৈতিক বক্তব্য দেবেন। ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু এবং সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ গঠিত হয় তেমন একটি সংসদের পক্ষেই সত্যিকারের দেশপ্রেম ও জনকল্যাণমুখী বাজেট অনুমোদন করা সম্ভব। বর্তমান সংসদের সে রকম চরিত্র নেই। আমরা আশা করব দেশে সত্যিকার জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ গঠিত হবে। এর জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে প্রতিনিয়ত গুপ্তহত্যা হচ্ছে। এসব গুপ্তহত্যা নিয়ন্ত্রণ ও এসব হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচন করতে সরকার ব্যর্থ। বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ মরছে। মায়ের পেটের শিশুরাও মরছে। কিন্তু, এসব গুপ্তহত্যা নিয়ন্ত্রণ ও এগুলোর রহস্য উন্মোচনে করতে পারছে না সরকার। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের না করে বিএনপি ও জামায়াতের ওপর সকল দোষ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে আরও উৎসাহী হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বা কল্যাণ নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা নেই। এ সরকার যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। দেশে ১৮ দিনে ৪৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার দেশে বড় ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তিনি গুপ্তহত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে গতবছর মহাজোট সরকার যেভাবে ব্যর্থ হয়েছে ঠিক তেমনি এবারও ব্যর্থ হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, দলের সিনিয়র নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু প্রমুখ।
×