ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামপুরে ৫ হাজার বস্ত্র ব্যবসায়ীর দম ফেলার সময় নেই

প্রকাশিত: ০৮:২২, ৯ জুন ২০১৬

ইসলামপুরে ৫ হাজার বস্ত্র ব্যবসায়ীর দম ফেলার সময় নেই

রহিম শেখ ॥ খুচরা ব্যবসায়ীরা ঈদের আগেই ঘরে তুলতে চান নতুন কাপড়। তাই রাজধানীর ইসলামপুরে রমজানের শুরুতেই ব্যবসায়ীদের ভিড় এখন তিন গুণ বেড়েছে। কাপড়ের গজ মাপা, খাতায় পরিমাণ তোলা, টাকা গোনা, মাল বোঝাই করে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, লঞ্চ কিংবা ঠেলাগাড়ি করে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এখন হরহামেশাই সবার নজর কাড়ছে। নতুন পোশাক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার কাজে মহাব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই। বেচাকেনার চাপে দম ফেলার সময় নেই এখানকার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বস্ত্র ব্যবসায়ীর। কারণ দেশের থান কাপড়ের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশই সরবরাহ করা হয় ইসলামপুর থেকে। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ভাল থাকলেও যানজট আর বিদেশী পোশাকের বাজার দখল নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, ইসলামপুরে তিন হাজার ছোট ও মাঝারি মানের দোকান রয়েছে। পাটুয়াটুলী, ইসলামপুর, নবাব বাড়ি এলাকাজুড়ে দেশের বস্ত্রের সবচেয়ে বড় এই পাইকারি মার্কেট। এর বাইরেও রয়েছে রোডের সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট সাবেক চায়না বর্তমান আহসান মঞ্জিল সুপার মার্কেট। রয়েছে ইস্ট বেঙ্গল ও রয়েল প্লাজার মতো বড় পাইকারি মার্কেট। এছাড়া ছোট বড় মিলিয়ে আরও শতাধিক মার্কেট রয়েছে ইসলামপুর রোডে। বেশিরভাগ দেশী বস্ত্র কারখানার উৎপাদিত কাপড়ের শো-রুম আছে এখানে। তাছাড়া দেশে তৈরি কাপড়ের পাশাপাশি থাই, চায়নিজ, পাকিস্তানী, ভারতীয়, জাপানী প্রভৃতি কাপড়ের বস্ত্রের সমাহার রয়েছে এসব মার্কেটে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার ঈদ সামনে রেখে শব-ই-বরাতের পর থেকে মূলত ইসলামপুরে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এই বিক্রি চলবে আগামী ১০ থেকে ১২ রমজান পর্যন্ত। ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর ছাত্তার ঢালী জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামপুরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বস্ত্র ব্যবসায়ী রয়েছেন। আগে এরা ভারত ও চীন থেকে আমদানিকৃত পোশাক বিক্রি করলেও এখন তারা দেশী তৈরি শাড়ি, থ্রিপিস, ওড়না, শার্টিং-স্যুটিং ও বোরকা বিক্রি করছেন। পাইকাররাও এসব দেশী পোশাকের প্রতি ঝুঁকছেন। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ভাল আছে। তাই এবার ভাল বেচাকেনার আশা প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু যানজট আর বিদেশী পোশাকের বাজার দখল নিয়ে শঙ্কার কথা প্রকাশ করলেন তিনি। ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা জানান, নরসিংদীর মাধবদী ও বাবুরহাট, ঢাকার সাভার, কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মিল থেকে শাড়ি ও লুঙ্গি তৈরি করিয়ে এনেছেন তারা। রাজধানীসহ রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের আগমনে মুখরিত ইসলামপুরের মার্কেটগুলো। ইসলামপুর রোডের প্যারাডাইস ভবনের নিচ তলায় কথা হয় হবিগঞ্জের ব্যবসায়ী শিমুল তরফদার ও রইস উল্লাহর সঙ্গে। দোকানের জন্য রোজার আগেই দু’বার ইসলাপুরের এসেছিলেন এই দুই ব্যবসায়ী। তাঁরা জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পাইকারিতে দাম একটু বেশি। ফলে ঈদে খুচরা বাজারে পোশাকের দাম একটু বাড়বে বলে জানান তারা। বুধবার সিলেটের আল হামরা শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ ফিরোজ দোকানের কর্মচারীদের নিয়ে কাপড় কিনতে এসেছিলেন ইসলামপুরে। তিনি জানালেন, মূলত দেশী পোশাকই তিনি এখান থেকে কিনে থাকেন। ইন্ডিয়ান পোশাকের জন্য আলাদা সাপ্লাইয়ার রয়েছে। এবার বাচ্চাদের ও নারীদের পোশাকে বৈচিত্র্য এসেছে বেশ। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, একসময় বিদেশ থেকে আমদানি করা কাপড়ের পাইকারি বাজার ছিল ইসলামপুরে। এখন আর সে রকম নেই, চিত্র পাল্টে গেছে। ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসার বড় অংশই এখন দেশী কাপড়ের দখলে। এবার ব্যবসা ভাল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসলামপুরের ঐতিহ্যবাহী দোকানিরা। পাকিজা ফেব্রিক্স কালেকশনের সহকারি ম্যানেজার দীপক চন্দ্র ভৌমিক জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামপুরে তাদের মোট ছয়টি শোরুম রয়েছে। মূলত শব-ই-বরাতের পর থেকে দশ রমজান পর্যন্ত তাদের বেচাবিক্রি হয়। এ পর্যন্ত আশানরূপ ভাল বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান। ইতোমধ্যে বেশিরভাগই বেচা শেষ। তারা মূলত থ্রিপিস, লুঙ্গি, বিছানার চাদর, শাড়ি ইত্যাদি বিক্রি করে থাকেন। থ্রিপিস বিক্রি করছেন ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। ফেব্রিক্স ফ্যাশনের আজিজুর রহমান জানালেন, ৪০-৮০ টাকা দামে লেডিস আইটেমের গজ কাপড় বিক্রি করছেন তারা। মূলত নিম্নবিত্তদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তারা কাপড় সরবরাহ করেন। এখান থেকে নিয়ে কাপড় যান টেইলার্স ব্যবসায়ীরা। তারা সেলাই করে আবার দোকানিদের কাছে বিক্রি করেন। এজন্য তাদের ঈদ ব্যবসা শুরু হয় শব-ই-বরাতের আগেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভাল থাকায় এবার ব্যবসা ভাল বলে জানান তিনি। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ভাল থাকায় ব্যবসা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেন অনেক ব্যবসায়ী। তবে রাস্তা খারাপ ও যানজটের কারণে খোভ প্রকাশ করলেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে বিদেশী পোশাকের বাজার দখল নিয়ে চিন্তিত এখারকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী। ইসলাপমপুরের পাশাপাশি উর্দু রোডেও চলছে জমজমাট বেচাকেনা। বেচাকেনায় ব্যতিব্যস্ত ব্যবসায়ীদের দম ফেলার যেন ফুরসত নেই। ইসলামপুর ও উর্দু রোডের দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদ উপলক্ষে দেশী মিনি থ্রিপিস ৪২০-৮০০ টাকা, থ্রিপিস ৩৫০-৩৫০০ টাকা, লুঙ্গি ২০০ থেকে ৭০০ টাকা, পাঞ্জাবি ছোটদের ২৫০-২৮০০ টাকা, বড়দের পাঞ্জাবি ৪০০-৮০০০ টাকা ও থান কাপড়ের প্রিন্টের থ্রিপিস ৪৫০-৯৫০ টাকা।
×