ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইইউ পার্লামেন্টে আলোচনা

জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগে বিএনপিকে ফের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৯ জুন ২০১৬

জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগে বিএনপিকে ফের আহ্বান

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য আবারও আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। সংস্থাটির সদস্যরা বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া সংস্থাটির একজন সদস্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে বাংলাদেশের প্রতি চাপ সৃষ্টির জন্য বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপের প্রস্তাব করলে তা নাকচ করে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় মধ্যরাত ১২টায় ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত বিতর্কে অংশ নেয়া সদস্যরা এসব আলোচনা করেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ৮ জন সদস্য আলোচনায় অংশ নেন। তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান, শ্রম, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। সদস্যরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে বসা, জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের উত্থানে ঝুঁকির বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একজন প্রতিনিধি বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানান। তারা বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অনেক আগেই বিএনপিতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল, তবে বিএনপি সেটা আমলে নেয়নি। তারা পুনরায় বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানান। পার্লামেন্টের একজন প্রতিনিধি রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপের প্রস্তাব দিলে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্ট কোয়েন্ডার্স সে প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, অবরোধ বিষয়টি তিনি পছন্দ করেন না। বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পর্ক রয়েছে। সেগুলোকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিবাচক অনেক দিক যেমন আছে ঠিক তেমনি আছে নেতিবাচক দিক। তবে বাংলাদেশের প্রগতিশীল, বিরোধী ও ভিন্নমতাবলম্বী নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের জন্য সুযোগ কমছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যাকা-গুলো সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই ডাচ রাজনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে একটি নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐকমত্য দরকার, যাতে করে দেশটিতে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংরক্ষিত হবে। কোয়েন্ডার্স বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের হয়রানি এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন। সহনশীলতার চর্চা ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য নিয়ে বিতর্কের পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। কোয়েন্ডার্স বলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকা-ের তদন্ত করতে হবে। যারা এসব ভয়াবহ হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, ইইউ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত দেখতে চায়। বাংলাদেশের সব নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইইউ। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপের মাধ্যমে তারা তাদের পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশের সরকার এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সত্যিকারের সংলাপে অংশ নিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানান। ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে ধর্ষিত হওয়া সোহাগী জাহান তনুর বিষয়টিও উত্থাপন করেন। তনু হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে দাবি জানান তিনি। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যরা বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকার সমালোচনা করেন। তাঁরা বাংলাদেশের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরও সরব হওয়ার আহ্বান জানান। পার্লামেন্ট সদস্যরা উগ্রবাদের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে উগ্রবাদ বাড়লে পুরো অঞ্চলে এর প্রভাব পড়বে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ক্রিশ্চিয়ান ড্যান প্রেডা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে এখন একের পর এক টার্গেট কিলিং চলছে। এসব হত্যায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে বিতর্কে অংশ নেন ক্রিশ্চিয়ান ড্যান প্রেডা, নিনা গিল, আমজাদ বশির, জিন লিমবার্ট প্রমুখ। মঙ্গলবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এই বিতর্ক চলে। উল্লেখ্য, দুই বছর আগেও ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিএনপিকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছিল। এছাড়া ঢাকায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই প্রস্তাব আমলে নেয়নি বিএনপি। মঙ্গলবার মধ্যরাতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কে এই প্রসঙ্গটি আবারও উঠে এসেছে।
×