ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করল ভারত

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ৯ জুন ২০১৬

আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করল ভারত

মশিউর রহমান খান ॥ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দীর্ঘ ৪ বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করেছে ভারত সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গত বছরের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া আশ্বাসের কারণেই সম্প্রতি এ অর্থায়ন নিশ্চিত করেছে ভারত সরকার। মোট ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটির মধ্যে বাংলাদেশ অংশের ১০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ভারত সরকার অনুদান হিসেবে এ অর্থ প্রদানে সম্মতি প্রদান করেছে। ১০ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা অনুদান দেবে ভারত। আর বাকি অর্থ দেবে বাংলাদেশ সরকার। ভারতের অর্থ প্রদান নিশ্চিত করার পর সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (ইরকন) আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণের জন্য ২০১১ সালে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশ অংশে ১০ কিলোমিটার মূল রেলপথ ছাড়াও ৪ দশমিক ২৫ কিলোমিটার লুপ লাইন রাখা হয়। প্রকল্পটির আওতায় মোট ২৩টি সেতু নির্মাণের কথা বলা হয়। এর মধ্যে তিনটি মেজর ও ২০টি মাইনর সেতু নির্মাণ করতে হবে। প্রকল্প এলাকার মধ্যে তিনটি স্টেশনে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিগনালিং ব্যবস্থাও স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ৫৬ দশমিক ৫১ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। সম্ভাব্যতা যাচাই অনুযায়ী আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ পুরো অংশ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮০ কোটি রুপী। এর মধ্যে ভারতের পাঁচ কিলোমিটার অংশের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮০ কোটি রুপী। আর বাংলাদেশ অংশের ১০ কিলোমিটারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি রুপী বা ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশের জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও অন্যান্য রাজস্ব খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। আর ১০ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হবে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, এ অর্থ ভারত সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করছে ভারত। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন এ লাইনটি নির্মাণ করবে। রেলপথ নির্মাণের ব্যয় বহন করবে ভারত সরকার। তবে বাংলাদেশ অংশের নির্মাণ তদারক করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ অংশের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ২০০ কোটি রুপী। আর পুরো অংশের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৮৬ কোটি রুপী। তবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। এরপরই অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় আটকে যায় আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণ কাজ। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ অংশের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়। তখন এ নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও শুধু ভারতের অনুদান নিশ্চিত না হওয়ায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উত্থাপন করা হয়নি। পিইসি বৈঠকে বলা হয়, প্রকল্পটি অর্থায়নে ভারতের সঙ্গে ২০১৩ সালে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হলেও তাতে অনুদানের বিষয়টি কারা করবে বা কোথা থেকে আসবে তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া ভারত সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কত টাকা দেবে, তাও নিশ্চিত নয়। অতএব, ভারতের অনুদানের বিষয়টি আগে নিশ্চিত হওয়া দরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ভারতের হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারত সরকারকে একটি চিঠি পাঠায়। কিন্তু এর কোন জবাব দেয়নি ভারত সরকার। সম্প্রতি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এক্ষেত্রে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ অংশের জন্য ৪০০ কোটি রুপী অনুদানের ঘোষণা দেয়া হয়। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল সংযোগ স্থাপনকারী ষষ্ঠ রুট হচ্ছে আখাউড়া-আগরতলা। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বেনাপোল-পেট্রাপোল, দর্শনা-গেদে ও রোহানপুর-সিঙ্গাবাদ রুট দুই দেশের মধ্যে চালু আছে। বিরল-রাধিকাপুর সংযোগ স্থাপন কাজ চলছে। এছাড়া শাহবাজপুর-মহিষাশন রেল সংযোগ স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। শীঘ্ররই এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া বাইরে চিলাহাটি-হলিদাবাড়ি এবং ফেনী-বেলুনিয়া রেল রুটও চালুর পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছর জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অর্থায়নের আম্বাস দেন। তবে তখন ভারতের রেল বাজেটে প্রকল্পটির জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ ছিল না। পরে দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রেক্ষিতে ভারত সরকার এ অর্থ প্রদানে সম্মত হয়। প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ভারতের পাঁচ কিলোমিটার অংশটি ভূমিতে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু পরে প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ উড়ালপথে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। কারণ হিসেবে জানা গেছে, জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও অন্যান্য জটিলতার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
×