ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিএসবিকে সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধানের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ৯ জুন ২০১৬

জিএসবিকে সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধানের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমুদ্রে সম্পদ অনুসন্ধানে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরকে (জিএসবি) নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সম্পদ অনুসন্ধানে জরিপ করার জন্য একটি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নিতে বলা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বিশাল সমুদ্রসীমার সম্পদের বিষয়ে অনেক কিছুই অজানা। অজানা এই সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানে কাজ করবে জিএসবি। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের তরফ থেকে একটি উপস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানো হয় সমুদ্রে সম্পদ অনুসন্ধানে একটি প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে জিএসবিকে। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সমুদ্রে সম্পদ অনুসন্ধানে জিএসবিকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। জিএসবি’র সংগৃহিত তথ্য ও আবিষ্কার জাতীয় অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। তিনি বলেন, বাজেট এখন কোন সমস্যা নয়, সমস্যা দক্ষ জনশক্তির। জিএসবির জনবল নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অনেক সাফল্য দেখিয়েছে। সূত্র জানায়, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলা বিজয়ের পরে বঙ্গোপসাগর এলাকার দুইশ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপানে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্র অঞ্চলের আয়তন এখন এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র মামলায় বিজয়ের পরে বাংলাদেশের আওতায় পড়া সমুদ্র অঞ্চলের সম্পদের ক্ষেত্র ও অর্থনৈতিক মূল্যও নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া খুব সহজভাবেই এই সম্পদের সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে সেটাও নিশ্চিত করতে চায় সরকার। বঙ্গোপসাগর দেশের সম্পদের বিশাল উৎস। এই সমুদ্র সীমানার মধ্যে শুধু বিশাল মৎস্য ভা-ার নয়, রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ভা-ারও। বিশেষ গঠন-প্রকৃতির কারণেই তেল-গ্যাসসহ নানা খনিজ সম্পদ সঞ্চিত রয়েছে এই সাগরের তলদেশে। সারাবিশ্বে এখন সমুদ্র সম্পদ বিশেষ আকর্ষণের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর সব দেশ তাদের সমুদ্রসীমায় সম্পদের জরিপ, গবেষণা, অনুসন্ধানে ও সম্পদ আহরণে ব্যাপক তৎপরতা গ্রহণ করে চলেছে। সে কারণে বাংলাদেশও তার সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শেষ দিগন্ত হিসেবে টেকসই উন্নয়ন কর্মসূূচীর মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় রাষ্ট্রের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর সহযোগিতা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ, মৎস্য রফতানি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ সর্বোপরি জীববিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা মামলা জয়ের পরে এই সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে। সূত্র জানায়, সমুদ্র অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ আহরণ ও তেল-গ্যাস উত্তোলন ছাড়াও নানামুখী উদ্যোগ নিতে চায় সরকার। কেননা বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত তার সমুদ্র এলাকায় মৎস্য সম্পদ আহরণ ও তেল-গ্যাস উত্তোলনকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছে। সমুদ্রসম্পদ ব্যবহারের লক্ষ্যে এই দুটি বিষয়ে বাইরে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে এখন দুই দেশের সঙ্গে সমুদ্র মামলা বিজয়ের পরে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চায় সরকার। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই নদী কেন্দ্রিক। সেজন্যই বলা হয়ে থাকে নদী মাতৃক দেশ, বাংলাদেশ। এদেশের মানুষের মধ্যে বরাবরই নদী নিয়েই চিন্তা-ভাবনা সীমাবদ্ধ ছিল। আর সমুদ্র নিয়ে কখনই ভাবেনি বাংলাদেশের মানুষ। সে কারণে অতীতের সরকারগুলোও সমুদ্র নিয়ে চিন্তাভাবনা করেনি। তবে দুই বছরের ব্যবধানে দুটি সমুদ্র মামলা বিজয়ের পরে বাংলাদেশ নতুন করে এখন সমুদ্র সম্পদ নিয়ে পরিকল্পনা করছে। আর তারই অংশ হিসেবে সরকার এখন সমুদ্র সম্পদ নিয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এদিকে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সুফিই অ্যবার্ট বুধবার সচিবালয়ে তার অফিস কক্ষে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। ওই সময় রাষ্ট্রদূত সামুদ্রিক পরিবেশ ও এলাকা নিয়ে বাংলাদেশের ধারণা আরও উন্নত করতে ফ্রান্সের বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা করার ইচ্ছার কথা জানান। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামুদ্রিক বিদ্যা বিভাগের কার্যক্রম শুরু, বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ ছাত্রছাত্রীদের প্রশিক্ষণ ও বৃত্তির বিষয়ে ফ্রান্সের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। সমুদ্রে গবেষণার জন্য বাংলাদেশ যদি জাহাজ পেতে আগ্রহী হয়, তবে ফ্রান্স ইসিএ অর্থায়নসহ সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
×